ঝামেলা
হৃদয় নিয়েই যত ঝামেলা আমার;
ঘরে রাখতে গেলে জায়গা মেলে না-
ভাঙা কুলো এসে টানাটানি বাধায়।
বাজারে চলে না,
মুদি বলে--
তামার টাকা হলেও নাহয় সেরদরে নেয়া যেতো বাপু! এ তোমার বাপদাদার আমলের জিনিস, অচল,
কেউ নেবে না।
প্রতিবেশিনীকে দিতে চাইলে হেসে বলে,
তারচেয়ে একটি লাউ পাঠিয়ে দিও তোমাদের, বৈরালী মাছে জমবে বেশ!
কাঁচা আবেগে একবার এক সহপাঠিনীর হাতে হৃদয়টা দিয়ে
কী যে বিপদে পড়েছিলাম!
খেলনা নিয়েও খেলে না মানুষ এতোটা!
ফেরত পেলাম---- তখন আর চেনাই যায় না,
সমস্তটা জুড়ে তার--- আধুনিকার খেয়ালী নখের আঁচড়--
লাল, নীল, পীতাভ!
মাঝে মাঝে এত বেশি কষ্ট হয়,
শূন্যতার মতো ভারী এই হৃদয়টা
ফেলে দিতে যাই;
কিন্তু ঝামেলা বাধে--
রবীন্দ্ররচনাবলী, আমার মায়ের বুক, বিসমিল্লার সানাই--
এমনকি ছলনাময়ী হাসিটুকুও---
চলে যেতে চায়---তার সাথে।
তাকে আর ফেলে আসা হয় না আমার।
নিষেধাজ্ঞার মুখে/ আমিনুল ইসলাম
তবুও তো প্রতিদিন প্রভাতের সূর্য এসে
চুমু খায়---
দূষণের ছোঁয়া লাগা বৃক্ষের অধরে;
মাঝরাতে চুমু দিয়ে ছদ্মবেশী ডেভিলের গালে,
অভিচারে হেসে ওঠে--
জাতিসংঘের চূড়ায় আসীন আণবিক লোভ;
আর বিকতির লিঙ্গ চুমে মহাখুশি---
সেরদরে প্রযোজিত ফোরকালার ঠোঁট;
এতবড় সিলেবাসে--- আমি কবি
বৃহত অধ্যায় নই--
হয়তোবা পাদটীকা-- ক্ষুদ্র এক প্রত্নপিপাসা
পদ বা পদক নয়--
মলিন অধরে চাই---
কেবল একটি বেহুলা-চুম্বন।
অথচ অনড় তুমি--- লেলিয়ে রেখেছো--
রাতের জানালা আর দিনের দুয়ারে
আঁধারের রঙমাখা--
একগুঁয়ে কতিপয় নিষেধের র্যাব।
তুমি পারবে, পারতেই হবে তোমাকে
অতঃপর মেইল নম্বরের সাথে পাসওয়ার্ডের মতো
হাতের মুঠোয় হাত
টয়োটা সোফায় শরীরের ক্লাসমেট শরীর ।
কি বলছেন-??? এটা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়!
আর হ্যাঁ, যদি আর কোনোদিন একথা শুনি আপনার মুখে-- !
অতঃপর একদিন--অনেক দূর থেকে এসে
ঝড়ের গতিতে তুমিই প্রথমে চুমু দিলে
অভিমানী সময়ের গালে।
এখন বলছো- আর কিন্তু পারবো না!!!
সাতই মার্চের ভাষণের পর
বাঙালির আর পিছু হটার পথ ছিল না;
যতদূর এসে গেছি------
আমাদেরও পিছু হটার পথ নেই।
অধিকন্তু, দ্যাখো, বেহুলার বুক, বনলতার চোখ
তিতুমীরের তেজ, রূপাইয়ের মাঠ,---
ভাবনার মোড়ে মোড়ে ওড়ায়
প্রেরণার স্লোগানখচিত পতাকা।
অতএব এসো, ট্রিগারে তর্জনী রেখে
চূড়ান্ত যুদ্ধে নেমে পড়ি
দগ্ধ দ্বিধার অবশিষ্ট প্রতিরোধ গুড়িয়ে দিয়ে
অনুরাগের রাজধানীতে ওড়াবো
ভালোবাসার পতাকা
তুমিই আমার সোনার বাংলা, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
জীবনের প্রতি
আমার অদ্ভুত সখে সায় দিয়ে
তুমি ঘোড়া হলে,
পিঠে নিলে কত বোঝা
না তুলে কোনও প্রশ্ন--
এত বোঝা কার---
আর কিসেরই-বা বোঝা এসব--
একের পর এক ?
আর কত গন্তব্যেই না পৌঁছালে সেসব!
সেসব কি আসলেই কোনো গন্তব্য ছিল?
প্রযোজিত কোনো বিরহী সন্ধ্যায়,
হয়তোবা এই নিয়ে
টকশো হতে পারে--
সবজান্তা কোনো
মূর্খ সঞ্চালকের সঞ্চালনায়;
কিন্তু তাতে তোমার কি লাভ ? কিংবা আমার!
এখন হাঁপাচ্ছো, পিঠে ব্যথা, পায়ে ক্ষত
ঘামভেজা পিঠে হাত বোলানোর কেউ নেই
বিরক্ত, চলে গেছে রাখাল ছেলেটিও;
অমীমাংসিত হাসিটাও বিকেলের আলো হয়ে ঝিলিক মারে না আর স্বপ্নের বারান্দায়;
হয়তো আমিও ক্লান্ত।
আমি তো বুঝি, তুমিও বোঝো,
ডাক আসবে না আর------
ক্ষমা করো হে জীবন, ক্ষমা করো !
আমরা দুজন হেঁটে যাবো
পাশাপাশি
কোনো এক উজ্জ্বল অগন্তব্যে----
আমাদের সমস্ত পায়ের ছাপ নিয়ে
শিলাবিশারদের মতো
হয়তোবা কেউ একদিন করবে উদ্ধার—
কি ছিল স্পর্শিত গন্তব্যের নাম
শুধু জানবে না সে---
দরোজা খুলে--
গন্তব্য আমাদের বসতে বলেছিল কি বলেনি !
পিপাসার প্রাক্কলন
ঢেউ ঢেউ চুম্বনের জন্য ধন্যবাদ, হে নদী
কিন্তু তুমিও তো জানো--
সর্বাঙ্গে জলপানে অভ্যস্ত--
আমার এই জলমাতৃক মাটি
আছে মাঠ ও ঘাট, দিঘি ও বিল,
অতটা কমে কি করে হবে, বলো !
তো বেড়েছে ভাসানের অপেক্ষা।
ও নদী, চাঁদের ফাইল হাতে
স্রোত-ভরা শরীর নিয়ে
বলো, কবে আসবে আবার !
ফের কবে হবে তোমার মঙ্গলবার ?
সুন্দরবনের গল্প
ঈসাখাঁর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে
সারি সারি গাছ
সম্মুখে জলেশের--
উচ্ছ্বাসের চোখ--লোনা আস্ফালন,
পশ্চাতে লোকালয়;
সবুজ আড়াল থেকে তলে তলে
গোড়া কাটে--
মীরজাফর- জগৎশেঠ হাত,
তাই দেখে ক্লাইভের চোখ হয়ে হাসে---
স্ফীতি আর লবণের লোভ।