অমিতাভ মিত্র এর কবিতাগুচ্ছ
অমিতাভ মিত্র এর কবিতাগুচ্ছ

ছবি : কবি অমিতাভ মিত্র


লাশেরাও কথা বলে

লাশেরাও কথা বলে ,
কেড়ে নেয়া নিশ্বাস ফেরৎ নিয়ে আবার পেতে চায় সোঁদামাটির গন্ধ
একদমে বলে ফেলতে চায় দমবন্ধ করে রাখা অনুভব
সেঁজুতি সন্ধ্যায় বলতে চায় আকুল মনের আকুতি I

লাশেরাও কথা বলতে জানে
শুধু শুনতে চায়না তোয়াজমুগ্ধ কান ,
পারলৌকিক প্রশান্তিতে বুঁদ হয়ে সে তখন উদাস ইমনে মগ্ন ,
দুঁদে দারোগার মতো ব্যস্ত নতুন আসামীর খোঁজে ,
ধূপধুনো দিয়ে লাশকাটা টেবিলও হৃষ্ট চিত্তে মধুরেন সমাপয়েতের অপেক্ষায় ,
ছমছমে আবহে মরিয়া লাশেরাও কথা বলে I

গুনগুন করতে করতে বধির ছুরি তাজা হৃদপিন্ড তুলতে মশগুল I

আলোচিত প্রেম

তাকে নিয়ে তুমুল তুফান ওঠে কাপে ,
ঘট পেতে ঘটা করে পাঠ করা হয় শোকপ্রস্তাব ,
বীরত্ব নিয়ে লেখা হয় কাব্য ,
দ্বীপান্তরে তটে বসে সে তখন নিশ্চিত খুব হাসে I

দূরবীন দিয়ে দেখে মানসিক করে মানষিক রোগে উজাড় হওয়া জনপদ ,
দেখে অশিক্ষিত আশিক পচা মাছেও খুজছে তার মহিমা
নিশ্চিত দারুণ মজা পায় সে
আর কেনই বা পাবেনা
কে না চায় স্মৃতিসৌধে ভরে যাক রসাতল I

পোষা টমিটাও জানে না-কামড়ালেই প্রেমে ,
পোষা মানুষটাও জানে নিয়মমাফিক সব মেটালেই প্রেমে ,
পোষা কাকাতুয়াটাও জানে শিখিয়ে দেয়া বুলির বাইরের শব্দ লুকিয়ে রাখতে পারলেই প্রেমে ,
আসলে প্রায় সকলেই মানে .....
প্রতিষ্ঠানিক সিলেবাসে এক বিছানায় গুঁতোগুঁতির নামই প্রেম ,
অট্টহাসি হেসে সে বলে ..........
স্বেচ্ছায় কবেই চলে এসেছি দ্বীপান্তরে I

মার্গিয় নির্লিপ্ততা

নির্ভেজাল নির্লিপ্ততা ,
ঝরাপাতাদের সরণি যেখানে আলেকালে হেঁটে যায় কেউ ,
পায়ের নিচে পলাশের ছিন্নভিন্ন সোহাগ ,
অহেতুক কয়েক পশলা অনুনয় ,
অপ্রাসঙ্গিক কয়েকখন্ড কোলাজ ,
অলিখিত এক গণ্ডূষ আশা ,
পথিকের ফিরে দেখার কিছু নেই I

ভাটারটানে ভেসে গেছে ইচ্ছেরা ,
একলপ্তে দীর্ঘশ্বাস মাখা রজনীগন্ধার দল ,
বিনিসুতোর মালা থেকে খসে পড়া শবনম ,
হয়তো দুর্মূল্যই তবু ....
নিরম্বু আকাশে ওঠেনা সাতরঙের ঝালর ,
মেঘ-রৌদ্রের খুনসুটিতে ভরে ওঠেনা আটপৌরে আঁচল ,
ইলশেগুঁড়ি সোহাগে আর নাচে না স্কুল পালানো অবাধ্য চড়ুই I

এখন শুধু
মৃত্যুকে বেছে নেয়া নিরবিচ্ছিন্ন নৈঃশব্দ
আর ,

তসবি আঁকড়ে দিন গুজরানের গান I

জন্মের পর

জন্মের ওপর ছাদ পায়নি ইচ্ছেরা ,
একমুঠো ছায়ার সন্ধানে আবৃত অক্ষে রক্তাক্ত ধর্মযুদ্ধ ,
নিসাত দীঘিএকলাফে পেরিয়ে যায় খোলামকুচি ,
অপরিনত কিছু কোরক ভ্রুনহত্যার প্রামান্য দলিল ,
ইচ্ছেরা ভয় পায় ভূমিষ্ঠ হতে I

ছিপিবন্ধ দোয়াতে তরল আবেগ ,
মাঝেমধ্যে সাদাপাতায় অকারনে নকশিকাঁথার গল্প ,
গাঢ় ঘনত্বে দীর্ঘশ্বাসেরা শ্বাসকষ্টে ভোগে ,
পুরোনো ডাকটিকিট জমানোর শখ এখনও
প্রতিভোরে খুলে দেখে পত্রদানি ,
কনেদেখা সন্ধ্যায় বাসিফলের ওপর দিই জলছড়া ,
চশমার পাওয়ার বাড়ে মমি-চোখে মোমবাতির শিখা জাগাতে ,

অবৈধ সুখেরা বেঘরে কাটিয়ে দেয় জীবন
জন্মের পর ছাদ পায়না ইচ্ছেরা I

তুমি আসবে

কিংখাবে ঢাকা পাঠানো নজরানা ,
চুমকি গেঁথে সাজিয়ে দিয়েছো দর্দ ,
কিছু মেয়াদ খোয়ানো উচাটন .....
মিলেমিশে থাকা বেশকিছু অসচ্ছল তৃপ্তি
আর ,
আর হৈমন্তীরাতের কিছু সাবেক সংলাপ I

সাড়ে তিনহাত জমিতে অস্তিত্বের নিস্পলক গেরস্থালি ,
গোর দেয়া স্বপ্নদের ভাগ করে দিই তোমার পারিতোষিক শুভেচ্ছা ,
চন্দন চর্চিত করে রাখি নিমগ্ন-গাঁয়ের পথ ,
একত্রিত করে রাখি ফিরে আসার সবকটা আশা I

পরের বার ,
হয়তো তারও পরের বার ....
হয়তো অনেক বার পেরিয়ে নিয়ে আসবে সেঁজুতি সকাল ,

মেঠোপথে সারারাত ঝরে পড়ে শিউলি I


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান