কবি : আসমা মতিন
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ:
কবিতা হাতে নির্জনে দাঁড়িয়ে , রৌদ্রছায়ার করতলে, মনোরত্ন , অমরাবতী, হরতনি ঘাট, হরিৎ প্রান্তরের মেয়ে।
যৌথ কবিতাগ্রন্থ: পঙক্তি স্বজন, প্রবাসী কবিদের নির্বাচিত প্রেমের কবিতা।
E-mail : asmamatin1984@gmail.com.গোলাপের প্রশ্ন
একটি
ফুল দিয়ে ছিলে কথাটি সত্য
এতেই
কি সব দায় দায়িত্বের অবসান?
পেরেক ঠুকে দিয়ে হাত পা এঁটে দিলে,
উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব,
গুরুতর চোট লাগা আহত ফুল।
কাঁটাতারেজড়িয়ে চিন্তন বৃক্ষে ফুটেছিলো
তৃষ্ণার্তফুল কেঁদে কেঁদে ঝরে পড়লো
তোমার হাত কেনোই বা চৈতন্য হারালো?
আহত গোলাপের প্রশ্ন!
ছোট্ট
পৃথিবীর মানুষ
আসমা
মতিন
এই
এখানে কোথায় আমি?
কার
সন্ধ্যায় হাঁটছি?
বৃষ্টির সন্ধ্যা,
আমার সন্ধেটা কোথায়?
সেখানেও কি বৃষ্টি ঝরছে?
আমি কে কোথায় আছি?
বৃষ্টি কি আমার হৃদয়েও ঝরছে?
কিছুই যেনো নেই,
কিছু কি ছিলনা মনে
কেবল কাচের চোখে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি!
আমার সন্ধে আর কত দূরে?
ওখানে কারা এখন বৃষ্টির শব্দ শুনে?
ওহ!
আমার যে আছে চোখ দুটো বহতা নদী।
মানুষগুলো হাত ধরাধরি করে কোথায় যায়?
ঘরে কি ফিরছে?
আমার ঘর কোথায়?
মনে পড়ছেনা যে!
ঘর আছে কী?
অনুভবে বসতি পৃথিবীর নিভৃত কোনও এক কোণে।
আলোকিত পৃথিবীর নারী
তোমার
হিরণ্ময় সময়ের তুমিই বরপুত্র সুদর্শন হে সিংহপুরুষ রাজপুত্রই তুমি
তবুও
জুলাইখা হবো না
প্রত্যাখ্যান?
হতে পারে অবাক হবো না,
তবে আমি লাইলীও হবো না,
আমি হার মানবো না,
কামদেব প্রেমে তোমার অসংখ্য রমণীর পোঁড়েছে শরীর
আমি রাধা নই
হতেও চাইনে,
শরীর পোঁড়াবো না মোটেই।
আমি সিজার আ্যান্টনির ক্লিওপেট্রাও নই,
বেহুলার প্রেমের বলিদান
সাতদিন সাতরাত উলঙ্গ নৃত।
আমি বেহুলা নই।
আমি শিরি রজকীনি জুলিয়েট হেলেন কিংবা নুরজাহান হবো কেন?
আমি এক প্রেমেময়ী,আলোকিত
পৃথিবীর নারী।
নিষ্ফলা কোলাহল
মস্তিষ্কের
ব্যাপকতা আকাশ সম!
মানুষ
কেনো এত কথা বলে?
চারিদিকে এত দেয়াল কেনো?
করণীয় কর্ম মস্তিষ্ক থেকেখসে খসে পড়ছে বেপথে
অর্থহীন শব্দরা পথের জঞ্জাল হয়ে উঠছে
বুনো লতাপাতার মতো।
সিড়িহীন আকাশের নিচে আমার নির্বাক খাতাটি
মেলি,
শব্দ দিতে চাই খাতা কথা বলবে!
মেলে যায় কান আরও বড় হয় আর শুনি
কর্কশ কোলাহল মানুষের মুখে মুখে যুদ্ধ লেগেই থাকে।
আমার চোট খাওয়া শব্দেরা কেঁদে উঠে,কিছুই লেখা হয়না আর চোখগুলো ও কেঁদে উঠে,
চারিদিকে নিষ্ফলা বেড়ে উঠছে আর কত ধর্য্য আর কত অপেক্ষা?
অথচ চোখে রাজ্যের যত ঘুম এখনও কিছুই যে লেখা হলোনা।
বিগত দিন
আমাকে
সেকেলেই বলতে পারো সেই আমার ভালো
মায়েরউঠোনে শিউলি মূলে আমার গল্প।
শিউলীর মূলে ইটের গুড়োর মসলা পাতি চডুইভাতির গল্প
আমার বাবার বাড়ির মেঠোপথ নিয়ে আমার গল্প
শহুরেপনায় যখন বাবার মন বসতোনা
যে পথ ধরে বাবা কোঁয়াশার ভেতর হাঁটতেন
বিদেশিবিলেপন মেখে তেজস্বী বাবা আমার সুগন্ধে ভাসতো পথের দু’কূল
আমাদের রং করা নৌকাটি নদীঘাটের সাথে
সখ্যতার দিনগুলো নিয়ে আমার গল্প
মায়ের দিত্বীয়উঠোনটায়অগ্রহায়ন আসতো
ধানক্ষেতে ও দুধ ধরতো দুধে দই এ মায়ের থালা
আজকাল মায়ের উঠোন দু’টোই খাঁ খাঁ শূনসান
বাবার টেপ রেকর্ড, হারানো
দিনের গান
কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে সব হারিয়ে গেছে
কেবল মসজিদের পাশেইশৈত্য মাটির সমাধি,আমার
বুকে এখনও বাজে বাবার প্রিয় গান।
বৃন্দাবনের কবুতর
তুমি
ছাড়াই এ কেমন ভোর
কেমন
বৃষ্টি কেমন খোলা হাওয়া,
তোমার প্রস্হানের পর তোমার নদী সমুদ্দরের বুক ফেটে একাকার।
তাহলে কি তাঁর কৈশোরে ভাসিয়ে দেয়া নৌকা গুলো
সমুদ্র তলে তলিয়ে গেছে?
তুমি যেতে না যেতেই মাটি ও বৃষ্টি কান্নায় ভেঙে পড়ার কথা বলতে
ইচ্ছে করে।
মাটির বুকেমুখ থুবড়ে কিছু লোক চিৎকার করছিলো
ও মাটি দোয়ার খোলো তোমার যে একটি রাজা ছিলো আজ রাজ্যে তোমাদের
রাজার শোকসভা,
প্রাসাদের কোষাগারে পাওয়া গেছেলাল টকটকে পাতায় লেপ্টে থাকামেহেকানন্দার জল,জলের
পাড়
মথুরা বৃন্দাবনের কতগুলো কবুতর।
এসব তোমার ঘরে রাখার জন্য ঈশ্বর আদেশ পাঠিয়েছেন
মাটি বুকটা গলিয়ে দিতেই দুয়ার খোলে গেলো।
ওসব রেখে গেলাম, মহাকালের
সিন্ধুকে,
ওগুলো সুরক্ষিত রেখো,
একদিন এ গচ্ছিত গুপ্তধন ফেরৎ করতে হবে তোমাকে।
লাবণ্যহাসি
এ
হাসি তোমার জন্য
হাসালে
তো তুমিই,
সে কারণেই প্রাণ খোলে হাসি
যে হাসি মুক্তা ঝরায়!
অরণ্যেরঘুটৄঘুটে অন্ধকারে
যেখানে হাহাকার বয়
যেখানে প্রকৃতি কেঁদে আকুল
সেখানে ও হাসাতে জানো
হাসিতে হই ব্যাকুল!
কখনওঅভিমানী বাঁকা চাঁদ
তখন ও হাসালে হাসতে হয়
তুমি ই তো হাসালে প্রিয় ।
হৈমন্তী ভালোবাসা
নয়নাভিরাম
অগ্রাহায়ণের সকাল শীত পড়তে শুরু
গাছে
গাছে ফুটেছে শিউলী বেলী চন্দ্রমল্লিকা
কামিনী গন্ধরাজ আরও কত কী,
শরৎ এ বেড়ে উঠা আউস আমনের এখন পরিণত বয়স
নবান্নের উৎসব হবে,
ক্ষীর পায়েস পিঠা -পুলি
মেলা বসবে,
নাগরদোলা,
চুড়ি খৈ মোয়ামুড়ি
নিখোঁজ প্রমিকের ফেরার পথে উথলা করো চোখ
নীলাদ্রীর কোলে স্বপ্নের ভীড়ে
চাওয়া পাওয়ার মায়াজালে,
খোঁজে তাকে জনশূন্য প্রান্তরে
আমন খেতে হলুদ গাঁদা চরাচরে।
ঘুম ভাঙ্গলে হঠাৎ দেখে
তার টুকটুকে লাল মেহেদী পরাআঙ্গুল ক‘টি
নিখোঁজ প্রেমিকেরই হাতের আশ্রয়ে ,
গৃহ ভরা শিউলী ঝরা দুযতি সুগন্ধ
সে কখন এলো?
নিশ্বাসের অতি কাছেইহৈমন্তী ভালোবাসা।
হলুদ রঙের পা
আমি
তোমার বিনয়টাকে বড্ড ভালোবাসি
নীরব
আঁখিজল আঁচলে লুকিয়ে রাখা
সেই ভালোবাসার দিনগুলো আজও ভুলিনি৷
তোমার দীর্ঘশ্বাস যে তোমারমতই গভীর,
আমি অন্ধকারে মিশে ছিলাম ভোরের অপেক্ষায়,
ভোর হতেই ফুল কুঁড়াতে গিয়েকান্না ভুলে যাবে।
সময় লাগামহীন পাগলা ঘোড়া,
আমরা টেনে ধরি তার সোনালী কেশর,
কোনও এক গোধূলি ক্ষণেআমায় ডেকে,সারা
বেলা
অকারণ ঝরালে কান্নার অঝোর শ্রাবণ।
তোমার নূপুর পরা হলুদ রঙের পা সিক্ত আঁখিকোল
আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখলো।
সেদিন আকাশ তোমারচিবুকে আবির ছুঁয়ে ছিলো
চিবুক ছুঁয়ে আমিও সকল ক্লান্তিভুলে ছিলাম।
সম্প্রীতির মিঠাই মন্ডা
ভোরের
অবগাহন করে কপালে লাল সূর্যটি উদিত হলে,
সিঁদুরের লতিকা আঁকা সাদা শাড়ির কূলে
তাঁর শাঁখায় তুলে রাখা অমিয় সুধা!
ক্ষীরের হ্রদে ডুবু ডুবু পাটিবলা!
মালপোয়া আর নারকেলের গোলা,
পার্বণের যত সুখ অন্তরে মিশিয়ে
মাসিমা থালায় দিতেন ঢেলে!
আজকাল সম্প্রীতির মিঠাই মন্ডা কাল কেউটেদের পেটে!
স্বর্গের দাওয়ায় বসে আমাদেরে তুমি কি
দেখতে পাও মাসিমা?
অনঘ ইচ্ছে
ট্রেনের
জানালায় উদাস মনে তাকিয়ে থাকতে ভালবাসি,
আকাশের
বুকে গোপন কথাগুলো জমা রাখতে ভালবাসি,
জোৎস্নার
সমুদ্দুরে হারিয়ে কবিতা লিখতে ভালবাসি,
রাতে নিশিতে আধারে বসে গল্প শোনাতে
ভালবাসি,
জীবন থেকে অজানাগুলো কে শিখতে ভালবাসি।
রেল লাইনের ধারে কুঁড়ে ঘর দেখে অনুশোচনা ভালবাসি,
মন্দলোকের নিন্দা কে ঘৃনা করে সংগ্রামী হতে ভালবাসি,
হৃদয়ে হাহাকার জাগলে চোখ দু'টো বুঝতে
ভালবাসি,
প্রতিটি অসম্পুর্ণ কাজে প্রকৃতির মত আক্ষেপ ছাড়তে ভালবাসি,
ঐদিগন্তে স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যেতে ভালবাসি।
শ্রেষ্ট কবিতা
শূন্যে
উড্ডীয়মান একটি দিগ-নির্দেশক তর্জনীর কারুকর্ম,
জামার
গতরে লেপন মেঘলা নিচোল,
সুবিন্দুতে
দাঁড়িয়ে উত্তাল হাত বসন্ত বয়ারে!
হাসি হাসি মুখ,
পর্যায়ক্রমে খুলে গেল সবগুলো জিঁঞ্জির!
পুবালী জীবনের উদ্দাম পঙক্তির বিন্যাসে অবমুক্তমন,
অবিরাম কবিতা পাঠ।
উত্তাল জনপদ পুরো জনগোষ্ঠী।
যুদ্ধ বিমানের আর্তনাদে চৌচির দুর্ভাগাদের শীর্ণ নীলাম্বর
পানাফুল মাথায় পরে বারুদ পারাপার
চারিদিকে ফসলের মৌ মৌ ঘ্রাণ
ফসলের শরীর বেয়ে বেয়ে নেমে আসে বিজয়ী সূর্যের প্রথম আলো!
অজস্র নগ্ন পা হেঁটে হেঁটে একাকার মিনারের উপকূলে
পাতায় পাতায় সূর্যেরা ঝুলে আসে
জলবায়ু আদর্শ গতিপথ ধরে এগুতে থাকে চারযুগের দিকে।
টুঙ্গিপাড়ার মৃত্তিকার দহলিজে আজও কবিকে নিয়ে আড্ডায় বসেন
আত্মার আত্মীয়গণ!
ময়দানের সেই কবিতাটিই ছিলো কবিরশ্রেষ্ট কবিতা।
হরতনি ঘাট
বুকের
নদীতে,
একটি
ফুল কখনও মধ্য ঢেউয়ে দুলছে,
কখনও
দিক ভুলছে,
দিগন্ত সূর্যাস্তে রক্তিম,
নিশীথে সে যে বিলাসী অনন্যা।
টলমলে চোখে তার
নিশুতি রাত করেচুম্বন,
যুবক ঈর্ষায় ভুগছি
জেগে থাকো ফুলদানিতে নাকি ফুলে?
কোন নামেই বা ডাকি
প্রাণও রাখা দায়!
রূপালী কপোলে কেশের আলিঙ্গন,
বিলাসী ঠোঁটে ঝুলে আছে মৌচাক,
রাতও খেলছে শেষ বিদায়ের খেলা।
জোছনা ও বাতাসের স্নিগ্ধাতার বিদায়!
ফুলদানি নাকি ফুল?
হরতনি ঘাটে দুলছে।