এই নাও হাত। ধরো। এবার চলো হাঁটি। পানের-পিক ফেলা দেয়ালটা অতিক্রম করলেই— নতুন শহর। জোনাকির ডানা থেকে ঝরে পড়া সোডিয়াম আলোয় ভিজে, আমাদের কিছুক্ষণ চুমো'র গন্ধ মাখা গলি-ঘুপচি দিয়ে হাঁটতে হবে। আর আমাদের সাথে ছায়াবেশে আসতে পারে— কিছু অনাকাঙ্খিত মৃত্যু সংবাদ।
মাঝেমধ্যে ঘামভেজা দরজার ফাঁকে শুনবে—চুড়ি আর বিচিত্র হাসির ব্যাকুল ধ্বনি। ফুটপাতে পাতা অসংখ্য সংসারগুলোর মতো,নতুন শহরে পাবে অসংখ্য রঙিন শামিয়ানা টাঙানো সংসার। আর সেখানে প্রদর্শিত হবে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব। আধুনিকতার ডিজিটালস্ক্রিনে দেখবে ফ্যাশন শো,টকশো’এবং নতুন শহর গড়ার মার্জিতকাহিনী।
আমি নতুন শহরের বারান্দায় বসে,তোমাকে রাতভর শোনাবো ; শহরের চিকামারা-দেয়ালের দীর্ঘশ্বাসের আতঙ্কিত আত্মকথা।
মুর্ছিতস্পন্দন
শোনেছি,আজকাল তুমি পঙ্খিরাজে আসো। জলকেলি শেষে দুধসাদা জোছনার চাদরে গতর মোছো।আর আমাকে সাদা-কালো,যে সংগম পেচিয়ে রাখে সারা রাত— তার আরাধনায় গর্ভবীজগুলো ডানামেলে ওড়ে যায় পরীর দেশে। আর তোমার স্নিগ্ধ হাসির পেছনে উল্কা ঝরে।তোমার চুল বেয়ে বেয়ে নামে শেষ প্রহর।
এরপর, আমি দুহাতে ঠেলে ঘনঅন্ধকার— ভোরের ন্যাংটা আভায় যখন বসি মুখোমুখি— কানের ভেতর ভেঙে নেমে আসে হাতে,ভীষণ জন্মযন্ত্রণায় হৃদয় ভাঙা ধ্বনি।
দু:খিতা সন্ধ্যার গল্প
বাতাস সেলাই করে করে যে কোকিলটি এলো। সেও দু:খিতা সন্ধ্যার মতো বসে আছে ; ফিউজ ওড়ে যাওয়া কারেন্টের তারে। মানুষ পুড়া আগুন পোহাতে পোহাতে রাত গুলোও ওড়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে।
আর গৃহবন্দি বধূ নিজেকে অনাবাসী ভাবতে ভাবতে— চোখ থেকে খোলে রাখে স্বামীর স্পর্শগুলো, স্যাঁতসেতে বালিশে।নিজস্ব পালক বাড়িয়ে কামনা করে একসমুদ্র জল।
জীবন থেমে আছে সময়ের মেদে ; কারেন্টের জালে আটকে থাকা মাছের মতোন।স্পিনারের মতো ঘুরছে চোখ— নি:শঙ্ক বাঁচার আকুলতায়। তবুও চলো,হাওয়ায় দোলানো বেয়াড়া চুলের ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি বিলের কিনারে।
বৃন্তের শক্ত বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়া বোঁটার মতো— হৃদয় বেয়ে নেমে আসে দূর্বোধ্য রাত। তোমার খোঁপায় গুজে রাখা নিশিগন্ধায়— চেয়ে রবে যে কালের মৃত ভ্রমর ; তার চোখ থেকে কেড়ে এনে স্বপ্ন— লিখে নেব আনুগত্যের নতুন ইতিহাস।
তুমি শুধু উন্মোক্ত করে দিয়ে উজ্জ্বল ভোর,একটু কাছে এসো।আমি তোমার সিঁথি ভরে ঢেলে দেব ফের ; মুঠোভরতি সূর্যকণা।
আঁধারবাস
অত:পর,সূর্যের বুক ফুটো হয়ে গেলে ; পৃথিবী লেপটে যায় ঘন অন্ধকারে।আর অন্ধকার গুহায় এখন— অন্ধ-পরিদের সঙ্গে আমার বসোবাস।রাত গভীর হলে— দরজায় এসে দাঁড়ায় অদ্ভুত পাহারাদার।আমি তার হাতে তোলে দিই জীবনের সব সঞ্চয়।আর স্বজ্ঞানে সাজাই আঁধার— আনন্দ উৎসবে।অকস্মাৎ,আমার পাশে গড়িয়ে আসে পরিদের নিথর আরাধনা।কেঁপে ওঠে বুক।ভয়ে করি চিৎকার!
এ চিৎকার ; কেউ শোনতে পায় না। ফিরে আসে আমার কাছে — জীর্ণ,শীর্ণ,ক্ষীণ হয়ে। আর আমি পালাতে থাকি ভেতরে ভেতরে অন্ধকার গুহার দিকে ...