কবি : আবদুল কাইউম
যখন বর্ণ মালা ডুবে যায়
ইংলিশ বোটে বাঙ্গালী পাল উড়ালে বর্ণমালা ডুবে যায় টেমসের জলে— ভাষা মিউট হয়ে গেলে সৃজনশীলতা পড়ে স্লো-পয়জনিংএর কবলে ৷ ডাবল ডেকেট ধরে রাজ হাতীর পীঠে যখন খ্যামটা তালে নাচে মুষিকদল অবিরত; তখন নায়ক বাংলার প্রথম চলচিত্র মুখও মুখোশ ছবিতে প্লে করে যায় ভাঁড়ের রোল ৷ তো...
সেলসম্যান হয়ে উঠলে সুপারস্টোরের বস কাউবয়ের হাতে উঠে আসে স্মার্টফোন; তা দেখে জিপসি'রা হয়ে উঠে শহুরে ভদ্দরলোক ৷
ফ্লাসবেক সিন্ড্রম
আজকাল কফির বৈয়ামের তলা থেকে উঁকি মারে মধ্যবিত্তদীর্ঘ্যশ্বাস আর চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যায়
ইংরিতের মুদিদোকান--
চান্না'টি'স্টলের মাটিরচুলায় পোড়ে হারুনের কৈশোর
আর আমি বাবার পকেটে হাতড়ে খুঁজি...
আমার ফেলে আসা আধুলীশৈশব ৷
স্মৃতিরদেয়াল বেয়ে উঠি হেলিকপ্টারব্রীজে যেখানে
পারভেজের গলার সাথে বাজে শহিদের মন্ধিরাঢোল,
চাঁদপোড়াজোছনায় ঝিলিক মারে প্যাকেটকরাস্বপ্ন-
আর দূরে কোথাও নাকডেকে ঘুমায় স্বপ্নচারীনী ৷
ইলেক্ট্রিককেটলের শব্দে ঘোর কেটে গেলে নিজেকে খুঁজে পাই কিচেনেরকর্ণারে দাঁড়িয়ে আছি কফির কাপ হাতে নিয়ে ৷
অদেখা হাসি
যাত্রা পালার নকল রাজার অট্টহাসি দেখে
ইচ্ছে হল আসল রাজার হাসি দেখি; তাই একদিন
মেঘের পহাড় পাড়ি দিয়ে এসে দাঁড়াই ট্রাফলগার স্কয়ারে;ঠিক গান্ধীজির স্ট্যাচুর পাশে
ওখান থেকে চেয়ে থাকি ওয়েস্টমিনিষ্টার আবি'র
মেইন ফটকের দিকে--
যখন রাজভোগ হয়;
রাজা আসেন রাজা যান কিন্তু কত বছর গত হল
মুখে এক চিলতে হাসি দেখিনি আজো--
তাই মনে পড়ে অকালে ঝরেপড়া ঘরজামাই
স্বপ্নার বাপের কথা, বোরোক্ষেতের কাঁদা মেখে
কোদাল হাতে যখন বাড়ী ফিরত মনে হত
আদিম মানুষ টাইম মেশিনে চড়ে চলে এসেছে ;
কখনো তার মুখে হাসি দেখিনি!
আসলে ঘরজামাইদের স্বপ্ল নেই,বেঁচে থাকা নেই,
তাঁদের পকেট নেই,তাঁদের খরচের হাতগুলো
ছোট হতে হতে হারিয়ে যায়;আর নিয়ন্ত্রিত
চিন্তাশক্তি বিকল হলে হাসির রেখা মিলিয়ে যায় ৷
আফসোস;
না রাজার হাসি দেখলাম না ঘর জামাইয়ের!
পরকিয়া
সিরিয়াল ভেঙ্গে খসে পড়ল নক্ষত্র; তাও আবার
চাঁদের সাথে পরকিয়ার দায় মাথায় নিয়ে
কৃষ্ণগহব্বরে হারিয়ে গেল নিমিষে--
পুরো সৌরজগত জুড়ে খবর চাউর হলে আত্মহত্যা
করে বসে চাঁদ; বেহুলার ভেলা মহাশূণ্যে ভাসলেও
এখন আর অমর প্রেমগাঁথা হয় না...
দু'দিন মিল্কিওয়েতে ভাইরাল হলেও নিরব এখন পরীস্থান,
নিন্দার ঝড়ে হারিয়ে গেল পরকিয়া এক উপাখ্যান ৷
শুদ্ধ মানুষ হতে চাই
শরীরে জ্বরাব্যাধির আক্রমনে নাকাল অবস্থা হলে
স্বয়ংক্রিয় ভাবে লোহিত সাগরের কেন্দ্র হতে ধেয়ে আসে রক্তে সুনামি আর তিন দিন তিন রাত তান্ডব চালিয়ে
ধুয়ে মুছে সাফ করে জীবানু--
এখন আমি নড়বড়ে খুঁটি,পাটি,চাল,চুলা মেরামত করছি
আর ভাবছি; এভাবে যদি হার্ডডিক্সে গেঁথে থাকা অশুভ
ময়লাগুলো ধুয়ে নিত তাহলে পুরো চিত্ত জুড়ে থাকত
স্রষ্টাও তাঁর সৃষ্টির জন্য শুধু ভালবাসা ভালবাসা আর
ভালবাসা...
আর আমি আবার শুদ্ধ মানুষ হয়ে উঠতাম আগের মত ৷
শেয়ালই ঠিকে থাকে
রাত যুবতী হলে নির্বোধের মত কপাল খুলে পড়তে বসি,হিসেব কষি, মেলে না;বেচারা কপাল!তার বদনাম অকারণ আসলে শেয়ালে ভরে গেছে বন ৷
ঘড়ির কাটা ঘুম মেপে দিলে টোস্টারেপোঁড়া স্বপ্ন
ব্রাউন ব্রেডে মাখিয়ে খেতে খেতে নাস্তার টেবিলে
হেড লাইন হয়ে ওঠে কুমির ও শেয়ালের গল্প ৷
শেয়াল সুযোগ পেলে সবকটি কুমিরছানা-
সাবার করে হায়; বোকা মানুষ অযথা'ই কপাল থাপরায়!
দিন শেষে শেয়াল'ই ঠিকে থাকে আর কুমির হারিয়ে যায় ৷
এখানেও মাঝি ক্লান্ত হয়
টেমসের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে রাত;
নিশাচর হয়ে জেগে আছে উবার মাঝি--
উইকেন্ডে ওয়েস্ট-এন্ডের ক্লাবগুলোতে পরীর মেলা বসে,
পিকাডেলি সার্কাসের বাতাসে উড়া মহারানীর মুকুটগুলো ধরতে ধরতেই ঠান্ডায় জমে যায় তাঁর রমন-সুখ আর রমনীর কষ্টের দুপুর ভিজে হিন্দি সিরিয়ালের রসে ৷
ভায়াভ্যানের স্টিয়ারিং হুইল ধরে ঘাটে ঘাটে নাও ভিরায় মনাই; এখানে কি নাই? সবি আছে শুধু নাই সেই সুখ--
হাওরের খোলা বাতাস আর ভাটিয়ালী গান...
তাইতো নর্থ লন্ডন পাড়ি দিয়ে নর্থ সার্কুলারে উঠে
ক্লান্ত দেহে মনে মনে বিড়বিড় করে-- 'মন মাঝি তোর
বৈটা নে-রে আমি আর বাইতে পারলাম না'...
ব্রিকলেন উপাখ্যান
একদা ভয়ের রাজ্য টিফিনে ভরে ব্রিকলেনের--
ফুটপাত দিয়ে হাঁটতো আমার পূর্ব-প্রজন্ম; তখন একদল
বর্নবাদী নিজেকে ঈশ্বরের একমাত্র প্রতিনিধি ভাবতো ৷
তাঁদের হাতের পঁচা ডিমের ঢিল আর মুখ থেকে ছূঁড়ে দেয়া
থুথু গায়েমেখে হন্তদন্ত হয়ে ফেক্টোরীতে ঢুকতো অগ্রজরা;
সেখানে লাইলিনের সাথে সেলাই করত বুরোখেতের আইল আর ঘরে ফিরে কয়লার ফায়ার প্লেইসে
হাত সেঁকে খুঁজত ফেলে আসা হেমন্ত ৷
বর্নবাদীরা নির্যাতনের মাত্রা অতিক্রম করে একদিন খুন করে আলতাব আলীকে-- বিদ্রোহে ফুঁসে উঠে সংখ্যালঘু জনপদ;নরুল,আব্দুল,হোসেনরা নেমে পড়ে প্রতিরোধ যূদ্ধে ৷
একদিন স্বাধীন করে ফেলে ব্রিকলেন; নতুন নাম হয় বাংলা টাউন,একছত্র আধিপত্য লাভ করে বাঙ্গালীরা,
ব্রিক লেন হয়ে উঠে এক চিলতে বাংলাদেশ; অতপরঃ পরাজিতরা সুকৌশলে ড্রাগ ঢুকিয়ে দেয় তরুন সমাজে আর ধ্বংশ হতে থাকে বিজয়ের অর্জন ৷
বর্তমানে বাংলা টাউনে সাদা কিংবা কালো কাউকেই
খুঁজে পাওয়া যায় না ঠিক'ই কিন্তু এখন বাঙ্গালী তরুণরা বাঙ্গালীর বুকে'ই চালাচ্ছে অবলীলায় ছুরি আর ক্রমশ বাংলাটাউনের নাম মুছে যাচ্ছে ব্রিকলেনের ওয়াল থেকে ৷
ঘুঘু'ই ফাঁদে পড়ে
বারবার ঘুঘু'ই ফাঁদে পড়ে; শিকারী--
একবারও না,তবুও বদনাম কেবল ঘুঘুর'ই হয় ৷
শিকারীরা শকুনের চোখদিয়ে ছয় মাসের পথ দেখে;
ঘুঘু দেখে শুধু একমুঠো ধান ৷
শিকারী হাতীর দাঁতের মত শুধু বাহিরেরটা দেখায়;
কূৎসিত কালোদাঁত ভেতরেই থাকে যা দিয়ে চাবায়!
সব সময় নিরীহ ঘুঘুগুলো'ই শিকারীর শিকার হয়,
তাই ঘুঘুরা একদিন হারিয়ে যাবে এটাতো নিশ্চয়;
সেদিন শিকারী শিকারীকে ধরবে পুরো জগতময় ৷