ছবি : নেট থেকে
ইতিহাস টুকে রাখার অন্যতম সরঞ্জামের নাম কলম। কলমের আবিষ্কার মূলত ইতিহাস লিখে রাখার জন্যই। পৃথিবীতে যত কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস লিখা হয়েছে, তাতে ছিল কলমের ছোয়া। তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী কবিগুরু রবীন্দ্রণাথ।
সময়টা ১৯১৮ সাল । পাঁচ বছর হয়ে গেল নোবেল পেয়েছেন রবীন্দ্রণাথ। কবি গুরু যে ফাউন্টেন পেন দিয়ে রাশি রাশি গল্প, নাটক, কবিতা লিখেছিলেন, সেটি হঠাত করে উধাও হয়ে গেল। প্রথমে পুরো বাড়িতে তন্ন তন্ন করে খোজাখুজি করা হল। কিন্তু জোড়াসাকর ঠাকুর বাড়ির কোথাও খোঁজ মিললো না সেই কলমের। হারানো কলম নিয়ে বেশ ক’টি সাহিত্য সভায় নিজের দুঃখ প্রকাশ করলেন কবিগুরু। কিছুদিন পর কবিগুরুর জোড়াসাকোর বাড়িতে একজন ওসি সহ কয়েকজন পুলিশ এসে হাজির। সাথে নিয়ে আসেন কোমরে দড়ি দিয়ে বাধা এক দাগী চোরকে। থানার বড়কর্তা জানালেন এই চোরের কাছে একটি ফাউন্টেন পেন পাওয়া গেছে এবং চোর স্বীকার করেছে সে এই বাড়ি থেকেই এটি চুরি করেছে। কলম দেখেই কবি উচ্ছসিত হয়ে সেটি ফেরত চাইলেন। কিন্তু আইনের প্যাঁচ বোঝা কঠিন। ওসি জানালেন, চুরির মামলা হয়েছে। কবিকে আদালতে গিয়ে কলমটি শনাক্ত করতে হবে। তবেই আদালত কবিকে তা হস্তান্তর করবেন।
সে সময় লালবাজারে ছিল পুলিশ কোর্ট। সেই কোর্ট থেকে সমন পাঠানো হয় জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে সাক্ষী হয়ে কোর্টে হাজিরা দেয়ার জন্য। কবির আইনজীবী ছিলেন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ( প্রায় সঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের পিতা)। কবি তাকে জানান, শুধুমাত্র কলম শনাক্তকরণের জন্য আদালতে তিনি হাজিরা দিতে চান না। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে তার বক্তব্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পৌছে দেন।
এরপর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ইন্সপেক্টরকে ডেকে বলেন,” কবিগুরুর জন্য যদি সামান্য ব্যাতিক্রম না হয়, তবে সে আইন না থাকাই ভালো।“ উল্লেখ্য ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও একজন রবীন্দ্র সাহিত্য অনুরাগী। সমন সই করার সময় ম্যাজিস্ট্রেট লক্ষ্য করেননি, এটি কবিগুরুর জন্য পাঠানো হচ্ছে। তাই আইনজীবীর মাধ্যমে কড়জোড়ে ক্ষমা চান কবির কাছে। পরিশেষে যত্ন সহকারে কলমটি কবির কাছে পৌছে দেন।
তথ্য সুত্রঃ সৌরিন্দ্রমোহন বাবুর লেখা “উকিলের ডায়েরি” গ্রন্থ।