রাতে এঁকেছি
রাতে এঁকেছি একাকী গানের ছায়া
এখানে যাকিছু পরিযায়ী সুর ছিলো ছড়ানো
শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অন্ধ
শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অন্ধ মাধুকর
আমি একটি কান্না আঁকতে চেয়ে গান
রাতের গাড়ি চলে গেছে আমাকে রেখে
গাড়িটির হৃদয় ধাতব প্রাণের পাশে ঝুলকালি
এই কালি শহরতলিকে মুড়িয়ে রাখে
শূন্য নদীতীরে আমি বালির বিভাস
আমার বুকের ভিতর কারো নিশ্বাস চুর
কে আমাকে বিভাগ করে বিবাগী ভাঙন
দ্বৈত হৃৎকম্পনে একাকার সিলিকন
কেউ কি আমাকে ডাকছে
যদি কেউ কারো সঙ্গে আর না বলে কথা
যদি কেউ গোপনে এঁকে ফেলে রাতের কবিতা
যদি কেউ ওড়ে ওড়ে উড্ডীন কোজাগর
যদি কেউ পুড়ে গিয়ে জানলারহিত ঘর
সে তার নিজের ভিতর ভেঙে দেয় সাতস্বর যদি
সে আর বালিশ কেঁদে কেঁদে অনসূয়া নদী
আমি কি তাকে শূন্য করিনি একা
আমি কি চোখের ডালপালা ভেঙে বানাইনি পাখা
জন্মান্ধ আলোর করাত
ওহে সোডিয়াম লাইট, জন্মান্ধ আলোর করাত, আমার প্রতিটি রোমকূপে প্রবল ঈর্ষা বৃশ্চিক রাত্রি হয়ে থাকে। তোমার আলো কেবল ত্বকের রং পালটে দিতে পারে, আর কিছু পারে না।
তোমাকে আমি কোনোদিন তেলরঙে এঁকে ক্যানভাসে বন্দী করে কারো কাছে দিয়ে দেবো। তোমার পদমূলে যে অন্ধকার জ্বলে সেইখানে এঁকে রাখবো একটা চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ।
তোমার অক্ষমতার শাস্তি লিখে ক্ষয় করবো একটা ম্যাটাডোর বলপয়েন্ট, দুশো একান্নটা কিবোর্ড, একটা অরিত্র আর তিনটে খসখসে ব্রাশ।
তারপর?
তারপর ঈর্ষার করাতে শান দিয়ে দিয়ে হিংসা বানাবো। সেই করাত হাতে বের হয়ে খুঁজে বেড়াবো তিনটা ধূর্ত হরিণ, দুটো মায়াবী শূয়র আর ডাবলডেকার বাসগুলি।
কেননা তুমি একটা দন্তহীন হাতি, তুমি কিছুই পারো না।
প্রকৃত বুদ্ধ
বুদ্ধের লোয়ার সিক্স দাঁতের মাথায় একটা পিঁপড়া বসে আছে নিশ্চিন্তে। শীর্ণ শুঁড় নাড়িয়ে খেলছে মায়া। আর বুদ্ধ ধ্যান ভেঙে সন্ত্রস্ত্র, হাঁ হয়ে দিশেহারা। বোধিধ্রুমের একটি পাতার কাছে সাহায্য চাইছে। পাতা কাঁপছে হাওয়ায়। পাতা জানে হাওয়ার দাঁত নাই—বুদ্ধ জানে না।
ধীবরের ছুরি
তোমাকে আমি নেড়ি কুকুরের ঘুমের পাশে দেখেছিলাম, দেখেছিলাম ফসফরাসের দ্যুতি হয়ে জ্বলতে। তুমি সারা রাত ঘুমোতে পারোনি। তোমার মুঠোর ভিতর মুখ লুকাতে চেয়েছিলো ধীবরের জন্মান্ধ ছুরি। মাঝরাতে নৌকোর গলুই ভেঙে পড়ে, নদীর বুকে শব্দ হলে একটা বাতাসি মাছ ফিক করে হেসে ওঠে, সাঁতরে হারিয়ে যায় স্রোতের অন্ধকারে, শ্লেষ্মার ঘ্রাণে হারিয়ে যায় আমার ভাঙা আঙুলেরা; হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায় স্মৃতি, তুমিও মুছে যাও ধীরে, ধীর তরঙ্গে। থেকে যায় একটি মাত্র গান, অন্ধকারের নামে।