কবি : অনন্ত সুজন
অনন্ত সুজন
জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯৭৭
জন্মস্থান: ব্রাহ্মনবাড়িয়া, বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থ:
পিপাসাপুস্তক ২০১০, জেল সিরিজ ২০১২, লাল টেলিগ্রাম ২০১৩, সন্ধ্যার অসমাপ্ত আগুন ২০১৬, হাড়ের জ্যোৎস্না ২০১৯
সম্পাদনা:
সুবিল
সম্পাদিত গ্রন্থ:
শূণ্যের সাম্পান (প্রথম দশকের নির্বাচিত কবি ও কবিতা) অনতিদীর্ঘিকা (প্রথম দশকের দীর্ঘ কবিতা)
শঙ্কা
ধমনির লাল বাঁকে এ-কার সঙ্কেত পড়ে আছে,
ম্লান---কেবলই দূরে দূরে থাকে, তবে কী আহত
করেছি ব্যথার নন্দনে কখনো? সুড়ঙ্গ তোমার
বড্ড অচেনা! সাঁতার জানি না বলে পাঠিয়েছো
ঢেউ! এভাবে, এ-গানে আমাকে আর কতদূর
নিয়ে যাবে? ছিলাম না কখনো মরুবেদুঈন,
তবুও কেন আত্মপরিচয়ের আড়ালে মন্দবাস
ঘুঙুরের মতো বাজে! বাসানার বীজ খাদ্য ভেবে
নিয়ে গেছে পরিযায়ী পাখি। ডানার ছায়া ফেলে
উড়ে গেছে শীতের দেশে। একটিও নেই আর
দয়ার বোতাম। বলো, কোন বস্ত্রে নিজেকে ধরে রাখি?
রাজকুমারী
এমন শুভ্রতার বাহক কেবলই কল্পলোকের,
হবে হয়তো অচেনা গ্রহের লাজুক কোন তারা,
শতাব্দীর উপান্তে এসে এ-বেলায় বিস্ময়ে বঙ্কিম---
যেন অতুল্য অভিসার! চন্দ্রগুড়ো একত্র করে
পুস্পরথ ওদিকেই যেতে চায়, যেখানে জ্যোৎস্নার
প্রলেপ ত্বকের উপরিভাগে কোমল কৌতূহল রেখে
জীবন ও মৃত্যুর সীমানা নির্ধারণ করে! শুনেছি,
তার সামান্য নম্রতার ঢেউয়ে সিংহাসন ধ্বসে গেছে!
বালিঝড় এলে এখনো সেই যুদ্ধবাজ অগণিত
প্রেমিকের রক্তগন্ধ বাতাসের আবর্তে রূপকথা নামায়!
অতএব দাঁড়াও, হে অবৈতনিক আগুন---সে কিন্তু
স্নান করে প্রত্যহ, সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলে!
প্রথা
ত্বক ভেদ করে
হাড়ে বিঁধে আছো
হিমবাহ কোন...
নিজেরই ভুলের কাছে অশ্রুপাত করি
সহসা
অহর্নিশ
এর চেয়ে,
এই ভালো, স্বাগত
অগ্নিপূজা
স্বতঃসিদ্ধ, প্রলম্বিত...
মুহূর্তভেদ
বাঘের পিঠে চড়ে অরণ্য ভ্রমণের পর
মনে হল---''হরিণের মাংসই তার নিজের শত্রু''
এই ছত্রে, নিয়ম ভেঙ্গে যোগফলে এসে বিঁধে যায়
পুরনো গল্পের ঢেউ। আর প্রতিটি ঝড়ের শেষে
দুচোখে জাগরণ নিয়ে অলস ব্যস্ততায় কড়া নাড়ে
বনশ্রমিকের হাত।
এত যে রুক্ষ-মলিন, ছিল কি তবে মরুদেশে?
বাদামি নিঃশ্বাস ফেলে হাওয়ার উপর
এখন উদগিরিত অসময়----ব্যর্থদিনে স্মৃতিযান এসে
নামিয়ে যায় লবণপাহাড়। তার অসমাপ্ত
চূড়া থেকে নেমে আসে বজ্রনখ! ধীরে, যুগের
সঞ্চারণ নিয়ে ক্ষতসভ্যতার উপর
তাঁবুর ভেতর যত উদযাপন----ততোই মুহূর্তস্মারক
অসম আয়োজন ত্যাগ করে কিছুটা তার
খসে আসে---হয়তো বিচ্ছুরিত আলোর ফণা
বালুতটে ক্রোধ নিয়ে বসে থাকা মূর্খের দিকে।
পানশালা
কতদিন যাই না পানশালায়!
অতি ভ্রমণের অপরাধে ভুলে আছি---
গেছি হয়তো ভুলে!
ওখানে কী সন্ধ্যা নামে এখনো?
রাতের জিরাফ এসে নিরবে রেখে যায়---
গন্ধমের গহীন প্ররোচনা---
সোমত্ত আগুন কিছু!
আর যখন মধ্যরাত মন্থর, স্তব্ধতার
বেষ্টনীতে কচুরিপানার সবুজ ঐক্যের ন্যায়
অন্ধকার কেবলই জমাট হতে থাকে। তখন
যে যার স্বোপার্জিত অন্তরাল থেকে
স্বচ্ছ পূর্ণিমার আবহে বাইরে বেরিয়ে আসে।
কারো গ্লাসে আনন্দের বুদ্বুদ
কারো গ্লাসে বিষাদের প্রপাত
কেউ আবার প্রকাশ্য অশ্রুপাত বিভোর---
মুখোমুখি বসে মৃত্যুর এজলাসে!
আহা, কতদিন হলো যাই না পানশালায়!
আচ্ছা, ওখানে কী ঈশ্বর নামে এখনো---
পুষ্পিত ও পল্লবিত করে পৃথিবীর বাতাস?
রুপান্তর
এ বছর পাখিদের দলে যোগ দেবো
ভুবনচিলের কাছে প্রস্তাব করেছি উড্ডয়ন খ্যাতি
আরেকবার নিপতিত হবার আগেই মেঘপাহাড়ের
শীর্ষে রেখে আসবো অগ্নিবায়ু---এতকাল যে
উঠতি যুবতীর শরীরের ভেতর লুকিয়ে ছিল ।
ঐ যে ধীমান যুবক,গ্রহরাশি যাকে সন্ধান করে
শীতভর্তি শরীরে কুয়াশা-কঙ্কর ভেঙ্গে পা
বাড়িয়েছিল হিমালয়ের খুঁজে । যেখানে এক
বিচরণশীল বর্ষীয়ান কচ্ছপ যে-কি না ঝর্ণাকে
সামনে বসিয়ে ছন্দ শেখায় । যার পায়ের
নিচেই কেবল স্থির হয়ে বসে থাকে অসামান্য
আয়ুর হ্রদ । তার স্নানের কৌশল হতে পারে
যে কোন অভিজ্ঞ নর্তকের । হয়তো অদূরের
বাড়িতে তার মঞ্চায়ন হবে কোন একদিন
লুণ্ঠিত হবে দলত্যাগী হরিণ শাবকের মতো
অরণ্যযাদুতে বিছিয়ে দিয়ে রক্ত আর লবন ।