কবিতাগুচ্ছ । মোজাম্মেল হক নিয়োগী
কবিতাগুচ্ছ । মোজাম্মেল হক নিয়োগী

 

আমিও ইতিহাস লিখব

 

আমিও একদিন আমার ইতিহাস লিখে যাব

আমারও একদিন জন্ম হয়েছিল, মৃত্যুও হবে একদিন

জন্মমৃত্যুর মাঝখানের ইতিহাস আমি লিখে যাব।

এই ইতিহাস কোনো সাফল্যগাথা নয়, সুবর্ণ সময়ের কোনো বীরত্ব নয়

এই ইতিহাস ব্যর্থতার গ্লানির ক্লান্তির বঞ্চনা আর প্রবঞ্চনার।

 

আমি আরো ইতিহাস লিখব ঝরা বকুল-শিউলির

মরা রোদের নিস্পন্দ শিথিল বসন্তের

শীতের ধূসর ঝরাপাতার, রুগ্ণ শালিকের

স্রোতহারা নদীর করুণ কান্নার।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু তোমরা সাফল্যের কথা শুনো

একবার ব্যর্থতার কথাও শুনে যাও

ব্যর্থদেরও সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার ইতিহাস আছে।

ব্যর্থতারও সফলতা আছে, তার মানে সফলভাবে ব্যর্থ।

 

কারো কারো ব্যর্থতার জন্য কেউ কেউ সফল হয়

কারো হৃৎপিণ্ডে রক্তে বিনিময়ে কেউ পায় বিজয়ের পতাকা

আমার ব্যর্থতার দায়ভার তোমাদের কাঁধেও যাবে

মনে রেখো একার দায়ে কেউ কখনো ব্যর্থ হয় না।

 

 

ফুলের দুঃখ


 

এই দ্যাখো এই দ্বীপে কত নাম না জানা ফুলের ভীড়ে

আড়ষ্ট চেয়ে থাকি প্রহরের পর প্রহর 

পাপড়ির শরীর ধরে মিটেয় বুকের ক্ষুধা।

 

ফুলদের দুঃখ আছে বলেছে রঙের ডানা

খোঁপার উষ্ণতা নেয়ার তৃষ্ণায় বেমালুম ক্রন্দন

সাবলীল অনুপ্রাস জানালার গ্রীলে তুলে বেটুফেন সুর। 

 

তোমার চুলের গন্ধ কত দিন পায়নি তারা 

এই দ্বীপের সমুদয় পাঁপড়ি আজ সপ্তবর্ণ হারা।

 

 

ওরা দুজন

 

চোখেরা এক হয়

অবাধ মেলা মেশা দুঃখ সুখে একাকার

সহস্র ভাষার প্রতীক, লক্ষ ভাষার অনুযোগ অভিযোগ

আলো আঁধারের দারুণ খেলা

 

হাতেরা দূরে থাকে, সহসা স্পর্শ চায় 

নিয়মের প্রাচীর, প্রাচীন চীনের প্রাচীর যেন

                        নির্মম অবিচল অবিরাম

শুধু আকাঙক্ষার নদীর প্রবাহে অনাবিল ধারা

 

শরীরের রং কী? চোখ ধূসর সাদা

সাদা চোখ খুঁজে শরীর-গোলাপ

নাড়ির শাদা কোনো এক দুর্লভ আঁধারে...

 

দুই বুক এক হতে চায়। এক হয় অশব্দ ভাষায়

নীরব আলাপারিতা রাত ভর চলে কেবলই বধির ভাষায়

কথা শুধু কথা রং শুধু রং স্বপ্ন ধূসর

ইথারে ঠিকানা হীন দূরত্ব অসীম

 

দুজনের কথা যেন স্বপ্ন অসাড়

মাঝখানে বাড়ে শুধু মেরুর প্রসার।  

 

 

সহাবস্থান

 

এই শহর রোদে পুড়ে যাওয়া শহর

এই শহর পাথরে মুড়ানো শহর

গতিময় রাতদিন চাকায় করেছে ভর

বেজান কোরাসের সুর পান্ডুর ধূসর।

এই শহর রোদে পুড়ে যাওয়া শহর

এই শহর মানুষ পুড়ে দেয়া শহর

তেষ্টায় বুক ফেটে যাওয়া শহর

নিলামে উঠে যাওয়া শরীর বহর।

 

এই শহরে তোমারও থাকা হয়, শুনেছি

তাই রাতের দেহে দিনের আলো বুনেছি।

 

ত্রিশূল পট

 

চোখ বেঁধে কোন এক নারী

পটে ত্রিশূল মারছে

নিজের শরীর বাঁচিয়ে পট বিদ্ধ করে

ক্ষত বিক্ষত পট আর তার বুকে আনন্দ জোয়ার।

 

বাতি নিভে গেল

চোখ থেকে খসে পড়ল ছায়ার পর্দা

একটি মূর্তি পাশে এসে দাঁড়াল

! তুমি? বললাম, “ আর কত বিদ্ধ করবে?”

ছায়াটি হাসল, বলল, “ যে আমার খেলা।

আমার বুকের ভিতর তাকিয়ে দেখলাম অসংখ্য ক্ষত....

 

 

 

 

 

 



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান