কবি : এম এ মজিদ
ভেতরে জোনাক খোঁজে অন্ধকার
আঁধারের দেওয়ালে উল্কা দিয়ে নক্সা কাটি রাতভর
আকাশ উবুড় হয়ে মাটিতে পড়ার সময়
আমি মাথা পেতে দিলাম নির্দ্বিধায়
তারাগুলো ঝরতে থাকলো বৃষ্টির মতো
এক দুই তিন করে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তারা
কোনোটা আমার হাতে
কোনোটা আমার কাঁধে
কোনোটা আবার আঙুলের ডগায়
নাচতে থাকে ভরতনাট্যম
আমার শরীর জুড়ে তারার উত্তাপ আর উচ্ছ্বাস
তারা, তারা আর তারা
তারায় তারায় খচিত আমার দেহ
কখন যেনো টুপ করে খসে পড়লো চাঁদ
আমার চোখের ভেতরে
সেই থেকে আমি অন্ধ
এখন আমি চাঁদ ও তারাদের ভারে নুয়ে আছি
অথচ ভেতরে জোনাক খোঁজে অন্ধকার।
স্বৈরাচারী নক্ষত্র
হেয়ালি বাতাসে উড়ে যায় শিরিষের পাতা
উড়ে যায় আমের মুকুল, জাম ও জামরুল
অস্বীকার করে গাছের সান্নিধ্য
কেবল আমিই পারি না ছুঁড়ে ফেলতে
শুকিয়ে যাওয়া বকুলের ঘ্রাণ?
যে ঘ্রাণ তাড়িয়ে বেড়ায় অসম্পূর্ণ আমিকে
গাঙচিলের পায়ে শামুকের আত্মসমর্থন
রচনা করে নতুন উপাখ্যান
বদলে যায় চেঙ্গিস খানের ললাট লিখন
শুধু বদলায় না আমার আলপথ
খুঁটে খাওয়া চড়ুইয়ের মুখে
পালাতে থাকে খড়কুটোর নাভিঃশ্বাস
শাল-সেগুনের আস্তানায়
আর পালাতে থাকে আমার আস্তিনের আস্কারা
বেল পাতার ধমনি ধরে ধরে
তাল পাতার দূরত্ব আরও প্রসারিত হয়
ফাটা বাঙ্গির মতো
সারি সারি মাঠের প্রান্তর ছুঁয়ে
কার্তিকের কুয়াশা সখ্য গড়ে তোলে
সভ্যতার নতুন শীতকাল
পাহাড় ডিঙিয়ে পুবের আকাশে উঁকি দেয়
একটি স্বৈরাচারী নক্ষত্র
আর শাসাতে থাকে আমার না থাকা আমিকে
সেখানে এখন যেটুকু আছে সেটুকু শুধুই অভ্যাস।
অমাবস্যাদের রাজত্ব
তোমার দেওয়া নীলগুলো
ধীরে, খুব ধীরে মিশে গেছে নিকোটিনে
আর কবেই বসত গড়েছে ফুসফুসে
সেখানে এখন অমাবস্যাদের রাজত্ব
তবুও বাম অলিন্দের উঠোন জুড়ে
খুঁড়ে রেখেছি ছোট্ট এক পুকুর
প্রতিরাতেই যে পুকুরে
জল ও জোছনার খুনসুটি দেখতে আসে
লাল শাপলার ভিড়ে জোনাকের দল
পুকুরের পাড় ঘেঁষে বসিয়ে দিয়েছি
বসরাই গোলাপ-বাগান
তোমার খোঁপায় প্রজাপতি খেলবে বলে
যদি কখনও আসো পথ ভুলে
আমি জানিই তো তুমি ভালোবাসো প্রজাপতি
প্রত্যাশার পথ ঘাড় গুঁজে পড়ে থাকে পথে
মরুঝড়ে উট যেমন বালিতে মাথা গোঁজে
পায় বা না পায়
সব সাগরই থাকে নদীর অপেক্ষায়।
লাল গালিচা
একা থাকা হয় না আর
মনের অজান্তেই চশমাটা উঠে বসে নাকের উপর
ব্লাডসুগার মাপার যন্ত্রটা পর্যন্ত হাতের কাছে
ঘুরঘুর করে অভুক্ত বিড়াল ছানার মতো
শরীরের গিটে গিটে ব্যথারা এসে
বন্ধু সেজে আড্ডা বসায় তুমুল
দুধ- চিনি ছাড়া চা-এ অভ্যস্ত হলেও
সিগারেটের ধোঁয়া ডেকে আনে
ফুসফুসের কাহিনি বংশপরম্পরা
তাবৎ ডাক্তারের না বোধক শব্দের তালিকা
সামনে-পেছনে বাজিয়ে চলে খোলকরতাল
মেডিকেল চেকআপ! সে তো প্রবাদপ্রতিম
'খাজনার চেয়ে বাজনার বেশি'
সময়ের তসবিতে চড়ে
দিনগুলি নিজেই নিজেকে গণনা করে
ক্যালেন্ডারের আঙুলে কড় গুণে গুণে
সব রং জড়ো হয় পশ্চিমে
আর পেতে দেয় লাল গালিচা
আকাশে চাঁদ ও নক্ষত্র ফোটাবে বলে।
সেবার রানি
সেবার রানি,
তোমাকে না দেখেই বিশ্বাস করেছি
বিশ্বাস করেছি আমি তোমার গ্রীবার তিলক
যে তিলক প্রতিমুহূর্তে রং পাল্টাতো
নাচতো আর নাচাতো অনেক
আরও বিশ্বাস করেছি তোমার হাসি
যে হাসির কাছে পরাভূত কুল মাখলুকাত
তোমার সেই তিলক, সেই হাসি
আমাকে ইশারা করলেই আমি উথ্থিত হই
আর ছুটে যাই তোমার প্রাসাদে
ন্যানো সেকেণ্ডের মধ্যেই
অথচ সেবার রানি,
হুদ হুদ পাখির প্ররোচনায় বাদশা সোলাইমান তোমার তখত্ উড়িয়ে এনেছিলো নিজের প্রাসাদে
যাতে করে বিশ্বাস করতে পারে
তোমার ভুবনমোহিনী ঐশ্বর্যের
কে না জানে! পিতার পদচিহ্নেই এঁকেছেন
নিজের পদচিহ্ন, বাদশা সোলাইমান
উচ্ছিষ্টের প্রতি রাজকীয় আকর্ষণ সর্বজনবিদিত।