প্রখ্যাত নাট্যজন, গবেষক ও অধ্যাপক সেলিম আল দীনের ৬৯তম জন্মদিন আজ।
প্রজ্ঞা, মেধা, মনন ও দক্ষতায় যে ক’জন নিরলস সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব আমাদের সহজিয়া লোকজ বাংলার উর্বর সংস্কৃতিকে বহুমাত্রায় বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন নাট্যকার সেলিম আল দীন ছিলেন তাদের ভেতর অন্যতম।
১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ নাট্যকার সেলিম আল দীন। মফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। বাবার চাকরির সূত্রে এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি।
১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটকের উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন সেলিম আল দীন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘বিটপী’তে কপি রাইটার হিসেবে।
১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার। তার প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায় ১৯৬৯ সালে এবং টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ‘ঘুম নেই’) প্রচারিত হয় ১৯৭০ সালে। আমিরুল হক চৌধুরী নির্দেশিত এবং বহুবচন প্রযোজিত প্রথম মঞ্চনাটক ‘সর্প বিষয়ক গল্প’ মঞ্চায়ন করা হয় ১৯৭২ সালে।
তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে।
সেলিম আল দীনের প্রথমদিককার নাটকের মধ্যে ‘সর্পবিষয়ক গল্প’, ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মূল সমস্যা’, এগুলোর নাম ঘুরে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে ‘প্রাচ্য’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘বাসন’, ‘আততায়ী’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’ ও ‘চাকা’ তাকে ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত করে তোলে। জীবনের শেষ ভাগে ‘নিমজ্জন’ নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে সেলিম আল দীনের কলম থেকে। তিনি ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহ: ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ (১৯৭৫), ‘বাসন’ (১৯৮৫), ‘মুনতাসির’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’ (১৯৮৬), ‘কেরামতমঙ্গল’ (১৯৮৮), ‘যৈবতী কন্যার মন’ (১৯৯৩), ‘চাকা’ (১৯৯১), ‘হরগজ’ (১৯৯২), ‘প্রাচ্য’ (২০০০), ‘হাতহদাই’ (১৯৯৭), ‘নিমজ্জন’ (২০০২), ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’ (২০০৭), ‘পুত্র’, ‘বনপাংশুল’।