আলী আফজাল খান ।। পাঁচটি কবিতা
আলী আফজাল খান ।। পাঁচটি কবিতা

আঙুল

 

আঙুলে আংটি না আঙটা?

সময়ের পেয়ালা উঁচিয়ে

কালো ডানাগুলি জেল্লা ছড়ায়

করতলের ফ্রেমে এইসব দৃশ্যাবলী হত্যা বা আত্মহত্যারঃ

 

হাতকড়া- তিমিরঘেরা প্রহরে

কলস্বরা নদী ধাবমান রাতে

বজ্রকরতালি ভ্যাংচায় স্বরের সঙ্গী

চুশনি বানায় ইথার অবশ ...

 

হাতবোমা- কি বোর্ডে ঝড়

খালে ও নালায় চিৎকার, শীৎকার, অত্যাচার

লীয়মান স্বরে ঘূণিমুখর

ভূ-স্বর, বুনোষাঁড়, গোলাঘর, হ্রেষাধ্বনির গিটার ...

 

হাত খরচ- যৌবন ঘুঙুর

কাচের শহরের বিয়ারের পিঁপে

কুলফি-বরফ, ফিসফাস, স্বপ্ন শিখর

ছায়াধরা ফাঁদে সুনিল ঝালর ...

 

হাত কাঁপে- হর্ম্য মিনারে

হলাহল চুমুকে চুমুকে মদিরা পপলার

বিভোর স্বগত সংলাপ রাঙায় কাঁকর

অটল-অনড় ঘন্টার মতো কন্ঠস্বর ...

 

হাতে তৈরী- পোতাশ্রয়ে অভেদ্য বুনন

ঘূর্ণিমুখর বাষ্পতনুমুখ, উতল গর্জন

গর্তগুলোর রূপান্তর জাদুর লণ্ঠন

গায় ছায়াসঙ্গী পদধ্বনিভরা জাদুগান ...

 

হাত পাখা- জলছবির অ্যালবাম

মনোলোভা ঠান্ডা হীমের কল্পচিত্রমালা

বুনো অট্টরোলে মালগাড়ী

ছায়াধরা ফাঁদে বিবসনা জলপরী ...

 

হাত বই- আঙিনার কারাগার

হাঁপায় দিগন্তে পয়মন্ত রাত

নিয়তির চরকা ভয়ার্ত-বিমূঢ়

আগুন-রতির রাতে চৌকাঠে চক্কর ...

 

হাতড়ান- কুয়াশার কটিদেশ

মগ্ন নগ্নতায় বাৎস্যায়ন ফেনা

অনন্ত-ভূষিত এক তূণধারী

এফোঁড়-ওফোঁড় বসায় মুত্যুবাহী ছুরি ...

 

হাতে হাত- আতপ্ত সৈকত

সাঁকো ও সেতুর উড়ন্ত সুঁই

কায়া ও মায়ার আতশী কাঁচ

প্রীতি ও রতির মখমল চাঁদ ...

 

অনামিকায় প্রগলভ হাওয়া ঘিরে ধরে

হিংস্ পিরনহার আদিগন্ত সুতা

অ্যামবুশ উতল গর্জনের পূর্ণজোয়ারে

এঁটো অবশেষ শিয়রের শুকনো পাতা ...

 

তর্জনী- হিমডালের প্যাঁচা

গম্বুজের চূড়ায় বজ্র-চকিত কিংকোবরা

মনগহনের দীঘলতনুর ভাসন্ত ঘাঘরা

ঊর্ধ্বে ঊর্ধ্ব পাথর খোদাই তোপধ্বনির বাক্সপেটরা ...

 

মধ্যমায়- আলোর বসন্তের পাদটীকা

গভীরে গভীর শব্দবন্ধের সুড়ঙ্গ

সুতার গুটলি মেঘের ছায়ায় বিছায় বিষন্ন জাল

ঝিনঝিন বিবশে নীল চাবুক ও শিকল ...

 

স্নায়ুর প্রান্তে ঊর্ণনাভের ঢেউশীর্ষ

জানি সূচিমুখে বহ্নিতাপ

যদি ভালোবাসা থাকে ব্রহ্মান্ডে

আলিঙ্গনে চুম্বক আঙুলে আঙুলে

 

 

কবুতরটা গলার থলি কাঁপায়

 

গ্রানাইটের কার্পেটে র্যাম্পওয়াকে উদ্ধতগ্রীবা

কি গ্রেস কি চাহনি

মোশন নোশন কোথায় যাচ্ছে ধেয়ে?

 

শাওনে,শাওন্তে সঙ্গম থেকে সম্ভাবনা অবধি

শরীর ক্রমশ প্রলাপ

নূপুর ঝুমঝুমিয়ে নিকেশে

স্নায়ু থেকে স্নায়ুর প্রতিধ্বনি

 

ভাইব্রেশন তুলে গুরুরগুরুর করছে কবুতরী...

সমান সমান ব্যবধানে একের পর এক বাজি ফাটছে কোথাও

লাইট জ্বলে ওঠে মাঝগাঙে

এ আমার অভ্যন্তরস্থ ঠেক, গল্প বলার শ্বাস একটুখানি

 

আগুনে আঁচলাল মুখের জানি প্রত্যয়, পথ ও প্রচ্ছায়া

স্লেটধূসর হাসির উন্মোচন

সুগন্ধী হাওয়ার ঘূর্ণি নাকবরাবর এসে

সদ্য আওয়াজ তুলে উদগ্রীব উঁকিতে

নিজের দিকে গড়ান নতুন গ্রানাইট কার্পেটেে

 

গল্প রেণু হয়ে গেল গোল ঘিরে থাকা বাতাস

এত ধাবমান, এত বেগ মুহূর্ত থেকে পরবর্তী মুহুর্তে

ডানা ঝাপটে কান হাওয়া করে দিয়ে গেল এইমাত্র

 

 

কাশ, আমার বিষাদ মাস্তান

 

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি

সাদা কাশ

আর শরৎ শরৎ

একটা শুকনো পাতার সাথে

ধুলো মথিয়ে কয়েক পা অন্ধকার

 

যখন সবকিছু অগোছালো

এই বিছানায় - কথাগুলো । অন্তর । জীবন ।

 

ভালবাসা অন্ধ আর ডানা দিয়ে আঁকা

লন্ঠনের প্রভূত বর্ণ আর বাধা না দেখে বাঁচানোর জন্য

তোমাকে ভাবলেই পসরা সাজায় চাদের চুড়ি-ফিতে

আর দিনগুলি তোমার স্বপ্নের স্বপ্নে দেখি - অনাঘ্রাত ক্যামেলিয়া

 

একটা শরৎ গাথা

মাঝে মাঝে কলকল মতো

আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস

আর মাঝে মাঝে বাতাস

 

অনেক উঁচুতে উড়ে যাই মুঠো ফুড়ে এবং

মাঝে মাঝে খুব বেশি হামাগুড়ি দেই

 

মনে হয় তুমি যেন আমাকে ভীত মতো চাঁদ দেখতে পাও

মনো ঘুঙুর ঝরে যায়, ধারণে জিয়নে আলতা গড়িয়ে আসে

 

পথ যায় যায়... কোথায়?

গোলাপ চলে যায়... কোথায়?

এক ধূসর পথে আমি যাই...

কোথায় শরৎ? কোথায় পাখি আর ফুল?

 

অসংখ্য হৃদয় বাতাস

আমাদের নিরবতার প্রহারে

পক্ষাঘাতে চুপ রক্তস্রাব

দুর্গ শরীরে ভিজে ওঠে ডাকের খোয়াব

 

মনে আছে কি স্নায়েছেড়া দুকূল?

কাদামাটি ঘর, ঠান্ডা আদর আর লাঙলের স্বভাব?

 

তোমার ভিতরে অপেক্ষারত রক্তের নক্ষত্রবেগ

- শ্রোতালী রুখে আঙুলের দাগ, আহত বিষাদ

 

তবু তোমার স্বপ্ন থেকে জেগে উঠি এবং

তাদের সাথে সারা দিনের জন্য খেলা

খোলা বুকে চাদ - এক নিটোল আকার

অথবা যে কোনো গুহামুখ থেকে গুনগুন গুন টানে উঠে আসা আওয়াজ

 

 

 

চুল

তুমি জানতে তোমার চুল আমার কতটা প্রিয়

ওখানে পানকৌড়ির ডুঁবসাঁতারে খুন হয়েছে কত প্রহর

সিল্কের সিঁথির উপর নিঃশ্বাস ও নৈঃশদ্য

ওখানে ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল, নবান্ন মৌসুম

 

যাপনের দুর্গম ঢাল, হ্রদ ও বুনোসন্ত্রাস

ওখানে নির্জনতার তালশাঁস, কোশা নাওয়ের আলপথ

 

সুঘ্রাণে প্লাবিত তন্তুর অলিগলি, আমৌন আশ্রয়

ওখানে বুদ্ধমূর্তি, ঝিঁঝিপোকার গান, গোপন খাতা

 

কত রাত দিয়েছে বুকভর্তি এলাচ, শিমুলের বালিশ

ওখানে আদরের লাঙল চষা, উড়ন্ত মিনার

 

ওই কেরাটিনের জ্যামিতি প্রণয়ের সিম্ফোনি

চোখ গুঁজে দেয়ার একমাত্র ফুলদানি

 

খুব বেশি কি, একগোছা চুল ছিল চাওয়া শুধু

চিরুনি থেকে জমানো ভালোবাসা, পলিমাটির সৌরভ কৌটা

জানো চুল-ভুল-হুল ভ্রমণ?

খাঁ খাঁ পথে খর-দরজাল শিঙায় দিয়েছে হাঁক

টানেলে জমছে ফাংগাস কর্ষিত ছায়াপথে

হেয়ারড্রেসার নিউ স্টাইলে কাটছে ব্রিজ ও সোনালী আঁশ- অথৈ অতল নাড়ার

 

শুনিনি আজও ‘ তোমার বুকের এই ঘন চুলের আন্ধার আমার ’

 

লিবিডো সেন্সর

 

শুধুমাত্র নীরবতার সুর সেলাই নিখুঁত হয় চোদনা

ঢেঁকিরে বুঝাব কত নিত্য যে ধান ভানে?

চোখাচোখি ফ্ল্যাস ব্যাকের ফিল্ম রোল

হয়তো কানে ফিস ফিস ফিস করা অশ

অথবা হয়তো পার্পল ঠোঁটে একটু ব্রাশ

মধু এবং জলপাইয়ের মতো স্বাদ স্বাদ

 

পা এবং পাছায় ট্যাটু করা পোশাকে খড়ি নড়ে

অথবা যে বুকের দুধে বিদ্যুতের এনিগমা

আরেকটু নাইট্রোজেন, কার্বন এবং হাইড্রোজেন ঊষের উসকানি

অথবা আমিষের সাথে এনজাইমের বাটিক প্রিন্টের কারুকাজ

 

কিভাবে ব্লাউজে খুলে হায়ারোগ্লিফিক তৈরি করতে হয় বলো

কিভাবে চোখ খুলে বাতাসের মতো হাঁটতে হয় বলো

 

কিভাবে ভোদার ভোঁদড় জালে

নো ম্যানস্ ল্যান্ডে ঠোঁট এবং চোখের আমিষের লা লাই

 

দাঁতের শ্বাপদ কামড়ে কামড়ে ছেনে আসে শস্যবতী শরীর

সেলাই সেলাই উৎসব

কি ভাবে ট্যাবু?

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান