কবি : এম মোসাইদ খান
তাড়িতের চিৎকার
জন্মেই কেঁদেছি,
সে কান্না বুঝি ছিলো তোমার জন্য।
অবুঝ প্রহরে চিৎকার চেঁচামেচি
চুষে চুষে খেয়েছি মায়ের শরীর।
কাঁটাছিঁড়া পথ, অন্ধকার মাড়িয়ে
দু হাতে চিবিয়ে খেয়েছি বাবার সঞ্চয়।
আজ বাবা নেই
পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য ম্লান চোখে
প্রবাসী দেউলিয়া জীবন,
নিজেকেই নিজে ঘুলে খাচ্ছি দিনমান
মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে তোমারই জন্য।
জন্মেই কেঁদেছি,
আজ ভাবি-
জন্মেই বুঝি কেঁদেছিলাম তোমার জন্য।
মনবিরহী
লাল দিগন্ত ছুঁয়ে সন্ধ্যার কিনারায়
সুনামির মুখে ফেলে থেঁতলা শরীর
বাউন্ডুলে মন পালিয়ে যায়,
একা
বড়ই একা
সারিবদ্ধ ওক গাছের তলায় কঙ্কালের
মতো মনখেলাপী।
সময় বাড়ে
বাড়ে আরও কিছু
টানটান বুকে মৌন নিঃস্বাশ
পথ আর পা’য়ে বাড়ে ব্যবধান।
সোডিয়াম আলোর নীচে
রঙিন বাকলে মানুষের মুখ,
জনস্রোত ট্রাফিক সিগন্যাল পেরিয়ে
মাটির ডিঙ্গিটা যখন
নোঙর ফেলে ইট-কাঁচের বলয়ে
হাড়ের ভেতর জেগে উঠে র্প্রাথনার ঢেউ
পাথরের মতো শক্ত
জলের মতো কোমল,
বাউন্ডুলে মন হাতড়ে বেড়ায়
কোন একটা কিছু র্নিজন চোখের ভেতর।
মাছের উলান
শোষনের ঢেকিশালায় বিবর্ণ চোখে
রাক্ষুসী মাছদের উলান দেখে দেখে
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে পাড়ি দেই
আমরা রোদেলা দুপুর ।
সর্বগ্রাসী খোয়াড়ে অদৃশ্য বাহুর প্রতাপে
বন্দি আমাদের পোয়াতি শরীর
অজস্র খাদক চোখের লোলুপদৃষ্টি
চমড়া ঘেরা আমাদের শুকনো বানে,
অদ্ভুত রোমাঞ্চে
হাড়ের নির্যাস শুষে গাভীন হয় তারা
হৃষ্টপুষ্ট উলান দেখে দেখেই
পাড়ি দেই আমরা ক্ষুধার্ত রাত।
পলাতক
অনেক কিছুই পাশ কেটে যাই
যেতে হয়
ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পথের টানে।
অদম্য শোকের ওম ধুতরার নেশায়
ঠোঁট কাটা মুখের
কথার ডালপালা ছাঁটি আর হাঁটি
ডান-বাম দুচোখে ঘুণপোকার বিনোদন।
কাঞ্চনজংঙ্গা ঘুরে দেখি সব পথের এক মুখ
আলতো আঁচে সিদ্ধহই
কেবলই বাড়ে বিভ্রম পরিহাস,
বরফের বুকে রোদের বীজ বুনি
মেঘের পাহাড় কেটে।
অনেক কিছুই পাশ কেটে যায়
যেতে দেই
দিতে হয়
টেরাসময়ের ছলাকলায় নাগরিক স্বভাবে,
কাটাকাটি খেলায় ক্লান্ত প্রহর
মরা স্বপ্ন কাঁধে
নিজেকে পাশ কেটে পালিয়ে আছি।
কলসীবয়ান
কানামাছি গোল্লাছুট খেলি পাড়ার ছেলে মেয়ের সাথে
আধমরা গাঙে সাঁতরাই,
গৌরাঙ্গদের বাড়ি প্রাইভেট পড়া শেষে
ফুল ছিঁড়ে ইস্কুলে নেই
পকেটেই শুকায় সে ফুল আলোর মুখ দেখে না।
বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায়ক্লাসের পড়া বাকি রেখে
নির্মলা পিসিদের বাড়ি কির্তন শুনতে যাই,
ধুপ জ্বলা ঘ্রাণ, থেমে থেমে উলুধবনি
পাখোয়াজ আর কাঁসরে সচল বাদক
ঘাঘরি পরা রাধার অবাক করা কন্ঠ
‘আমার কলসির ভিতরে গো কৃষ্ণ কালিয়া বিরাজ করে’
দাদরা তালে রাধার নৃত্য, আহা বেশ বেশ।
রাধার রঙ করা মুখে গেঁথে রয় সবার চোখ
আমিও সুর মিলাই,
আমার কলসির ভিতরে গো কৃষ্ণ কালিয়া বিরাজ ক...
আচমকা ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গে বৌয়ের ঝাঁঝালো গলা
‘ঘুমের মধ্য কি বলছ এসব’?
তখনও রাধা নৃত্য চলে আমার ঘুম ছেড়া চোখে
বিড়বিড় ঠোঁটে পাশ ফিরে শুই, কলসীর ভিতরে গো...।