আনম রফিকুর রশীদের কবিতাগুচ্ছ
আনম রফিকুর রশীদের কবিতাগুচ্ছ

সমুদ্রে

তোমাকে আজ সমুদ্রে নিয়ে যাব, যদি যেতে না চাও জোর করে নেব।
চার দেয়ালের ভেতর থাকতে থাকতে কুনোব্যাঙ হয়ে গেছ,
তোমার কূপমণ্ডূক মানসিকতা সাগরের বিশালতায় বিসর্জন দেব

সমুদ্রের গর্জন বোঝে না সর্বজন, যে বোঝে তার কথা অবুঝ মানুষ বোঝে না,
আড়িপাতা নারী, কান কথায় মন ভারি, সন্দেহের বেড়াজালে বিচরণ।
জোয়ারের স্রোত টানছে আমাকে, আজ তোমাকেও নিয়ে যাব সমুদ্রের কাছে।
মানব হাতের মতো সবারে বক্ষে জড়ায় ঢেউ, নির্বাসিত হয় না কেউ।
আমার সমুদ্ররূপ দেখে তুমি হিংসার আগুনে জ্বলো; আমি কেমনে ফিরাই তাদের, যারা ভালোবাসার অর্ঘ্য নিয়ে আসে।
কাউকে ফিরিয়ে দেয়ার পাঠ আমি পাইনি সমুদ্রের কাছে

অন্ধকার মহলে বন্দি মহিলা, তোমাকে আলোর পথে ফেরানোর অধিকার নিশ্চয় আলোক যাত্রীর আছে,
যদি সানন্দে না যাও, জ্ঞানপাপী নারীবাদীর নারী নির্যাতনের অভিযোগ রটে পাছে

এসো, সারি সারি সবুজ ছাতার ছায়ার নিচে বসি,
দেখো, চোখ বন্ধ করে দেখো, ডলফিন আর কুকুরের রোজরোজ চুমাচুমি,
এই দৃশ্য অভিসারের নয়, নয় অনৈতিক কিছু,
কুকুরটা জাহাজ থেকে পড়ে গেলে ডলফিন বাঁচিয়েছিল তারে,
সেদিন থেকে কৃতজ্ঞ কুকুরের এই স্বর্গীয় প্রতিদান
টিফিন আওয়ারে প্রতিদিন ভাগ বসাতাম হোসনার টিফিন বক্সে,
তার মেয়ের বিয়েতে গিফট দিয়েছি বলে ভাত খাওনি তিনবেলা,
এত সংকীর্ণ মানসিকতা! মানুষ হওয়ার কথা দূরে থাক, কুকুর আর ডলফিনও হতে পারলে না!

নামো, সাগরে নামো, চোখের জলের মতো সাগরের জলও নোনা,
ফেলো, চোখের জল ফেলো, ধুয়ে যাক আমলনামার সব গোনাহ

সাধের দালান

মার্ হ্যামার, আরও জোরে মার্! চুরমার কর্ ছাদপিলার, এখানে রেললাইন হবে, এই জায়গা দখলে নেবে সরকার, কেনো জানা ছিল না শালার!

হাড্ডিসার বাবার ফুসফুসে ক্যান্সার, শক্তি নেই দাঁড়াবার, অদূরে বসে চোখ মুছে বারবার

মা আমার লক্ষী অপার দশ সন্তানের সংসার। সাধের দালান তার, নিমিষেই মিশিয়ে দিলো বুলড্রেজার। দেয়াল ভাঙ্গার শব্দে হারিয়ে যায় মায়ের চিৎকার

পড়শিরা এসে তালিয়া বাজায় কষে, " আয় আয় রেলগাড়ি ঝমাঝম।"
বেদম আঘাতে দমে দমে হুতাশন, "হিসাবে লম্বা ডিজিট বেহিসাবে কমিশন," সবাক স্বজন নির্বাক অধম

বধু

বধু আমার যষ্টিমধু, জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছপাকা কাঁঠাল
সারাগায়ে তীক্ষ্ণ কাঁটা, অন্তর জুড়ে লেগে থাকার আঠা

চাঁদের দেশে চাঁদের হাটে গোপন প্যাকে মুড়িয়ে রাখা সওদা সে,
সম্পদ নয়, সম্পত্তি নয়, তার চেয়ে আরও অনেক বেশি যে

দোষগুলো তার বৃষ্টির মতো ধুয়ে মুছে সাফ
গুণ যেনো তার চির অভিশাপ ফাঁদে বাঁধার প্যাঁচ,
হাত বেঁধেছে, মন বেঁধেছে, আমি তার ইন্দ্রজালে বন্দি লাশ,
ভিন সীমানার প্রতীক্ষার অভিসার আমারে টানে না আর

টাকার বউ

বউ যেনো জল, কখনও ফ্রিজের কখনও উনুনের;
জলের তাপমাত্রা বাড়ে আর কমে স্বামীর পকেটের অবস্থার উপর

বজ্রদগ্ধ মেঘ দূর রৌদ্রপথ হেঁটে এসে মশারি উল্টায়, জলের মধ্যে জল ফেলতে।
বউ নাক ডেকে ঘুমায়, শব্দ দূষণে মশা পলায়, উত্তেজিত মেঘ বৃষ্টি ঝরায় বালিশের কভারে

লাল ঠোঁটে লাল পালিশ মেখে রোজ রোজ মার্কেটিংয়ে যায় আলতা পায়ে রাঙা বউ,
বিলাসী কেনাকাটা, তবু খালি হয় না মানিব্যাগ, দিন দিন স্পর্ধা বাড়ে।
স্বামী বেচারা, চেয়ে চেয়ে দেখে, বউয়ের কাছে ভালোবাসার চেয়ে মাল পানির কদর বেশি,
বউ যেনো জল, যেদিকে টাকা সেদিকে গড়ায়, টাকা নেই, বউ নেই...

কেউ কেউ মরেনা

খুনিচক্র ভেবেছিল নিঃশেষ হবেন তিনি,
মারলেও কেউ কেউ মরে না, দেখলো বিশ্ব;
মুজিব, চিরঞ্জীব, খুনিরা পঁচে গলে নিঃস্ব

খুনিদের বুলেটের আওয়াজ শোনে যারা উল্লাস করেছিল, তারাও খুনি।
তারাও খুনি, খুনিদের যারা দেশবিদেশে পুনর্বাসন করেছিল

ছাপোষা, হুজুগে, অকৃতজ্ঞ ---আরো কতো বদনাম বাঙালির গায়ে,
তবে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তারা আজীবন অকৃপণ

ক্যাস্ট্রো, ম্যান্ডেলার মতো নেতারা মুজিবের মধ্যে দেখেছিলেন বিশ্ব মুক্তির তেজ,
সেতুর ফলকে, পার্কের ওয়ালে, এতবড় নামটা টাঙিয়ে করো অপমান!
বিশ্বপটে সোনালি বর্ণে লিখো শেখ মুজিবর রহমান

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান