ওয়াহিদ জালাল এর গুচ্ছকবিতা
পরাণের অচিন ঢেউ
ভোরের অনেক দেরী কইছে ডাহুক।
অন্ধকার বুকের চিপায় খুব আপন হয়ে
ঘুমিয়ে আছে,
আমি পাথরের পথ পেরিয়ে বাবার কবরের
পাশে দাড়িয়ে নিজের ছায়াকে মাপি,
ভুল কিংবা শুদ্ধ কিছুই বুঝিনা
আয়তনের উপর কপাল রাখে আত্মার সিজদা
তখনি পাহাড়ের মতোন ছোট হয়ে আসে
পরাণের অচিন ঢেউ।
আমি ভেঙে যাই টুকরো টুকরো হয়ে।
আমাকে নিজে ভাঙছি,ঘর সংসার ভাঙছে,
আপনজনেরা ভাঙছে,বাড়ির পথ,উঠানের মাটি
পুকুর ঘাট ও মায়া মায়া গন্ধে ভরা শুইবার ঘর ভাঙছে
প্রতিদিন,তবু আমি ভোরের কাছে যাবো একটিবার।
তার কাছে জানতে চাইবো
বর্তমান অন্ধকার থেকে ফেলে আসা আধাঁরের দূরত্ব
কতো বুঝিয়ে বলতে,
আরো বলবো,আমিতো চোখ মেলে কমলালেবুর
ভিতরের অন্ধকার দেখতে চেয়েছিলাম,
অথচ কালো'র অবস্থান নিয়তির দুই পাশে।
হারিকেনের আলোয় বসে একবার খেলছি,
অবশ্যই তা সেই ছোট্ট বেলায়,এখনো মনে আছে,
দিক ভুলে যখন মার্বেলটি তার মতো করে লুকিয়ে
গেলো আর খুঁজে পাইনি,তখন বুঝেছিলাম হারানোর জ্বালা কতো দয়াময়।আজও ভাবি মানুষও কখনো হারায় না,আমরা শুধু নিজেরাই আড়াল হই তার থেকে।হারানোর পূর্বে সবকিছুই মূল্যহীন পড়ে থাকে
আর যখন সেই মূল্যহীন কিছু হারিয়ে যায়
তখনই সে অমূল্য মোহর হয়ে বুকে ঝড় তুলে।
আজও পৃথিবীতে হারানোর জ্বালা বড় দয়াময়
মরণের পূর্বেও দুয়ারে বসে নিজের দেখে ক্ষয়।
ওয়াহিদ জালালের কথা
আমিও খবর হবো তোমাদের খবরে
খাঁচার ময়না আর ঘরে নাই
যতো ভুল আমার দিও ক্ষমা করে
নামছে জীবনে আধাঁর টের পাই।।
শেষের কলসে ভরেছে যে জল
তারে ভাসাবে মরণ নামের ঢল
মনের সাধ মুছবে দুঃখের হাত
দুইচোখ ভরে নামবে রাত
পাখি বলবে যখন উড়ে যাই।।
পথের দেখা বিদায়ে ভুলিবে সব
সেদিনের হাসি খুশি যতো কলোরব
মাঝে মাঝে যদি আসি কারও মনে
মধুর স্মৃতি উড়বে উদাস বনে
জীবনে আপন হয়না তো সবাই।।
যে নামের পরিচয় হয় লাশ
ওয়াহিদ জালালরে কী অভিলাষ
খাঁটি গেলে মাটি যে থাকে
মাটিই তারে বুকে রাখে
উড়তে দেয় না পুড়া ছাই।।
ওয়াহিদ জালালের কথা
বিদেশী মানুষ দেশে যায়রে
হায়রে--------
আমি একা রইলাম পরদেশে
সোনা বন্ধুরে------
কখন আসবে নিজের খবর
আমারে ডাকবে ভালবেসে।।
আপনজনা যদি যায় দূরে
তারে দেখতে মনে ইচ্ছে করে
সুখ দুঃখের কথা কইতে।
চাইলে তো না পাওয়া যায়
পরদেশে যদি কেউ হারায়
শান্তি রয় আর কিসে।।
পরবাসে কেউ আপন থাকে না
নিজের দেশ তো মূল ঠিকানা
সেখানে আসল চিঠিপত্র আসে----
জানবে কেমনে ওয়াহিদ জালাল
তোমারেই তুমি করলে কাল
আজ ভাবছো পাগল বেশে।।
আত্মকাব্য
বিরতিবিহীন দীর্ঘ ততোটা সময়
তারার বয়েসী প্রজাপতি প্রজাপতি খেলা
বুকের মেহমান এবাদতে আজ মগ্ন
মাটির মোহরে বাতাসেরা দেয় দোলা
যদি ভিতরে আসো ওয়াহিদ
এতোটা মোলায়েম হয়ে এসো না যে
তুমি পড়ে রইবে তোমার ধৈর্য্যর ছায়ায়
আর চোখগুলো তার মধুর এক শিহরণে
তোমার চোখ থেকে পাষান আঁচলে লুকায়।
নিখাদ রক্তের মানুষ
রক্তের চাঁপা পড়ে বৃক্ষ আর কুসুমের যে অমলিন সুবাস
বাতাসে ঘুরে বেড়ায় তার নাম ভালবাসা ।
জন্মের চাদরে জীবনের আব্রু ঢেকে রাখে অনন্তকাল,
বয়স বাড়ে, চোখের ভেতর স্বপ্নের দিঘি বড় হতে থাকে,
সেই জলে সাঁতার কাটতে থাকে হাতেগোনা
কিছু মানুষের স্বার্থক জীবন,
জলের রঙ বদলায় তারা কখনো বদলায়না ।
আমি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা বলছিলাম,
তার রক্তে কোন খাদ ছিলো না,
শরীরে বহমান রক্তের পূর্বসুত্র একদিন আমাদের
প্রিয় বাংলাদেশের জন্য ঝরিয়ে গেছেন ত্যাগী ভালবাসায় অকৃত্রিম বিশ্বাসে ।
আমি তাকে জানতাম, দীর্ঘদিন দেখেছি তাকে খুব কাছে থেকে, মানুষটি যেনো
ছোট্ট শিশুর সারল্যের ভরা ভালবাসা দিয়ে কাছে রাখতে জানতেন ।
প্রতিদিনের কাজ সেরে আমাদের দেখা হতো
হ্যানবারী স্ট্রিটের একটি ঠিকানায়,
আজও অমলিন সেই পথের ধূলা,শুধু তার শূন্যতায় ভিজছে প্রতীক্ষার কুয়াশা ।
দুই হাজার ষোল সালে শেষ দেখা আমাদের হয় ঢাকায়,
বলেছিলেন লন্ডন এলে দেখা করিস, এসেছেনও কয়েকবার,
ফোনালাপ হয়েছে আমাদের, দেখা হয়নি । দেখা হলে হয়তো
আরও মানুষের গল্প শুনতাম তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে,
হয়তো আবার আমাদের নিয়ে নতুন কোন ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকতেন,
বলতেন, যা সত্য তা মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করোনা,
জীবন তো একটাই, তাকে জীবনের কাছাকাছি রেখে যাও।
ছায়াগুলো বুঝি চিরকাল এভাবেই সরে যায়!
আর আমাদের ছেড়ে যায় সময়ের প্রখর রুদ্র দাহে,
তবু চলে যেতে হয়, নিয়মের আগরবাতি জ্বলে ওঠে,
পুড়ে পুড়ে সুবাস ছড়ায় আর সুরভিত রাখে আমাদের ভূবন চিরকাল ।