কবিতা গুচ্ছ । নজরুল জাহান
কবিতা গুচ্ছ । নজরুল জাহান
একটু নাচো


 

তুমি একটু নাচো

দূর্বাডগার শিশির যেমন

রসিক বাতাসে নাচে গো

তুমি একটু নাচো।

 

নাচো গো নাচো হেলে-দুলে নাচো,

পুতুলি নাচনে নাচো,

নাচো জীবনরাগিনী তালে নাচো,

নাচো নৈঃশব্দের ভেতর শব্দ নাচো।

 

বাজছে সে অলৌকিক ঢোল

বাজছে পিয়ানো কারো

তুমি দেখাও নাচ দেখাও

উড়ুক ৎফুল্ল, উড়ুক ধ্বণি প্রতিধ্বণির নূপুরের স্বরগম।

 

নাচো, তুমি নাচো হরিণীর কম্পিত চক্ষুর নাচে নাচো

নাচো আর ঢালো বসন্ত সঞ্জিবনী ঢল

ঢালো নাচতে নাচতে ঢালো

ঢেলে ঢেলে যাও, ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাও, বয়ে বয়ে যাও

নিংড়ায়ে ধারা নিংড়ায়ে যাও।

 

ক্ষীণ দিবসের আভা তুমি! কতই আর নাচো!

এক ফোটা শিশিরের পলক-মুহুর্ত

নাচো নাচো

নাড়া পড়লে নাচো গলে,

গলে হাওয়া

তবু নাচো।

 

নিয়তির পর্দা


একদা তাঁকে পেয়েছিলাম

নদীর কল্লোলিত বসন্তে

বলেছিলাম " বলো যদি

যাই নিয়তির শেষ প্রান্তে

প্রাণান্তের পরে যেখানে

থাকা যাবে একান্তে।"

 

বিদ্যুৎবিভা তুলে রহস্য

ছড়িয়ে দিয়ে অন্তর তটে

গেলে মেঘে মেঘে মিলিয়ে

আমাকে রেখে শুন্য প্লটে।

আর তো তোমাকে ' প্রিয়া' পাই না

নিয়তির পর্দাই ভারী তাই না?

 

তোমায় বুকে বাইন্ধা প্রিয়ে


 

"তোমায় বুকে বাইন্ধা প্রিয়ে যাইমু জাহান্নামে"

এমুন কথা কইয়া ছিলা ? অহন কাহার নামে

শিরনী রাঁধো পীরদরগায় কাঁদছো মুনাজাতে,

কার জন্যে গো বলো বন্ধু ভাসো অশ্রুপাতে?

পারি যদি পৌঁছি দিমু তোমার বুকে তারে,

তবু তুমি কাইন্দ না গো তেপান্তরের পাড়ে

 

আমার খেয়ায় চড়ে একজন নিত্য আসে যায়,

সি কি তোমার হয় নি কিছু ? তোমার পানে চায় ?

 

সে কি তোমার নতুন ভাদর অকুলেরও কুল ?

সে কি তোমার মনের সখা সে কি কানের দুল ?

 

তোমার যতো ভালোবাসা জানতাম ছিলো আমার,

আমি ছাড়া কেউ ছিল না তোমার ডালিম কুমার। 

 

আমার বুকে অশ্রু ঢেলে কইতে প্রিয়ে ! কেঁদো না,

সেই অশ্রু ভাসছে বুকে তোমার হয়ে বেদনা।

 

ফুলগুলি যে দিয়েছিলাম ভুল করে তা মুকুল,

সে ফুলগুলো কাইন্দা ঝরে হারিয়ে তাদের দুকুল।

এপার ওপার আঁধার পারা খেয়া পায়না পাড়,

আমার খেয়ায় যেজন আছে সেজন তবে কার ?

আসবো নিয়ে তোমার কাছে সাজিয়ে নতুন বর,

না- বা দিলে আমায় কোনো প্রতিদানে কর।

নাইবা ভুলি জাহান্নামের নিতে আগুন বুকে,

জ্বলে জ্বলে দেখবো তোমায় আছো তুমি সুখে।

আর কি দেবার আছে আমার বলতে যদি প্রিয়ে,

ফিরবো আমি খালি হাতে সবটা তোমায় দিয়ে।

আর যে দেবার নেই তো কিছুই, আমার জীবন শূন্য,

চাইলে তাও তোমায় দিয়ে হতাম মানুষ অন্য।

মানব কুলে দানব কুলে নারী পুরুষ প্রেম, 

প্রথম থেকে সৃষ্টি কুলে প্রেমই তো পেলেম।

 

এই ভাবে মানুষ


 

কতো রাত দিন রক্ত দিতে পরিশ্রম করেছি।

 

লক্ষ্যবোধ থেকে কতো দুরন্ত পথ পাড় হয়ে

মুক্তির নিশিচারিতা অকপটে শিখে

ভাগাড় শবশ্মান সৌধের উপর দৃঢ় থেকে তোমাকে পাই।

 

তুমি কারো অপেক্ষা আরো অবাধে বড়।

 

এতো রক্তের উপর দিয়ে, নিঃশ্বাসের উপর দিয়ে হেঁটে ক্লান্তি ঝেড়ে কেউ পৌঁছুতে পারে না।

আমার সেই হৃদপিন্ডের বাতাস আজ দখিনা বাতাস,

কুহুকের একরত্তি রক্ত,

যে আর কখনো মানুষের বুকের রক্তের উপর পায়ে মাড়িয়ে যায় না।

এই ভাবে মানুষ মুক্তির চলন্ত পথ তৈরি করে যায়।

 

আমার নৈর্বৈচিত্র্য জনপ্রিয়তা


 

ভালো লাগে না আমার আর নৈর্বৈচিত্র্য জনপ্রিয়তা!

উচ্চ মর্যাদা পাঠপ্রিয়তা পাঠকপ্রিয়তা!!

সকলি আমার একঘেয়ে একপেশে লাগে,

লাগে একগুয়েও,

বৈচিত্র্েযর লীলাখেলা অনিবার্য, জানি,

এখন স্বাদের যে রঙ কতো রং-বেরংয়ের

দেখার রঙ-চিত্র-বৈচিত্র্য,

একের ভিতরে যে বহু রূপের ব্যপ্তি বর্নিলতা ! !

কঠিন কার্যে নেমে হারিয়ে গেলেও বুঝি বা সুখ

এখানে ফুটবে উর্বর চিত্র উর্বশী-গান পায়ে নাচ,

গোলাপ ফোটা দোলার মতো ৎসবদোল।

 

কিছুতেই কিছু লাগে না ভাল।

বীরত্বের হই হই কোলাহল স্ফুরণ, সকলই নিদারুণ একা একা

নিঃশব্দ সুনসান পানসে পানসে

চিরাচরিত চর্চিত চর্চা।

 

একা একার,

হাজার রঙের মলাটবন্দি অনুন্মোচিত পরিহাস!

পরিহাস!!

একবারটি ইচ্ছা করে আমার শীর্ষ প্রিয়তা দেখার

আর কার কী রূপ কার কী সুখ ?

আমার পাঠ-ভোট পাঠক-ভোট

সকলি বহুজ শিল্পর রতœহার

কোনো ধনরাজ্যের তুলনায় অনেক বড়

শতেক চাঁদের উল্ফলিত হাসি।

 

দেখি পিদিম নিভাই জনম কালো  আন্ধারে


 

হিয়াতে তো না রাখিয়া তোরে রাখিয়াছি চোখে চোখে না রাখিয়া তোরে বান্ধিয়াছি বুকে

ওরে মাটির ডরে পরের ডরে পাখি পিঁপড়ারা হিংসা করে

রাখছি তোরে এমন ঘরে খুঁইজা পায় না তোরে কখনো কেউ রে

আমার পরাণপাখি চিকনা সুতায় ঢাইক্যা রাখি'

চোখ মুঞ্জিয়া বইয়া থাকি

তোরে না যেনো অন্যে দেখে।

 

দেখি পিদিম নিভাই জনম কালোআন্ধারে

তোরে রাখি ভিতর পৃষ্ঠায়

কালির তলের কল্পনায়।

 

তুই কেমনে বের হলি রে পাখি অন্ধ বদ্ধ ঘরের থিকা

কে তুই আমার অন্তর ছাইয়া ছিলি রে জোড়াকপালে লিখা

হারাই ফেললাম মাটির বাতাসে

সোনার রঙে না যায় কিনা না যায় চিনা

আকার বিকার তার রাখি না

রাইখা রে তার কুল পাইনা

নিয়তির দুঃখ আড়াল কইরা যায় না থাকা

থাকার ঘরটা এমনি বাঁকা ফাঁকা রইয়া যায়

জানতে কি অজান্তে পাখি একটু খানি ছাইড়া দেখি

কেমুন যে দেখায়

সোনা পক্ষি কী রূপ তরে স্বর্ন করছে,

বুঝলাম হেরি

সোনা রুপার পানিত ধুইয়া

চান্দের আলোয় গা ধোয়াইয়া

শুতাই দিছি আদোর করি

আমারও আংগিনায়

আইতে যাইতে দেখুম তরে শুতিয়া কি বইয়া

গড়িয়া সোনার কাঠের বেড়া

রৌদ্র বৃষ্টি কাটাই খরা দেখুম তরে নিশিন্দু রাতে

আঁধার হইলে ধল পহরটা প্রাতে

লুকাই ফেলুম ফের তোয়ারে সাথে সাথে

আর পাইবা না কেউ তালাশ করি আমার আন্ধার তিতির পাখিটা রে

যদ্দিন খুশি তদ্দিন রাখুম লুকাই লুকাই

যুগাই বুদ্ধিখান

তরে হারাই আর হারামু না প্রাণ

আমার জীবন থিকা উইড়া বেড়ানো.....

ভালা লাগা ঘ্রাণ।

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান