মেহেদী ইকবাল এর কবিতাগুচ্ছ
মেহেদী ইকবাল এর কবিতাগুচ্ছ
ঈদ
মানুষের হাসি দেখার আশায় নেমে এসেছি পথে
পথে পথে মানুষের ভীড়, প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেয়ে
প্রত্যেকের হাসি হাসি মুখ! ওরা ভুলে গেছে
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন -বাসে গাদাগাদি, উপচে পড়া লঞ্চের ছাদ!
পথে ঘাটে খানাখন্দ, মালিকের রক্তচাহনী, কান্না আর ঘামে ভেজা
বছরের প্রতিটি দিন!
এই একটিমাত্র দিন ওরা প্রাণখুলে হাসবে বলে
সারাবছর অপেক্ষায় ছিলো! আমি অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখেছি
দেখেছি কক্সবাজারে সমুদ্রের ঢেউ, ইয়াল্টা, মাকাবসের পরিচ্ছন্ন বীচ্!
আমি দেখেছি লাউচাপড়া, গজনী, মধুটিলার পাহাড়
সবুজ বৃক্ষরাজি। আমি শুনেছি জলের কল্লোল ধ্বণি
যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের বিরতিহীন বয়ে চলা!
আমি শুনেছি নাম না জানা পাখিদের গান
দিগন্তে মালা গেঁথে পরিযায়ী পাখিদের উড়ে চলা!
তবে এইসব সুন্দর দৃশ্যের চে '
সবচে 'সুন্দর হলো মানুষের হাসিভরা মুখ!
যা একটি বছর শেষে দেখা যায় এই দিনে!

ঈদ বাজার

ঈদ বাজারে মানুষের ভীড়। রঙিন আলোয়
দেখি হাসছে বিপণী বিতান! উপচে পড়া পণ্য
আর ব্যস্ততা বিক্রেতার
নতুন জামা কিনে সকলের হাসিভরা মুখ।
টাকা দিয়ে কেউ কি আর ঢেউ কিনে জ্যোৎস্নার?
কোলের শিশুরা আজ পুষ্প নয়, মার্কেট চিনে!
আমি এই ভীড়ে সেই বালককে খুঁজি, যে বালক
নতুন জামা না পাওয়ার কষ্টে
কী বিষণ্ণ!
একাকী জেগেছিলো সমস্ত রাত!


১.ধাঁধা
গ্লাসে জল ছিলো, এখন জল নেই, জলীয় বাস্প
দেখি উড়ছে আকাশে। জলীয় বাস্প, না -কি মেঘ?
কই, কিছুই তো পড়ছে না চোখে? বরং এদিকে
ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্টে উড়ছে মাছি একপাল মহাসুখে।
এরা কি আসলেই মাছি? না -কি সারমেয় দল?
কি জানি, হবে হয়তো কিছু ! কিংবা আসলে এরা কিছু নয়
এরা সেই বাস্প জলীয়, না -কি মেঘ?
না -কি এরা সেই গ্লাস ভর্তি জল?
২.হ্যাঙার।।
দেহ বলে কিছু নেই, যা আছে তা হলো একটি হ্যাঙার
আর জামা। লাল, নীল সে হরেক রকমের জামা।
ঘাস ফড়িঙের মতো লাফিয়ে পড়ছে বোতাম
দিগন্ত কাঁচের মতো ভেংগে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে
সবচে 'দামী টুকরোটি গড়িয়ে গড়িয়ে কোথায় যে হাওয়া !
সর্বত্র আছে তবে বুভুক্ষু 'কৃষ্ণগহবর '।
খোঁজা খুঁজি এই বেলা থাক
এরচে 'বরং হ্যাঙারগুলোকে রৌদ্রে ঝুলিয়ে দাও
আর হাতে নাও শক্ত এবং মোটা একটি ব্রাশ।
ভ্যান গগ বেঁচে নেই, এখন তোমাকেই টানতে হবে উজ্জ্বল কিছু রেখা।
৩.গণিতবিদের চোখ।।
এক দুই গুণতে গুণতে
শূন্যের কাছে ফিরে আসি
শূন্যতার মহাসমুদ্রে
অসংখ্য হাংগর তেড়ে আসে ।
জানালা থেকে রোদ সরে গেলে
টুকরো টুকরো সংখ্যাগুলোকে উড়ে যেতে দেখি ।
ধ্বংসস্তূপের পাশে আপেলের মিষ্টি গন্ধ
গণিতবিদের চোখ হ্যাংগারে ঝুলতে থাকে ।
হারানো সংখ্যার খোঁজে কেউ হয়তো পাহাড়ে যাবে
আমি কিন্তুু কোথাও যাবো না । অন্ধকারে
ঝিঁঝিঁদের গান শুনবো কি শুনবো না
অনন্ত নক্ষত্ররাজি, এক দুই সংখ্যা তত্ত্ব কিংবা অপার শূন্যতা
এই সব দেখতে দেখতে কিংবা ভাবতে ভাবতে
হয়তো বা পেয়ে যাবো হ্যাংগারে ঝুলতে থাকা গণিতবিদের চোখ!
৪.সাঁতার।।
জলে নামার পর ভাবছি সাঁতার জানি কি না
নিরুপায়, মাছেদের ডেকে ডেকে আত্মীয়তার কথা বলি।
মাছ কবে ডাংগায় উঠেছিলো, কবে তারা পেয়েছে ফুসফুস
আর কবেই বা তারা ডানা মেলে উড়েছিলো দিগন্তে !
নদীর অন্তস্থঃ স্রোতের সাথে মিশে মৎস্য জন্মের কথা ভাবি ।
এখানে ডুবেছে অনেক স্বপ্ন, কারো হাঁসের ছানা, কারো বা ফসল
তবু জেলেরা ধৈর্যশীল দাঁড় টানে মাঝ নদীতে । ঢেউমগ্ন প্রহরে
দূর থেকে ভেসে আসে কচি শিশুদের হাসি ।
জলে নামার পর ভাবছি সাঁতার জানি কি না
প্রশস্ত নদীর জলে যে কিশোরী স্বপ্ন খোঁজে
সে কি জানে, তার উরুর পাশ কেটে ত্রস্ত মাছেরা কোথায় লুকায়?


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান