( নিতান্তই সহজ সরল এ কবিতাটি রচনায় মধ্যযুগীয় ধারা অনুসরন করা হয়েছে)
‘রক্তবিন্দু লাল টিপ ললাটে ধরিয়া
শীর্ণ-কুন্তল শোভা উঠে উথলিয়া;
কে দেখিবে এই রূপ তুমি ছাড়া মম?
শ্রাবনের ভরপূর দূরন্ত যৌবন সম।
কাঁচুলি বিহীন বক্ষ,
গরবে স্ফীত, আর
কনক কিরণে সে যে ফোঁটে বার বারÑ
পীনোন্নত পয়োধর যুগল-
তোমরেই যাঞ্চা করে, না মানি অর্গল।
না মানে ভ্রæকুটি মোর, যতই করি না বারণ,
রাখিতে চাহে না তাহে কিঞ্চিৎ বসনÑ
উন্মুক্ত করিতে চাহে তোমারই লাগিয়া শুধু-
তাহার এই আকিঞ্চণ ।
কিসের বারন আর কিসের শাসন!
সুপুষ্ট অধর দু’টি তাম্বুল বরনে
উন্মুখ তোমার ঠোঁটে চম্বনে চুম্বনে
করিতে তোমার ঠোঁট সিক্ত মায়াজালে-
আমার অধর যেমতি রক্ত-আবরণে।
কটিবন্ধে চন্দ্রহার অপরূপ যামিনির শশী
ক্রন্দন করিছে যেন,
কত- কালের উপোসী!
না পেয়ে তোমার দেখা ফিরি চলে নিশীথচারিনীÑ
বড় অসহায় সে যে, বড় অভিমানী-
ক্লান্ত পদভারে।
কি হবে এ চন্দ্রহারে,
না থাকে যদি এই মধ্য রজনী?
না আসে এ রজনীতে যদি আমার মুকুট-মনি
আরÑ প্রভাতের দিনমনি ফুটিবার আগে
কি ফল লভিব আমি, আমার এ নিলাজ অবেগে
আমারই এ পরিপাটি অনঙ্গ-শয্যায় ?
সকল আয়োজনই হবে নিমগ্ন ব্যর্থচারিতায়।
একি দূর্দশা ঘটিলো মোর ললাট লিখনে-
আছে কি দৈব কিছু এ দশা লঙ্ঘনে?
কে দিবে উত্তর এই সামান্য জিজ্ঞাসার?
কে অছে এমন জন বিশ্ব পারাবার
আর চরাচর মাঝে?
আসিবে কি সে আমার কাছে,
মনের দুয়ারে বসি উত্তর দিবার?
কতকিছু মনে আসে অকুল পাথার
শুধুই শুন্য, চারিদিকের দৃষ্টিতে আমার।
এ কারণে কত বার কত দন্ড ধরি,
খুঁজিনু তোমারে আমি বারে বারে মরি।
অবশেষে উছলিত বিপুল জলধির
অতিনীল অশান্ত মত্ত সলিল
বুকে- ফেলিনু আণন ছায়া,
দেখিতে তোমায়;
না হলেও তোমার দেখা, তাতে কী আসে যায়
তোমার অতি নির্মম নিঠুর অন্তরে হায়!
তবুও তোমারে আমি যে ভাবে দেখিতে চাহি প্রাণ মন দিয়া
অথৈ জলের মর্ম দীর্ণ ভাবিয়া।
অথচ আমারই কৃষ্ণ-ঘন অক্ষিপল্লবে
খোঁজে কি আপন ঠাঁই নিজেরই ভাবিয়া তবে?
পরিশেষে হলো তাই, লভিলো আশ্রয়
ঝরো ঝরো আঁখিতে মোর, তাহার আলয়Ñ
সেই নীলে-রাঙ্গা,
সেই নুনে-মাখা অথৈ জলরাশি।
দিনমান রাত্রিকাল সেই জলে ভাসি।
এ কেমন বিধান তোমার হে অবোধ বিধি?
নয়নের নোনা জলে শ্যামের সমাধি!
টিপ নাই আছে শুধু ললাটের আগুন,
জলেও নেভে না ততো বাড়ে যত গুণ।
চূর্ণ করি মম দুই হাতের কঙ্কন,
বহুবর্নে বিচিত্র চিত্রিত অঙ্কন
আমার হৃদয় মাঝেÑ যাহার নীলোক্ত মুরতি
করিয়াছি আমি। আরও করিয়াছি শুধু তাহারই আরতি।
সে কেন ভাসিছে আমার পরাণ-পূর্ণ তিক্ত ভান্ড ভরি
বিষম সেই নোনা জলে তিল তিল করি?
আমার চোক্ষের তারায় আসিবেই যদি
শবের আধার হয়ে কেন নীরবে নিরবধি?
এ যে কী নিদারুণ
যাতনা, আমার মনে কত সকরুণ-
দিয়াছ যে তুমি, হে মহান প্রভ ু?
প্রহর গুণিয়া চলি তোমার নামেই তবু।
কেমনে সহিব আমি মরন আঁধারেÑ
যে যাতনা দারুণ বিধি দিয়াছ আমারে!
ভাবিয়া দেখি না কুল, সবই যে তমশা অপার,
করূণা ভিক্ষা ছাড়া কিছু নাই আর
কপালে আমার।
জীবনের দীপটি যে ক্লান্ত দেহ লয়ে
জ্বলিতে পারে না আর; অতি ধীর পায়ে
আমার সুমুখে
পড়িছে ঢলিয়া দূখে,
শিখা নিভু নিভুÑ
একবার নিভে গেলে, আর জ্বলিবে না কভূ।
কি দিয়াছ তুমি মোরে
হে অসামান্য বাঁশরীর কবি?
নিয়াছ যা কিছু আমার- সকলই হরণ করি-
রজনী দিবসের কম্পমান কত শত
আঁধার আর রৌদ্রের মেলায়।
বাঁচিবার সাধ আর
পূরণ হলো না আমার
মধ্যাহ্নের অসহায় এই অবেলায়।’