আলী এহসান এর গুচ্ছকবিতা
আলী এহসান এর গুচ্ছকবিতা

কবি : আলী এহসান


বন্ধু

যতো পারো বাতাসকে উসকে দাও! বয়ে যাক পাগলা ঝড়। কেঁপে উঠুক ব্রমাণ্ড। উপড়ে যাক গাছ। ভেঙে পড়ুক ডালপালা। উড়ে যাক সবকিছু!
তারপর?
তারপর আবার কি?
বস্তির বাড়ি ঘরগুলানও তছনছ অইয়্যা যাইবো। গরিব মানুষগুলি যাইবো কই?
জাহান্নামে! দ্যাখোনি বস্তি পুড়িয়ে কেমন গড়ে উঠেছে বহুতলভবন। শপিংমল। কার কি হলো কেউ মনে রাখে না। প্রথম একটু চেঁচামেচি। মিডিয়ার দৌড়-ঝাঁপ। তারপ সব শুনশান। তাছাড়া আমাদের হাতেইতো বেশ ক'টা মিডিয়ার রশি। বাতাসে আমরাও সুড়কি দিমু। ঘুড়িকে ডানে-বাম, উপর-নিচে খেলামু। এক্কেবারে টগবগে বেশ্যারর মতো। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে শেষমেষ সামলে নেবো অটোমেটিক! তখন দেখবে ওস্তাদি বলে কাকে?

দেখতাছিতো সবকিছুই! ছিলাতো জাহাজঘাটের কুলি! লুটপাটের মই বাইয়্যা অহন গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রির মাথা। তোমার যা রাক্ষুইস্যা ক্ষিধা! একদিন না জানি গিল্লা ফালাও পুরা দেশটাই। অথবা নিজেই চইল্যা যাইবা যমের ভোগে।

বন্ধুর মুখে বিচিত্র অভিব্যক্তি। ঠোঁটে খেলা করে রহস্যের হাসি।

মেধা



আছে কোথাও এবং সেটা ভালো করেই জানো তুমি।
দৃশ্যে-অদৃশ্যের খেলাতো নয়!। ;
তবে কি আত্মগোপনে।
মোটেও তা নয়। আছে প্রকাশ্যেই।
বলো না কোথায়?
শহরের ভীড়ে ঠিকানা বিহীন।
তাও কি হয়? রাস্তার নাম, ফ্লাট নাম্বার। বস্তি-ফুটপাত- কোথাও না কোথাওতো হবে?
ও নিতান্তই ভ্রাম্যমান। ভ্যানে করে সবজি বিক্রি পেশা। রাতের ঘুম ভ্যানেই। তবে কোথায় কখন পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চিত নয়।
সারাদিন নানা গলি-ঘুপচি চষে বেড়ায়।
অমন ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট...
মাস্টার্সের সার্টিফিকেটতো আর খাবার দেবে না! গ্রামে মা-বাবাকেও দেখতে হয়।
ওকে যে আমার খুব দরকার।
কেনো?
ইউরোপে স্কলারশীপ, সময়ও কম।
তাই বলো! বিদেশে মেধার কদর আছে।
এখন কি করি?
ভোরে শ্যামবাজারে ঢু মারতে পারো। মাল কিনতে আসবে অবশ্যই।
শেষ চেষ্টা করতে হবে অবশ্যই, দেখি...

পাখির ছদ্মবেশে কে তুমি?

ছোট্ট এক অচেনা পাখি। শরীরের চেয়ে লেজটা দ্বিগুণ। লম্বা সরু ঠোঁট। তবে মৌটুসি নয়।
ধুসর রঙ। অথবা বাদামী। হালকা খয়েরির মিশেল।
সকাল থেকে ডেকে ডেকে অস্থির।
বারবার উড়ে উড়ে আসছে বারান্দার বেসিনের আয়নার সামনে।
কথা বলছে প্রতিবিম্বের সাথে। ওর কণ্ঠে যেনো বেরিয়ে আসার আহ্বান।
ও কি কাউকে খুঁজছে? হারিয়ে যাওয়া নিজের ভাই? বোন? খেলার সাথী? জোড়ার বন্ধু?

আজ ২৬ মার্চ। আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তাহলে? পাখিটি কী কোনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা?
মানুষের রূপ ছেড়ে নিয়েছে পাখির ছদ্মবেশ!
রাজারবাগের অকুতোভয় কোনো সৈনিক?
কৃষক, জেলে, মুচি-মেথর! কারখানার শ্রমিক, স্টেশনের মুটে, বস্তির মজুর। মোড়ের রিকশা চালক?
স্বপ্নের বাংলাদেশকে খুঁজে না পেয়ে ডাকছে তার ঘুমন্ত সহযোদ্ধাদের!
আর একটি যুদ্ধের জন্য!

অনেক চেষ্টা করেও অদক্ষ হাত ব্যর্থ হলো ছবি তুলতে।

আঁকাআঁকি

প্রজাপতিকে রঙ বিলাতে গিয়ে নিজেই বিবর্ণ
তোমার আঁচলে রঙধনু আঁকি প্রতিক্ষণ নানা রঙ
মনের আল্পনায় অভাব হয়না কোনো
এভাবে জীবনও রাঙিয়ে তুলি সুখের গহনায়
আমরা কী নির্দষ্ট সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা? মোটেও না

কথার অদৃশ্য সুতো নিবিড় করে আমাদেরকে আরো
দায় দেনায় জড়াই না বলে নেই মান অভিমান
দাবি আবদার সবই হৃদয় আকাশে নক্ষত্র উদার
স্বপ্নের স্পোর উড়ে বেড়ায় হাজার বছর ধরে
একদিন অঙ্কুরিত হয় তোমার মাদুরে উঠোনে আমার
জেগে উঠি নতুনের আহ্বানে সময়কে নাড়িয়ে
ঢালি ফসলের ধারা তারা শুধু অবাক চেয়ে রয়
দুজনের পুর্ণসখ্যতায়।

নদীর বহতা


সূর্যের রঙ মাখে শেষবিকেলের মোহনা
পিঠেপিঠি ছাদ তুমি আর আমি
বাতাসে ছড়াই ইচ্ছেগুঁড়ো
অপ্রাপ্তির ইশারা

দখল হারিয়ে নদী এখোন অনেকটা দূর
বাঁধানো পাড়ে পথ হাঁটে যুগল কৈশোর
টুকরো কথা দুষ্টুহাসি গল্প শোনায়
ধুকপুকে নদী, নদীর ঢেউ
কচুরিপানা ডিঙি নৌকো
দোল খায় মাঝিমন ভাবনা যতো
গিমাশাক আলুরঝোল ডালেরবড়া

নদী আর বহতা নেই আটকে আছে স্থবির পাঁকে।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান