সাহিত্যে নোবেল জিতলেন আমেরিকান কবি লুইস গ্লাক
সাহিত্যে নোবেল জিতলেন আমেরিকান কবি লুইস গ্লাক

২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন আমেরিকান কবি লুইস গ্লাক। ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটায় এই পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্লাককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তার নিরাভরণ সৌন্দর্যের ভ্রান্তিহীন কাব্যকণ্ঠের কারণে, যা ব্যক্তিসত্তাকে সার্বজনীন করে তোলে। 

১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী এই কবি লঙ আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন। সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেন। টেকনিকের অভিনবত্ব, সেন্সিটিভিটি তথা স্পর্শকাতরতা তার কবিতার অস্থিমজ্জায়। কবিতার শিল্পপ্রকৌশলগত ভিন্নতার কারণে তিনি বহুল প্রশংসিত। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর প্রথম আমেরিকান নারী হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করলেন গ্লাক। 

গ্লাকের কাজের মধ্যে তার ১২ টি কবিতার বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে সাহিত্যের ওপর বেশকিছু প্রবন্ধ। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার সব কাজেই স্পষ্টবাদিতার প্রয়াস লক্ষণীয়। শৈশব ও পারিবারিক জীবন এবং বাবা-মা আর ভাইবোনের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক সবসময় তার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। তিনি মিথ ও শাস্ত্রীয় মোটিফ থেকে প্রেরণা নিয়ে বিশ্বজনীন হওয়ার চেষ্টা করেছেন।

২০১৯ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হান্দক। তার বিরুদ্ধে সার্বিয়ার নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচের বলকান যুদ্ধ সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালে নোবেল কমিটির এক সদস্যের স্বামী ও জনপ্রিয় আলোকচিত্রী জ্যঁ ক্লদ আর্নোর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই ঘটনায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত। যৌন কেলেঙ্কারির পাশাপাশি বিজয়ীর নাম ফাঁস করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিতর্কের মুখে স্থগিত করা হয় ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রদান।

কেলেঙ্কারির কারণে ২০১৯ সাল থেকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে শুরু করে রয়েল সুইডিশ একাডেমি। পাল্টে যায় নোবেল কমিটির কাঠামোও। এ বছর ২০১৯ সালের বিজয়ীর পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালের স্থগিতকৃত বিজয়ীয় নামও। ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান পোলিশ লেখক ওলগা তোকারজুক।

সরাসরি নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালেই প্রথমবারের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা বাতিল করা হয়। এর আগে দ্বিতীয় ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। তবে ওই সময় যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে দেওয়া হয়নি।

২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজু ইশিগুরো। ২০১৬ সালে অ্যাকাডেমি আমেরিকান রক সংগীতের কিংবদন্তি বব ডিলানকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়।

এর আগে ১৪ জন নারী সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন। প্রয়াত টনি মরিসন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল নিজের মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান।

১৯৬৮ সালে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। সে বছর পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধান করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ অ্যাকাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান