এখন যা গল্প মনে হয় - শামীম আজাদ
এখন যা গল্প মনে হয়
বয়সটা ছিল যুদ্ধে যাবার। বয়সটা ছিল প্রেমে পড়ার।
কিন্তু
আমাদের দু’বন্ধুর কেউই মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। তাই পুরোটা যুদ্ধ সময়ে
ও যে যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই গেরিলা ভাই-বন্ধুদের নানান সংবাদ বহন করে,
তাদের গোলা বারুদ লুকিয়ে রেখে যুদ্ধে যুক্ত থেকেছি। ওরা অপারেশনের ফাঁকে
এলে গভীর রাতে খেতে দিয়েছি। ওপার বাংলা থেকে তাদের জেরক্স করা গোপন
ইশতেহার বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাস্তায় ও অবরুদ্ধ রেডিও ষ্টেশনে বিলি করেছি।
সুফিয়া খালার (কবি সুফিয়া কামালের) নির্দেশে চলেছি। মুক্তিযোদ্ধা
বন্ধুদের অবরুদ্ধ ও ভয়াবহ রেডিও ভবনে অনুষ্ঠান করার নাম করে ঘৃণ্য
পাকিস্তানী কলাবরেটরদের নাম ঠিকানা ও কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে সরিয়ে নিয়ে
এসেছি।
এসবই ছিল আমার আর
বাবলির একাত্তরের রণাঙ্গনে সরাসরি যোগ না দিতে পারার বিকল্প প্রজেক্ট।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যাদের সঙ্গে গোপন সংযোগ ছিল তাদের কাছ থেকে ও স্বাধীন
বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান শুনে শুনে আমরা দু’জন রানাঙ্গনের যোদ্ধা, বীরদের
প্রেমে পড়ে থাকি। সেইসব না দেখা বীরদের প্রতি অপার শ্রদ্ধার সঙ্গে
ভালবাসার নেকটারও জমা হতে থাকে । ওদের কোন ছবি হাতে আসে না। কারনা তা
তোলার কথা না, তাদের পরিচিতি দেবার কথা না। তা’ হলে সেই সূত্র ধরে
পাকিস্তানী সেনা বাহিনী তার বাড়িতে হানা দিয়ে মা-বাবাকে হত্যা করছে,
বোনকে করছে ধর্ষন, আর পুরো গ্রাম দিচ্ছে পুড়িয়ে। শহরে হলে রুমীর বাবা
শরিফ খালুর মত নিয়ে যাচ্ছে ধরে।
কিন্তু
আরাধনা বলে কথা!একদিন ভাইয়া গোপনে পাওয়া বিলেতের গার্ডিয়ান পত্রিকার
একটা পৃষ্ঠা হাতে ধরিয়ে ফিসফিস করে বলল, গেরিলা ! আমি বাথরুমে লুকিয়ে
ভাঁজকরা কাগজটা খুলে দেখি, মারে মা! কি সুন্দর! কি সুপুরুষ ! লম্বা
পেশিবহুল দেহ , ঘাড় অবধি ঝাঁকড়া চুল ও মুখভরা দাড়ি। জীর্ণ জিনস ও টি
শার্ট পরা, হাতে এসএলআর এবং ক্রিসক্রস করে বুকে ঝুলছে গুলির মালা। আধা
কলামের ছবি ও এক কলামের, ছোট্ট নিউজ। উপড়ে লেখা বাংলাদেশী ফ্রিডম ফাইটার।
আমিতো প্রায় ফিট।
আমাদের
সোবহান বাগ কলোনির ২/সি ফ্ল্যাটে তখন ফোন ছিল না। আমি দৌড়ে মৌড়ে পাশের
রীনাপা’দের ফ্ল্যাটে গিয়ে বাবলীকে ফোন করি। নানান সংকেতে বুঝাই কি দেখেছি।
কারণ তখন সরকারী অফিসারদের টেলিফোন ট্যাপ হত। তাই মুক্তিযোদ্ধা,
স্বাধীনতা, গেরিলা, মুজিবর রহমান এসব শব্দ উচ্চারণ করা যেত না। আমরা ততদিনে
বুলবুল(আব্দুর রহিম বুলবুল), জন, বাবু (আহসান নেওয়াজ), মনি দাদা (মনিরুল
হক) ও নাসিম (নাসিম সিদ্দিকি) কে দেখেছি । কিন্তু ওরাতো সব গেরিলা আর ভাই
বেরাদর ও বন্ধু। এ যে আমাদের স্বপ্নের নায়ক! আর মারে মা কি যে সুন্দর
দেখতে!
যুদ্ধের এক
পর্যায়ে আমি আর বাবলী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমরা ভেবেছিলাম যে মুক্তিযুদ্ধ
শুরু হয়েছে তা থামবে বহু বছর পর। ততদিনে আমাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য কত কি
করতে হবে! পাক আর্মিদের দ্বারা অত্যাচারিত হবো প্রতি পরিবার, কাউকে না
কাউকে হারাবো। আমাদের দেশের কোন রাস্তা ঘাট বাজার একুশের মিনার আস্ত থাকবে
না। সব লুট হয়ে যাবে এমন কি আমাদের দুজনের জীবন অনিশ্চিত। সুতরাং আমরা
আমাদের যথাসামান্যের উইল করে যার যার বাসার দেয়াল চিত্রের ফ্রেমের নিচে
আঠা দিয়ে রাখলাম। সে চলে গেল কুমিল্লা গ্রামের বাড়ী। ওর ফুপাত বোন ও
আমাদের বন্ধু আমেনা বেগম বকুল আগরতলা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিল।
আমার
বড় বোন, বুজান মহসীন হলের পেছনে এলিফেন্ট রোডে থাকতো। ২৫ মার্চের
প্রচণ্ড গোলাগুলি থেকে বেঁচে দু’টো যমজ পুত্র সন্তান শাকিল ও সাব্বিরকে
শিশু নিয়ে হেঁটে ২৬ মার্চ আমাদের সোবহান বাগের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিল। তার
স্বামী তখন বিলেতে ক্ষত এ্যাকাউন্টেন্সি পড়া শেষ করছেন। খালামনিরা
কোনক্রমে মুন্সিগঞজ থেকে কোন ক্রমে ঢাকা ফিরে নিরাপদ আস্তানা পাবার আগে এই
সোবহান বাগে খন্ড কালীন সময় থেকে গেছেন খালামনির পরিবার। যশোরে বাড়িঘর
লুটপাটের পর বড় মামার পরিবার। শফিক মামা আমার মার কাজিন। তিনি অণূর্ধ
ন’য়ের পাঁচ সন্তান ও মামী সহ ঢাকা ছেড়ে পালাবার মুখে তা প্রায় অসম্ভব
বলে ফিরে এসে বড় দু’মেয়ে স্বপ্না ও রত্না কে আল্লাহকে সাক্ষী করে
আম্মার হাতে সঁপে দিয়ে গেছেন। বাড়িভরা লোক আর লোক। দিনে আটারুটি ও রাতে
খিচুরি করার দায়িত্ব আমারই।
নভেম্বরে
আমার বয়স কুড়ি হল, যুদ্ধেরও রঙ হয়ে উঠলো সুপক্ব যবের মতন আর সীমিত
হয়ে এল আমাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা। আকাশ থেকে অনবরত বর্ষিত হচ্ছে গোলা।
সাইরেন বাজলেই কুটিমুটি স্বপ্না ও রত্না নিজেরাই দৌড়ে প্যাসেজে গিয়ে
দাঁড়ায়, কানে তুলো দেয়। মুশকিল হল এক রকম দেখতে যমজ দু’টোকে নিয়ে। কে
যে কাকে নিরাপদ স্থানে নিচ্ছে তা চেনা যায় না। তখন কেঁদেকুটে আল্লাহ
সাক্ষী রেখে বুজান, সাব্বিরকে আমার হাতে সঁপে দিয়ে বলেছিল, তুই যেদিকে
পালাবি ওকে নিয়ে পালাস। তুই বাঁচলে আমার বাচ্চাটাও বাঁচবেরে শামীম আর আমি
শাকিলকে নিয়ে বেঁচে থাকলে আল্লাহ একদিন নিশ্চয়ই আমাদের মিলাবেন।
অবশেষে
সো ডিসেম্বর সে বিজয় ঘরে এল। আমাদের দু’বন্ধুর মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও
কলেজগুলোর অনেকেই দলে দলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ঢাকায় এখানে সেখানে নানান
স্বেচ্ছা সেবায় যুক্ত হলাম । আমাদের ক-ত জন ফেরেনি। বার বার মনে পড়েছে
বাংলা বিভাগের সতীর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল শাহরিয়ার ও নজরুল
ইসলাম এর কথা। নজরুলের ছিল কোঁকড়া চুল ও টানা কাজল দেয়া তীক্ষ্ম চোখ আর
উচ্চ কণ্ঠ। আর শাহরিয়ার ছিল ভীষন নরম স্বভাবের, শ্যামলা রঙ আর ডাগর ডাগর
চোখ। মনে পড়ছে আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের কথা। রাজাকাররা হত্যা করেছে
তাঁদের। শহীদ মিনার পাক আর্মির গোলার আঘাতে চূর্ণ, জগন্নাথ হলের দেয়ালে
দেয়ালে তখনো শহীদের রক্তচিহ্ন শুকিয়ে কালো হয়ে আছে, রমনার কালী মন্দির
লুণ্ঠিত। তবু আমরা স্বপ্ন দেখি নতুন এক অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলার। কত
যে আশা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ও রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলামের। বঙ্গবন্ধু
ফিরে এলে তিনি দিক নির্দেশনা দেবেন। আমাদের ভাঙা ব্রীজ বাড়ি স্কুল পাওয়ার
ষ্টেশন নিজেরাই গড়ে তুলবো। এয়ার পোর্টের রানওয়ের সব ইটের টুকরো একটি
একটি করে তুলে বিদেশী প্লেন নামার ব্যবস্থা করবো। দরকার হলে ঘাস খেয়ে
বাঁচবো।
স্বেচ্ছা
সেবাকাজের জন্য খুব ভোরে স্নান সেরে নীল ঢাকাই শাড়ি পরে বাবলী আসতো।
উর্দুরোড থেকে রিক্সা করে রোকেয়া হলের সামনে। আর টাঙাইলে গা জড়িয়ে হল
থেকে নেমে এসেই রিক্সার পেছনে ফুল ছড়ানোর মত চুল ছড়িয়ে গান ধরতাম। আমার
সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আর্ট কলেজের সামনেটা যেতে না যেতেই
আমাদের গানে গলা মেলাতেন রিক্সা চালক। আমরা প্রথমে যেতাম হলি ফ্যামিলি
হাসপাতাল তারপর ঢাকা রেডিও ষ্টেশনে । যুদ্ধের কারনে রোগী ও হতাহতের সংখ্যা
বেড়েছে কিন্তু অভাব পড়েছে ডাক্তার ও নার্সের। একই অবস্থা রেডিওরও। সব
শিল্পী, সাংবাদিক, প্রযোজক, এমন কি পিওনদের সবাই ফিরে আসেননি। সেখানে
মুক্তিযুদ্ধ শেষে এসে হাল ধরেছেন কামাল লোহানী। আমরা দু’ই অস্থির তরুণী
সেখানে গিয়ে ফুটফরমাশ থেকে শুরু করে, চা বাই, স্ক্রিপ্ট লিখি, কোরাসের
শিল্পী শর্ট পড়লে গান গাই এমনকি তরুণদের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি। দেশ
গড়তে হবে না!
হলি
ফ্যামিলি হাসপাতালেই প্রথম দেখি রণাঙ্গনে যুদ্ধকরা এক মুক্তিযোদ্ধাকে ।
রেডিওর কাজ না হয় জানি, আগেও করেছি কিন্তু নার্সিং? আমাদের ছোট্ট একটা
ইন্ডাকশন দিলেন সাদা শাড়ির উপর বেল্ট বাঁধা মোটাসোটা গম্ভীর গলাধারী এক
মেট্রন। এই যে মেয়েরা এত ছটফট করবেনা তো। তোমরা শুধু ওয়ার্ডের রোগীদের
কফ-থুতুর পট ও ডাস্টবিন পরিষ্কার করবে আর বিছানা বানাবে। কেবিনের দিকে যাবে
না।
ওতেই আমাদের ছটফটানি
আরও বেড়ে গেল। তক্কে তক্কে থাকি কেবিন গুলোয় কি হচ্ছে!একদিনেই জেনে
গেলাম, সেখানে যুদ্ধাহত গেরিলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের রাখা হচ্ছে। তক্কে তক্কে
থেকে এবং একদিন সত্যি এসে পড়ি কাছাকাছি এক কেবিনে। এদিক ওদিক তাকিয়ে
পায়ের পাতায় ভর করে ফিসফিসিয়ে দরজায় পা দিয়েছি কি দেইনি অমনি ভেতর
থেকে কড়া গলায় এক হুংকার, হু’জ দ্যাট? আমার দুই কম্পমান কিট কিট করে পা
ঘষে ভেতরে ঢুকেই দেখি, ওমা এযে আমাদের স্বপ্নে দেখা, দি গার্ডিয়ানে ছাপা
হওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধার মতন একজন! কি রূপবান! ঘাড় অবধি চুল, গালে রুদ্রের
(রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ) মত দাড়ি। কি তীক্ষ্ণ চোখের চাওয়া। কিন্তু এ
কি অবস্থা তার! ব্যান্ডেজ বাঁধা এক পা ছাদ থেকে কপিকলে লাগানো যন্ত্রে
ঝুলছে। এক হাত গলায় বাধা। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ। স্প্লিনটার লাগা গালেও
গোলাপি টেইপ। ঘ্যাষঘ্যাষে গলার স্বর। তাই দিয়ে উচ্চস্বরে অনবরত শাপান্ত
করে চলেছেন বাংলাদেশের রাজাকার গুষ্ঠিকে। তার চোখ বন্ধ।
রেডিওতে
গিয়ে সবাইকে গর্ব ভরে বলি এ ঘটনা। রাতে ঘুম আসে না। গা শিউরে উঠে । পরদিন
দু’ বন্ধু আবার সুযোগ খুঁজে সাধারণ রোগীদের বিছানা-বালিশ পেতে, গল্পগুজব
করে, ওদের ব্রেকফার্স্ট এগিয়ে দিয়েই ছুট দিলাম কেবিনের দিকে। এদিন তিনি
অনেক শান্ত। রেডিও ষ্টেশনের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা জেনেই হুংকার দিয়ে
উঠলেন, হোয়ার ইজ দ্যাট নটোরিয়াস রীনা নাসের? আহমেদ কামাল? রাজাকারদের
দেখেই ছাড়বো। তারপর আমাদের হিরো ভাল করে আমাদের দিকে তাকালেন। হাসলেন।
গালে টোল পড়লো। আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আবারো মেট্রনের চোখে পরার আগে
বেরিয়ে এলাম। কিন্তু সকাল সকাল গিয়েই শুনি মোটা মেট্রন তলব পাঠিয়েছেন।
সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওয়ার্নিং দিলেন। আরেকবার কেবিনের দিকে গেলে আমাদেরে
সার্ভিস থেকে উইথড্র করা হবে। ওয়ার্ডে এসে শুনি গতকাল বিকেলে হুইল চেয়ার
ও একহাতে স্যালাইন স্ট্যান্ড সহ তিনি ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ড শামীম বাবলীকে
কে খুঁজে সবাইকে তটস্থ ও তোলপাড় করে গেছেন। তারপর একদিন, দু’দিন করে তিন
দিন পেরিয়ে গেলেও দেখি বুকের শূন্যে পাখির ঝাঁপানো বন্ধ হয়নি।
বাবলী
খুব নাজুক। রোদে হাঁটতে পারে না, পাখির মত একটু একটু খায়। অল্পেই জ্বর
হয়। সেদিন তার জ্বর। আমি একা গেছি। পরেছিলাম চাঁপা রঙের সূতি শাড়ি।হাতে
খালামনির দেয়া দু’গাছা চুড়ি। পায়ে রোকেয়া হলের সামনে থেকে কেনা
পাঁচটাকার দু’স্ট্রাইপের বেনীর মত ফ্ল্যাট চপ্পল। এতে একদম শব্দ হয় না।
কিন্তু কেবিনের কাছে যেতেই ভেতর থেকে বেশ কটি মিলিত কণ্ঠ ও আসবাব টানার
চাকার শব্দ শুনে দ্রুত প্রবেশ করে দেখি, শূন্য ঘর। তিনি নেই। দু’জন নার্স
নতুন রোগীর জন্য বিছানা বানাচ্ছেন। ক্লিনার বাথরুমে জল ছেড়েছে।
আজও সে সময়টার কথা মনে হলে মনে হয় এ নিশ্চয় এক গল্প। বুঝি, বয়সটা ছিল যুদ্ধে যাবার। বয়সটা ছিল প্রেমে পড়ার।।
( এখন এই ভয়াবহ করোনার সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে বার বার একাত্তরের কথা মনে
হয়। আমাদের টিকে থাকতে হবেই। একা একা এক দেহ থেকে আরেক দেহের দূরত্ব বজায়
রেখে কিন্তু ঐ সময়ের মত যুথবদ্ধ হয়ে। সেই সময়ের একতা কথা, কিন্তু সত্য
যে সবাই একসাথে কাজ করায় দূর্যোগ কেটে গিয়েছিল। )