কবি : অরবিন্দ চক্রবর্তী
দ্বিতীয় দশকের অন্যতম শক্তিশালী কবি অরবিন্দ চক্রবর্তীর । ১৯৮৬ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার রায়পাড়া সদরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা অমল চক্রবর্তী ও মা শ্যামলী রানী চক্রবর্তীর তিন সন্তানের মধ্যে অরবিন্দ চক্রবর্তী প্রথম। ছাত্রজীবন থেকেই ভালোবাসেন কবিতা। সমস্ত জীবনে আঁকড়ে ধরেছেন এই একটিমাত্র মাধ্যমকেই। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই ‘ছায়া কর্মশালা’ (২০১৩), ‘সারামুখে ব্যান্ডেজ’ (২০১৬) ও ‘নাচুকের মশলা’ (২০১৮) এবং সম্পাদনা গ্রন্থ দ্বিতীয় দশকের কবিতা (২০১৬) ও অখণ্ড বাংলার দ্বিতীয় দশকের কবিতা (২০১৭)। এছাড়া নিয়মিত সম্পাদনা করে যাচ্ছেন বাংলা ভাষার পত্রিকা ‘মাদুলি’।
⭕ সভ্যতা অথবা রাত্রি ⭕
রাত্রির রং বিবাহ। শাড়ি তার কাছে অর্থহীন। তবু মানুষের পাহারা আছে বলে গায়ে মাখে জবরজং। পরিসীমা পেরিয়ে যখন দরজা নাড়ে, হৃদয়ের প্রত্যন্ত জাপটে দৈত্বে ধানশ্রী গায় , দেদার চুমু খায়। তখনই মহিমাখ-ে নামে তামাটে সোহাগা। যে সাম্রাজ্যের দিকেই যান না কেন সন্ধ্যা তার কক্ষ-বান্ধবী। মিনতি নামে বুটিক বাতিক সত্ত্বেও মালবেরি বন অতি ঘুমপ্রিয়। সহসা শরীরে যার ক্ষুদেবার্তা বহমান। অতসব কা-স্বর শেষে আপনিই বলুন জতুগৃহ, পাঁজর থেকে কেন উচ্ছেদ হলো না সতীদাহ?
⭕ পোশাকবংশ ⭕
পোশাকের সন্তান ডিনার করবে না, ডিমচাঁদ করতলে নিয়ে তানানা সাধবে। তুমি বসো জাগলার, মুলতান হোক। আজ রোদ আস্তরণ পরেছে যাদের মুখম-ল―সে বা তারা শাস্ত্রীয় করুক আর আকাশ থেকে নাদধারা হয়ে আসুক অমৃত-ওঁঙ্কার।
ইদানীং তোমাকে বারবিকিউ লাগে, সারা দিন হিমছানা বিক্রি শেষে আমার জন্য বিপুল ঘামত্বক নিয়ে সাঁতরে ফিরেছ জীবনে। ঠান্ডা আওয়াজের তোয়ালে এগিয়ে দিল বহুজন ঘরোয়া। প্রশান্তির ঘরে কে যেন লিখছে আমাদের গড়জীবনী। ফলে, মাত্র এখনি প্রবল পুরুষ হলো উত্তাল খাট! আসলে ব্যক্তিগত প্রাণগণ কতগুলো প বর্ণ ধরে বাঁচে, জানি না!
শোনা গেল, শোভাবাক্স খোলা। আগে-পরে কার্টুন দেখে এখন দুহাতে লাল বর্ণ নীল বল রেখে তোমাকে হামোনিয়ামে ডাকল রাবীন্দ্রিক। সাড়া না দেওয়ায় রিখটার স্কেলে নির্দেশ এল, হোক দেহকম্প। গ্লাসভর্তি লা লা; ঝলক যেন। এখন কী দেখবে, কী করবে বোঝা দায়।
বরং, রাত হয়েছে তড়াগ। রানি, যখন তোমার উপচে ঝরার বয়স―এই ভ্যাড়ার শহরে পিতা কখনো রাজহাঁসের সঙ্গ নেননি, পোশাকেরও নয়। কথকতার ফাঁকে
তোমাদের জানানো ভালো, পোশাকবর্ণের ক্ষুধা জগতের কাউকে পাত্তা নাও দিতে পারে। কারণ একটাই, আমরা সকলে পোশাকবংশের গর্বিত সন্তান।
⭕ দেহ+আত্মা=অপরের গল্পে ব্যাখ্যেয় ⭕
মেশিন থেকে বেরোলো যা, পরে বলি।
গল্পটা এই, প্রেমে জমে গেলাম। বরফ নামে ডাকল কয়েকমাত্রা কিউসেক। বোলতা এসে পেরেক বসাল, ঘটল ঝিরিফলার ব্যবহার। মধুমিতা সিনেমা হল রানির পোশাক ভেবে হ্যাঙারে টাঙালো ‘প্রবেশ রক্ষিত’ আর কাকাতুয়া দেখে সটকে গেল শেষ স্তবকে।
চলন্তিকা, মাংসক্ষেতে ক’ ডজন রাতের আনাগোনা? পাথরপঙক্তিবিষয়ক বৈভব টুকেছ নিশ্চয়, উপপাদ্য করে প্রমাণ লেখো। আজ যে পাহাড়ে যেতে ইচ্ছে পরস্পরের, পরিণতির পোস্টে ঢুকে গেল এহেন ইচ্ছেরফা। ধ্যাত্তারি! বিবাহফলকের দিকে টলে যাওয়া গোল কেন আমাদের? এমন চিংড়িঝরনা নিয়ে আজ বরং ইস্তফা যাই।
মারেফত দেখলাম, শার্ট উড়ে গেল। লাল হলো বনটিয়া। পেছন পেছন পেঁপে রঙের হরবোলা নীল জখমের ফুর্তিতে বসল সংসারে। একজন ফলবান্ধব জিহ্বার প্রসঙ্গ তুলে লিখল, ‘মাননীয় পাঠক। যন্ত্র তোমার পিতৃভাষা। হেমন্ত এলেই সর্দি হয় সবার। কেন?’
পায়ের তলার ছেঁড়াচটি, বলা হলো না, দাসখত ছিটাও, স্পিডি। সেলাইমশাই গো, জিপার খুলে কমোড ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে চেয়ে দেহ-শরীর ঝপ্পাত। ওগো ইঁদারা, এবার বলো, প্রাণ বলে কী আছে আমাদের?
মেশিন ইউনিট কার্তুজসহ শরীর আহ্বান করল, তখন আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দ্রিম দ্রিম... দ্রিম দ্রিম... হাসির ঘাগরা ফোটাচ্ছিলাম।
⭕ প্রস্তাবনা ⭕
চাকা। শরীর। রক্ত। ভাবতে আমার ডোরাকাটা লাগে। জেব্রাক্রসিং খেলতে খেলতে শিল্পকলায় যাচ্ছিল এক মেয়ে। নাম প্রকাশ্য : নূপুর। ফণি করা চুল। মেঘ, বিদ্যুৎ আর রক্তজবা-হুইশলে ভরা অশনি। মুহূর্তে বেজে উঠল ঘণ্টি। ছিটকে গেল নূপুর। ঝরল রক্ত। শরীরজুড়ে বাজতে লাগল সজন; প্রথম স্তবকে ব্যবহার হলো অচিন ঝিরিঝিরি, অন্তরায় ছায়াসঙ্গীত। হৃদিমাধ্যম, এমন মুখোমুখি দুপুরের শিরোনাম আহাজারি হলে কেমন হয়?
⭕ আয়ত ⭕
গোলের কিনারে যা থাকে, দাঁড়ানোর মতো, বলা হয় পরিসর। এখান থেকে ফেলা যায় জাল, রাক্ষস-খনি উঠে আসে না কেন? মাছিকন্যা, তোমার জন্মের দায় তুমি নিয়ে নাও। ধরা যাক, পাখা খুলে দেওয়ার পর তোমার গতি মচকে গেল। এবার বিন্দুদল এসে ফুলস্ব ফল ফাটল না, ¯স্রোতস্বরে ফুটে গেল। আকাশ মাখল ঝোল। নভোম-ল ভাবছিল তখন ভাঙা চাকা নিয়ে ভ্রমণ না হলেও আখ্যানখণ্ডের তালুপত্রে বিছানো যায় ঘামের ফসিল-যেখানে একজন তন্ত্রী বাতাস নিয়ন্ত্রণ করে আর পতাকা রোপণ করে রেহেলপাঠের প্রজাপতি।
⭕ প্রচ- ⭕
ভোজালি ঢুকে ভাবছি, শরীর বেঁচে আছে তো! যদি আঁচ পেতাম, হাতপালা নাড়াচ্ছে পৃথিবী। কখনো আমাকেও বুলিয়ে দিচ্ছে পাথর। তবু ঠান্ডা ব্যবহারে বুঝি, মানুষ আমাকে নিয়ে পার্কে চলে গেল। খুব ঘেঁষে এলোমেলো করে দিল দেহের গামা, বিটা। শুধু দেখা যায় বিচিত্রবাহু ছুটছে। হাতসমস্ত যেন কার অধিকার ছিন্ন হয়ে তারা তারা আকাশে আমাদের ইশারা করছে। প্রবর মাংসে যেহেতু ঘাপটি করে আছি। শিরিশিরি কাঁপছি। অপর শরীরের বেলকনিতে এসো, আঙুর ছুড়ে দাও। আমাদের রক্তের যা কিছু তুচ্ছ সব উগ্রতপাকে দিই। হোক কম্পাঙ্ক, হোক বজ্রতুর্য, হোক সিপাহী-গৌরব।
⭕ মর্গকথা ⭕
যেখানে দাঁড়াবার দরকার, সেখানে তুমি কেন? একটা রবাহূত দাড়াস এখানে কপি পেস্ট আছে বলে আজও নদী বয়ে যায়, ভাবনার ভেতরে এসে জনবহুল হয় জলৌকার পা; অনুকম্পা দোলে। কার্গো তুলে নিতে চায় জনকথা, তোমার-আমার সকল আলফা। শ্রমী হে, গ্রন্থসকল এই পর্বে এসে পার্থ হয়ে যাক; পেশিগুলো পড়ে থাক দুধভাত, কথাভাত আর ক্রেনশুরের নিহিত দৈর্ঘ্য।
⭕ প্রাণচিত্র, চুমুবন্দনা ⭕
১.
মালভূমি আর মরুভূমির মধ্যে চুমুর সম্পর্ক আছে কী? থাকলে আকাশ জালটা মিত্রবাচক ভাববেন না কেন? আজ যারা স্রোতের বিশেষ্য টুকে নিয়ে নামকরণ করেছেন বাদলদিন আর সহনামের সঙ্গ প্রতিলিপি করে ছাতাযাপনের ঋতুকে ডাকছেন বর্ষা! এমন গর্ব অথবা উৎসবের নিধানপত্রে সমান রোদ লেখা হলো।
২.
আপনার আশ্রয়ের নিচে ভাষা প্রকাশের স্বাধীনতা দেননি যেহেতু; চলুন, তনূদ্ভূত মহিমায় যাওয়া যাক। কয়েকছত্র কৃষ্ণরাধা হোক। পরমের তুঙ্গে উঠে বিকাশ মুদ্রা ছেপে স্থিরচিত্র করে উড়িয়ে দিই সাহস, টগবগে ঘুড়ি। সমুদ্রেও বেড়ে যাবে প্রাণসকলের জীবনমান, আয়ু। সবার যোগমাধ্যম হবে তুমি-আমি, আমি-তুমি।
⭕ আয়না। মুখ। তরমুজ। ⭕
দুর্দান্ত দুপুরের কিনারে একটা মানুষ রিভিউ করছে পাখি। কাউকে পর্যাপ্ত পেতে না পারার গল্প শোনাচ্ছি সিনে-আহত, তোমাকে। এই মুহূর্তে যন্ত্রণার বাবাকে করতলে দেখতে পৈশাচিক ইচ্ছে আমার। কসাই থেকে ছিনিয়ে আনা হৃদ্খ- ধরিয়ে দেওয়া হলো অতিরঞ্জন বরাবর। আয়না ধরা হোক মুখ অব্দি। কোনো যৌন চলবে না।
ফল্গুনীসূচক যাই মনে ধরুন, উড়ে যাওয়াকে বলি, মানুষের দিকে নয়, তাকাও জলের দিকে। অভিধানে ডোডো হয়ে যাওয়া একটি অক্ষর সায়ন্তনী মেজাজে বুকজুড়ে চাহিদা করছে উপাখ্যান। জিভ চালাচ্ছি আমি, তুমি ফালি করছ নির্ভরতা। ধ্যানী ঝুমঝুম যেকোনো প্রাণীর মতো মুখ মুখস্থ করছে আয়নায়। ফরসা হচ্ছে আমাদের সকল নিঝুম।
⭕ যতিচিহ্ন বা দেহমন কাবাডি ⭕
এখন
প্রচারণার প্রসঙ্গ এলে গুপ্ত পাখার কাঠামো মনে পড়বে তোমার। প্রত্যন্ত হয়ে আসে এমন জায়মান কোনো প্রবাহবাসরে ফুটে উঠবার কথা নয়। তবু, ভাবো, জাহাজ নিভে যাচ্ছে। তুমি প্রচ- ডুবুরি। বলক কেবল ঢেউয়ে। অথচ, অপর ডানায় ট্যাটু আঁকা দেখছিলে অবিচল। কেউ বলল হ্যাঁ যে, তুমি পুষ্পিত ট্যাটন, জবেদা খাতায় প্রখ্যাত হাবলা।
এবার
উরুধ্বনি ব্যবহার হলো কোনো কানাগলিতে। তুমি কলোনির সন্তান। দিনকে দিন ধূলি আর বাইক উড়াও। গোল দেখলে সুডৌল বলার বেকসুর সাহস রাখো। মাথায় ভোগাস মেখে স্ট্যাম্প-ব্যাট-বল-গ্লাভস হাতে যাচ্ছিলে হকিস্টিকে। দেহ ও মনে ছিল কাবাডি কাবাডি যতিচিহ্ন।
ফলে
সংস্কারপন্থি এক গানের খাতা হরদম বলল : মানুষ খসে গেলে ঝুলে থাকে অন্তরায়, অবরোহীতে। প্রবীণতম জলাশয়ের কানে ফেলে তার ব্যক্ত ললিপপ। ঈশপ, ঈশপ নামে ডাকে সেই ঢ্যান্ঢনকে। এসবের বাইরে যারা বিবাহমঙ্গলে দাঁড়ায় প্রজাপতির দোহাই নিয়ে। নৃবিজ্ঞান পাঠের অনুরোধ রইল সবার সমীপে।