পাবলো পিকাসোর কবিতা- রিঙকু অনিমিখ
পাবলো পিকাসোর কবিতা- রিঙকু অনিমিখ

কবিতা ও চিত্রকলার যোগাযোগটা ঘনিষ্ঠরবীন্দ্রনাথ, অবিশ্বাস্য শোনাতেপারে, প্রায় আড়াই হাজার ছবি এঁকেছেনবিংশ শতকের সবচেয়ে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী পিকাসোর অন্তত তিনশকবিতা পাওয়া গেছে

১৯৩৫ সালে পিকাশোর স্ত্রী ওলগা খোকলোভা তাঁকে ছেড়ে চলে যানসে গ্রীষ্মে পিকাসো নিজেকে অনেকটা গৃহবন্দি করে ফেললেনপিকাসোর বন্ধু ও জীবনীকার রোনাল্ড পেনরোজ লিখেছেন : সে-সময় শিল্পী তার ছোট্ট নোট বইতে টুকটুক করে কীযেন লিখে যেতেন, কেউ তার রুমে ঢুকে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে ফেলতেন

পিকাসোর কবিতা লেখার শুরুটা তখনই

১৯৩৫-এ পিকাসোর মা ছেলেকে চিঠি লিখলেন : ‘...ওরা বলছে তুই নাকি লিখিসআমি তোর সবকিছুই বিশ্বাস করিযদি একদিন ওরা বলে তুই চার্চে ওয়াজ করছিস আমিতা-ই বিশ্বাস করবঅর্থাৎ তাঁর ছেলের পক্ষে সবই সম্ভব

সে-বছর আঁদ্রে ব্রেতো একটি ফরাসি জার্নালে পিকাসোর কবিতা নিয়ে নিবন্ধ লিখলেন

১৯৫৯-এর গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কবিতা লিখেছেন১৯৩৫ ও ১৯৩৬-এ ছবি আঁকাআঁকি বেশ উপেক্ষা করেছেনলেখালেখি এ সময়ই বেশি হয়েছে

তখন তাঁকে ঘিরে আছে প্রিয় বন্ধু ফরাসি কবি গিওম আপোলিনেয়র, ও দিকে গার্টুডস্টেইন, আঁদ্রে ব্রেতো, পল এলুয়ারপিকাসো তা হলে কেন কবিতা লিখবেন না

কিন্তু গার্টুড স্টেইন তাঁর কবিতাকে উড়িয়ে দিলেন, এতে দুজনের বন্ধুত্বেও ফাটল ধরল

১৯৩৬-এ পিকাসোর স্পেনিশ কবিতা আঁদ্রে ব্রেতোর ভূমিকা নিয়ে ফরাসি অনুবাদে প্রকাশিত হলো

পাবলো পিকাসো ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের শহর মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন
পাবলো রুইজ ই পিকাসো (২৫ অক্টোবর ১৮৮১ ৮ এপ্রিল ১৯৭৩), যিনি পাবলো পিকাসো হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একজন স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, ভাষ্কর, প্রিন্টমেকার, মৃৎশিল্পী, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকারবিংশ শতাব্দীরএকজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী শিল্পী হিসেবে তিনি কিউবিস্ট আন্দোলনের সহ-পতিষ্ঠাতা, গঠনকৃত ভাস্কর্যের উদ্ভাবন, কোলাজের সহ-উদ্ভাবন, এবং চিত্রশৈলীর বিস্তৃত ভিন্নতার কারণে অধিক পরিচিতি লাভ করেনতার বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে প্রোটো-কিউবিস্ট লেস ডেমোইসেরেস ডিআভিগনন (১৯০৭) এবং স্প্যানের গৃহ যুদ্ধের বিরুদ্ধে আঁকা গুয়ের্নিকা (১৯৩৭)

১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল ফ্রান্সের মৌগিন্সে মারা যান পাবলো পিকাসো মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি তার স্ত্রী ও বন্ধুদের সঙ্গে ডিনারের টেবিলে ছিলেন
===========================================

পিকাসোর কবিতা :

৪০ নম্বর ডেজার্টে যীশুখ্রিস্ট

ধর্ষণকারী
রেডিওতে বাজাচ্ছে
শ্যুম্যান
নারীদের
দুপা প্রসারিত করতে


পৃথিবীর প্রভাত

আমার আছে একটি বরফ-কাটা মুখমণ্ডল
হাজারটা বিদ্ধ একটি হূদয়
যেন সবসময়
একই স্বর মনে পড়ে
একই অঙ্গভঙ্গি
আর আমার হাসি
তোমার আর আমার
মাঝের দেওয়ালের মতো
ভারী


যারা সবচেয়ে বেশি জীবিত

যারা সবচেয়ে বেশি জীবিত
তাদের মনে হয় সবচেয়ে নিথর
ছায়াপথের পেছনে
একটি ছায়া নাচে
আমাদের দৃষ্টি তারকার দিকে উঠে যায়



লাল নগ্নিকা

তুমি শীতের ছাই উড়িয়ে দাও
জ্বলে ওঠে লাল এবং নগ্নিকা
ধোঁয়া দিয়ে আঁকা
আর কয়লা
গ্রাস্টার ও পাথরের দেয়ালে
চেপে ধরা
কাগজের ফুলের ছায়ায়
এখনো জ্বলছে



শিল্পী ও তাঁর মডেল

তোমার পিঠ ঘুরিয়ে নাও
কিন্তু একই সঙ্গে তাকিয়ে থাকো
(এখন অন্যদিকে তাকাও
যে কোনো কিছু তোমাকে বিভ্রান্ত করে।)
কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো
তুমি দেখতে পাবে না, কিন্তু এভাবেই আমি
দিনকে রাত থেকে পৃথক করি
এবং শূন্য হূদয় থেকে
তারাহীন আকাশকে


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান