জেসমিন আবেদীনের কবিতাগুচ্ছ
জেসমিন আবেদীনের কবিতাগুচ্ছ
শান্ত করো মহাদেব আমায়

কিছু কবিতা তুলে রেখেছি

তোমাকে দেখাতে চাইনা বলে

দেখতে রেখেছো কি বাকি?

কেবল এই প্রাণ পাখি।

তোমায় কেন্দ্র করে ঘুরে

অক্ষরেখার নিয়ম ভাঙ্গে,

প্রদক্ষিন করি তোমায়

হাজার পাকে আবদ্ধ করে,

যদি এক প্রহরের জন্যে মিলে জীবনে।

যে, তোমার একশ আটখানা পদ্ম!

সে যে কতোবার তোমাকেই

অঞ্জলি করেছি তোমার দেয়া

সব রক্ত জবার মালার বিনিময়ে।

তা এক নিষিদ্ধ প্রহরে যে আমার চাই!

এভাবে কি প্রেম হয়গো প্রিয়?

কেবল কাঁদা আর জলে দুজনে

মাখামাখি আর একাকার রুদ্ধদ্বার।

নিঃশ্বাসের শব্দে যেনো তান্ডব খেলে যায়,

এলোকেশি তোমার দূর্গা এখন চায়

স্বহস্তে শান্ত করো মহাদেব আমায়...!!!

তারা কি আপনাদের চিনে

তারা কি আপনাদের চিনে

চুরি আর ঘুষের টাকায় যারা হজ্জ করে

ত্রান সামগ্রী বিলাচ্ছেন কিনে?

তারা কি চিনে ফেলেছে আপনাদের

সন্ধ্যা হলেই যাদের বাড়িতে

আসর বসে নারী আর মদের?

তারা কি এতো কিছু বুঝে?

দিন রাত কে মারছে কাকে

বলে দিবে জনসম্মুখে খুঁজে খুঁজে?

তারা কি জানে আপনাদের রাজনীতি?

দালালী আর চাটুকার সেজে

প্রতিদিন করেছেন কতো দূর্নীতি?

তারা কি বুঝে ফেলেছে কিভাবে হায়

পরের সন্তানকে সন্ত্রাস বানিয়ে

সুশীলেরা নিজের সন্তানকে বিদেশ পাঠায়?

তারা কি জানে মানুষ কেমন করে

নেতা, দল আর সম্পর্ক বদলায়

প্রয়োজন শেষ হলে পরে?

তারা কি সাক্ষি দিবে কারা করে ক্ষুন?

ধনীরা হয় কি করে ধনী আর

গরীবের পান্তায় কেনো নেই নুন?

তাদের মতো হয়ে যাবেন ভয় হচ্ছে তা?

মানুষের ভিতরেও কুকুরের নিবাস

যদি ভুলে জেগে উঠে সততা?

তারা কি বলে দিবে আপনাদের অওকাদ?

হারাম, ভেজাল, জালিয়াতির টাকায়

দিচ্ছেন লোক দেখানো দক্ষিনা-যাকাত?

তারা কি জানে আপনারা বর্নবাদী বলে?

রাস্তার কুকুরদের হত্যায় মেতেছেন

অথচ বাড়িতে রাখেন বিছানায় আর কোলে?

ভোটার নয় বলে কি তাদের হত্যা করা যায়?

নেতা নেই,মাতা-পিতা নেই বড় অসহায়

দিতে হবেনা কোর্টে জবাব,নেই কোনো দায়...!!!


 ক্ষত

 

তোমার হৃদয়ে আমার দেয়া

ক্ষত নাকি পরিনত এক পুকুর,

সেখানে তবে কাটবো আমি

সাঁতার রাত আর দুপুর।

তোমার দেয়া ক্ষত যে হয়েছে

বিশাল রেখেছো কি তার খবর,

সেখানে প্রতিনিয়ত দিচ্ছি আমি

তোমার স্মৃতি গুলোকে কবর।


 প্রেমের পাপ

প্রতিবার আমার প্রেমিক হৃদয়

তোমার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে।

আমি স্বার্থপর বলেছি,

চুপ থাকো, তাকে খেলতে দাও।

কারন, সারাদিন খেলা শেষে

প্রতিটি শিশুই বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায়।

বন্ধ করে রাখতে চেয়েছে দরজা

যতোবার তুমি এসেছো তোমার

ছেলেমানুষী অভিমান আর আবদার নিয়ে।

আমি অকৃতজ্ঞ বলেছি,

শান্ত হও, একদিন বুঝবে,

আর অনির্দিষ্ট কালের জন্যে মেতেছি

তোমার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে।

বিক্ষত হিয়াকে মুড়েছি হাসির মোড়কে

তাকে করেছি বিষ প্রয়োগ,

যাতে মুদে রাখি তার আখি যুগল।

যতোবার তুমি নেমেছো জলে,

সখীদের সাথে খেলার ছলে,

নিজের অশ্রুবানে ডুবেছি তবুও

হাসি মুখে তোমায় করিয়েছি সযতেœ স্নান।

বিদ্রোহী আত্নাকে বিতারিত করেছি,

যতোবার তুমি করেছো আক্রমণ,

কখনোবা তান্ডব করেছো রাবনের বেসে,

আবার কখনো উড়িয়ে নিয়েছো

ঝড়ে প্লাবনে অচেনা স্বপ্নের দেশে।

পুতুল ভেবে করেছো মালা বদল,

জমি ভেবে করেছো চাষ

ধ্বংস করেছো সোনালী ফসল।

প্রতিবার আমার প্রেমিক হৃদয়

প্রতিজ্ঞা করেছে করবে স্বদেশ ত্যাগ।

তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছি,

আর একটু অপেক্ষা করো,

কষ্টেরা শীঘ্রই নিবে অবসর।

স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি হয়েছে

আমাদের অসংখ্য অঘোষিত বাসর।

ক্লান্ত এই মন অভিযোগ করেছে,

স্বান্ত্বনা দিয়ে বলেছি,

তুমিও কি তাদের মতোই

জ্বলছো আহত হিংসুক তাপে?

অপদেবতাদের লেলিহান ঈর্ষা আর

সকল মানব জাতির অভিশাপে,

মুখ উঁচিয়ে সুখেই আছি ,

কাউকে খায়না প্রেমের পাপে।


মুসাফির

তুমি কোনো নতুন গন্তব্যের খোঁজে

বিলিন করে রাখবে উদাসী চোখ,

আমি সেই গন্তব্যের হবো পথ,

সেই পথে হবো তোমার সহযাত্রী।

বিস্ফারিত নেত্রে প্রত্যক্ষ করবো

তোমার সফল সৌখীন যাত্রা।

যাত্রা বিরতিতে আমি হবো

তোমার আপ্যায়নের সহযাত্রী,

অথবা মানচিত্রের ন্যায় নিজেই

পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো কাঁধে বয়ে

তোমার একলা স্থবির ক্লান্ত শবদেহ।

ফরাসী আতরে সুরভীত করবো

তোমার কৃতকর্মের রটানো গন্ধকে,

সোনালী চন্দন হয়ে লেপে দিবো

নিজেকে তোমার অতীতের কালিমায়।

আমি তোমার মহৎ গুণগুলো

পর্দা হয়ে আড়াল করে রাখবো,

আগলে রাখবো সেই যাত্রায়

রোদ,বৃষ্টি বা ঝড়ে তোমায় সযতনে

আমার সোনালী ডানার পালকের নিচে।

তবুও সেই পথটুকু নয়

গন্তব্যে পৌঁছে যখন একদিন

নিজেকে একলা ভাবার অবকাশ হবে,

তখন ফরতি পথে আমিই হবো

তোমার একলা সাঁঝের বেলার

রাতের জোছনা আর সহযাত্রী।

তবুও আজীবন সমাজের চোখে

একে অপরের জন্য বন্ধুসুলভ,

অথচ বন্ধনহীন সম্পর্কে আবদ্ধ মুসাফির।


 

কবিতা আমায় অনুবাদ করো

কবিতা আমায় অনুবাদ করো,

বুঝতে যেওনা অনুভব করো,

কখনো আমি নীল বিভাবরী,

মেঘালয় ছুঁয়ে আমাতে ভাসো,

কখনোবা আমি উত্তাল বারিধি,

সংকোচ নিয়েও ডুবে যেতে আসো।

হয়ে যাই ক্ষণে আগ্নেয়গিরি,

স্বেচ্ছায় তুমি অনলে হাটো,

নিজের হাতে উপন্যাসকে

লিখে রাতে তা নিজ হাতে কাটো।

কবিতা আমায় কর্পুর জেনেও,

হাতে নিয়ে চেখে ভাবো মিষ্টি,

ভিজে যাও জলে ভেসে যাও

তুমি জেনেও আমি আকষ্মিক বৃষ্টি।

কবিতা আমায় অনুবাদ করো

নিতে যেওনা আমার গন্ধ,

বিরহে আমার ব্যাকুল হবে যে

উন্মাদনার আঘাতে হবে অন্ধ।

কবিতা আমাকে পড়ে দেখো,

বুঝতে চেষ্টা করোনা তবে,

এভাবেই দূরে রহস্যের মাঝে

কৌতুহলে প্রেম বেঁচে রবে...!!!



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান