অনেকে
অনেকের মতো লিখতে চাচ্ছে আর কেউ কেউ লিখতে চাচ্ছে নিজের মতোই; এই নিজের
মতো লিখতে চাওয়া মহৎ কবিদের প্রতি আমার যতো অনুরাগ। কবিতা কী এবং হওয়া আর
না হওয়া যখন অমীমাংসিত প্রশ্ন, তখন সেসব ঘেঁটে সময় নষ্ট করবার মতো অন্তত
বোকা আমি নই; যতোটুকু পারি ছুঁতে চাই কবির ভাবের অতল,কবি কী বলতে চেয়েছেন
সেই বোধের দেয়াল। পেরেছি কী পারি নাই সেসবও ভাবিনা,বলতে পারেন বরাবরের মতো
স্পর্ধাটুকু দেখাতে আজও এসেছি কবি রেহেনা মাহমুদের কবিতা নিয়ে.....
রেহেনা মাহমুদের কবিতা নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় তাঁর একমাত্র প্রকাশিত কবিতার বই 'এবং হিমু মন' নিয়ে; প্রথমত
'এবং হিমু মন' বইটির কবিতা পড়তে পড়তে হৃদয় আর্দ্র হওয়া টের পেয়েছি,সহজাত
সুন্দর উপলব্দির নির্ণীত বাহাস; শব্দের কোনো টানাহেঁচড়া নেই। আলগা
ভাবনার কোনো প্রশ্রয়তো নেই, বিরহ-বিবাগে বেহালার সুর যেন ঘাড় বাঁকিয়ে
বাজিয়ে চলছে সবার অলক্ষ্যে ---
আমি জানি আমার কি নেই/ আমার প্রতি তোমার প্রেম নেই / যে আমায় দেখে তোমার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠতো/ আজ তাতে কোনো ভাষা নেই/ তোমার ঠোঁটে তিরতিরে কাঁপন নেই। -উপেক্ষায় আছি,অপেক্ষায় নেই; ৯ পৃ.)
খ. আমাদের অশান্ত মনে শান্তির শীতল ছায়া দেয় কবিতা/ ঝর্ণার কাছে না গিয়েও কলকল ধ্বনি শোনায় কবিতা/ প্রজাপতির বর্ণিল ডানায় ফুল পরাগের পসরা সাজায় কবিতা/ আমরা কবিতা চাই,কবিতা। - কবিতা চাই, কবিতা;১১পৃ.)
গ. তোমার আমার যুক্ত সময়গুলিকে এখন হসন্তের মত পাশে থাকি/ এখন আর তুমি লেপ্টে থাকোনা/ মিউচুয়াল হয়ে পাশাপাশি থাকো। - হসন্ত সময়;১৪পৃ.)
রেহেনা
মাহমুদের কবিতা গীতলধর্মী। ঝিরঝিরে মায়াঘোরের ঘোলাটে জলের নদী বয়ে চলা
যেন। প্রথম কবিতার বই বলে বলছিনা - কবিতায় নুন মরিচ কিছুটা কম,বলতে চাচ্ছি
নুন মরিচ কিছুটা কম করেই অনেকেই খায়। চিত্রিত কল্পের পাড়ায় রেহেনা
মাহমুদের কবিতা মাটিগন্ধী- আত্মিক; মাঝেমধ্যে খামখেয়ালি আধ্যাত্মিক ঘোর
প্রলুব্ধ করে। সামাজিক টানাপোড়ন উপস্থিত বাক্যের পর বাক্যে নির্ণয় হতে থাকে
সত্য ও সুন্দরে। ভাবছন্দে কঠিন কোনো অজুহাত নেই কবিতায়,তবে বুদ্ধিদ্বীপ্ত
উচ্চারণ বেশ মনোগ্রাহী; বোধের আসীনে মিষ্টি কিছু উপমা,পরাবাস্তবতার বিভ্রমে
মলিন কিছু মুখোশ পাঠককে দ্বন্দ্বে পতিত করতে পারে। কিছু কিছু কবিতা 'এবং
হিমু মন' কবিতার বই থেকে উঠে আসছে পাঠকের নিজস্ব কথা বলে; সবশেষে বলতে হয়
রেহেনা মাহমুদ প্রেমে চিরচেনা সেই অভিমানের মায়াবী প্রান্তর, মমত্বের
দূরদর্শী খেয়াল---
কিছু প্রশ্নের জবাব মেলে সহজে কিছুর জন্য অপেক্ষা অনন্ত/ হিমুমন খুঁজে ফেরে উত্তর পথে পথে/ অথবা পথই তার ঘর - মায়াবতীর অপেক্ষা;৪০ পৃ.)
কিংবা---
জানি ফিরবেনা আর হিজল সময়,/কাঠগোলাপ,কৃষ্ণচূড়া দিন/গুঁইসাপ জীবন চলছি টেনে তবু/ জীবনে বেড়েছে অপরিশোধ্য ঋণ। - ফেরেনা কাঠগোলাপ দিন;৫৯ পৃ.)
কবিতার
খেয়ালে এই মহতী কবির ভাবনা দিনদিন আরো শাণিত, আরো বেশি প্রোথিত হচ্ছে
নিজস্ব বৃক্ষের মায়ায়। এটা জাগ্রত থাকুক অভিমানে নানান ছুঁতোর
সৌন্দর্যে,এতটুকু চাওয়া আজ করে যাচ্ছি.....