কবি: ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
নিজের মুখোমুখি
আমাকে নিয়েশোকগাথা লিখছি না,
অ্যাম্ফিথিয়েটারের যেখানটায় তুমি আরামে বসেছ,
দেখছ দৃশ্যাবলী, সে আনন্দ নষ্ট হোক চাই না আমি।
নিজেকে নিয়ে আর কী বলতে পারি!
কোথায় যাবো এ সায়াহ্ণে, তুমিই বা কোথায়?
দেখ কীভাবে কায়দা করে আমাকে নিয়ে ভাবাচ্ছি!
ধরে নিচ্ছি তুমি আমারই বয়েসী।
এতো কথা বলে চলেছি, তুমি স্তব্ধ কেন?
কী হয়েছে বলো তো?
ঝরাপাতারা কীভাবে শব্দ করে, মন দিয়ে শোন,
দেখ, আমার মুখ পালটে গেছে এতোদিনে,
পালটে গেছে চুল, তার রঙ,
এমনভাবে বসেছে মাথার ওপর,
যেন পরচুলা আর আমি ছদ্মবেশে আছি!
দৌড়েছ অনেকটা প্রৌঢ়, অবশিষ্ট জীবনটুকু
নিয়ে কী করবে তুমি? মর্মরিত জীবনের সুসময়, এসময়?
চলো আমিও তোমার পাশাপাশি খোলা মাঠে
অ্যাম্ফিথিয়েটারের গ্যালারিতে বসি; নয়ত
কোথায় যাবো? মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছে কিছু
গবাদি, তাঁদের টুংটাং শুনে পেছু নেবো নাকি?
আমরা
আমরা কোনদিন নিজেদের জানিনি!
বারবার তাকিয়েছি কাস্ত্রো লেনিন আর মাওয়ের দিকে,
দেখেছি কী কর্তাভজা দেশ!
এখন তো ভাবি নিজেদের খোঁজার দিন শেষ,
আমাদের উদ্ধার করে দেবে কোনও অ্যামেরিকা
অথবা কোনও ভগবান আকাশ থেকে নেমে আসবে
সুগন্ধি ফুলেল রথে; নয়ত আসবে কোনও নেতা
দেশকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে অতন্দ্র উন্নতির সংগ্রামে।
আমরা কোনদিন নিজেদের মতো কিছু ভাবিনি,
অন্যকে নকল করে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে আকাশে
বলেছি সেলাম হে অপার্থিব, আমাদের শক্তি দিও তুমি।
আমরা ভেবেছি সুপ্ত সিংহের মতো থাকব
নিজস্ব বিশ্রামে আর একে একে নধর পশুর
মতো শত্রুরা ঢুকে যাবে মুখের গহ্বরে।
আদ্যাশক্তি আজ হে মহামায়া!
হে মণিকুন্তলা, আভরণ আভূষণে শক্তিময়ী,
সাহস দাও প্রতিটি পদক্ষেপে;
প্রত্যেকটি অবিচার যেন রুখে দিতে পারি,
এই মন্ত্র দাও হে দেবতা, প্রতিটি মানুষ যেন
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মূল্যবোধে, শত্রুরা যেন ভয় পায়
এতোটুকু সামাজিক বিচ্যুতি ঘটাতে।
কী বলবে?
অনেকদিন
আমাদের বাসায় আসোনি তুমি, এতো অভিমান;
অনেকদিন
উপত্যকায় যাইনি আমরা, অভিমান পর্বতপ্রমান;
জলের
মধ্যে জমে আছে মায়া, বিকেলের হ্রদে ম্লান
ছায়া,
আওয়াজ করে উড়ে যায় পাখি, কিছু
পাতা ভেসে থাকে জলে,
ফল কালারের মায়া, যেন
রাইকিশোরীর ঠোঁটে মেটে লিপস্টিক।
এখনও
কি বলবে তুমি, তোমাকে ভালোবাসিনি কোনদিন?
এতোদিন
পরেও মনের মধ্যে আছো, একে কী বলবে তুমি!
অনন্ত
নক্ষত্র আজ আকাশে ফুটে আছে, ঠিক যেন ঘাসফুল
হাইওয়ে
জুড়ে; ব্লুবনেটের মায়া আজ আকাশ
মেখেছে শরীরে।
সবাই জানি
তোমাকে নয়, ঘেন্না করছি তোমার ঔদ্ধত্যকে,
তোমার স্নবারি তোমার অ্যাফেক্টেশন আর
আরোপিত সত্তাকে, নাকি হতাশার বহিঃপ্রকাশ এ!
আমরা তো সবাই জানি তুমি কতোটা কী,
কেন তবে প্রভাবিত করতে চাও অন্যভাবে?
এসব করো না শোনো, যতোটা পাবার এমনিই পাবে,
মুখ বেঁকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে মানুষের নিন্দে করে
বড় হতে পারবে কোনদিন?
দেখেছ কোন নিন্দুক আজ পর্যন্ত উঠেছে শিখরে?
কে তুমি
কার টেলিফোন বাজে এতো রাতে, নিদালি চোখে
খুঁজে পাচ্ছি না আগাপাস্তলা। হাতে উঠছে চশমার খাপ,
ছোট ডায়েরিটা, কে ডাকছ আমাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
বুম চিকা চিকা তারায় তারায় হাতছানি দিচ্ছ কে?
আমার রিংটোনে রূপোলী সঙ্গীত বাজাচ্ছ কে?
আমি লাল নিয়েছি সবুজ ছুঁয়েছি, দিও কিছু সাদা,
মাটির প্রলেপ দিও কিছু আমার অসমাপ্ত স্ট্যাচুটিতে!
যাবার আগে শেষ করেই ফেলব মহাকাব্যখানা;
কে ললনা পাতার পোষাকে এসেছ বড় কাছে,
সত্যি এসেছ নাকি কল্পনায় টেলিফোন বাজে!
কার টেলিফোন বাজে বড় আমেজে এ সরাইখানায়,
ভোর হলে দূর দেশে চলে যাব বলে
প্রস্তুত রেখেছি হ্যাঙ্গারে ঝটিতি সফরে,
রেখেছি আলগোছে সম্পূর্ণ এক বিমানবাহিনী আমি।
কে তুমি নারী এই অন্ধকারে, এই গভীর
একলা রাতে টেলিফোন ছেড়ে ডেকেছ আমায়
ভিডিও কলে! পাতার পোষাকে আলো পড়ে
হাজার সবুজ চকচক করে। এছাড়াও
মাথার ব্যান্ডটিতে, শোননি কথা, গুঁজে
রেখেছ বাজপাখির পালক,
তুমি কি নারী, নাকি এক চিরকালীন বালক?