কবিতা গুচ্ছ । সাইমন নজরুল
মায়াবী অজুহাতে
বহুদিন কথা হয় না তোমার সাথে অথচ প্রার্থনায় তোমার কথা প্রতিনিয়ত ভাবি — সুখের দিনে তোমার চোখ দুটো বনফুলের
মতো মিটিমিটি হাসতো, তবে— আজ কেনো কাজলবিহীন চোখ জুড়ে আজলের টলোমলো অশ্রুবিন্দু অনাদরে টুপটাপ ঝরছে?
কতদিন সুন্দরকে অন্ধের মতো গোপন মোহে এ পরাণে আগলে রেখেছি— তা কেবল আমিই জানি; ছন্দের আসরে ছন্দপতন হওয়া প্রেমিক বুর্জোয়ার মতো পৃথিবীর তাবৎ দুঃখ বুকে নিয়ে একদিন তোমার দুয়ার হতে সরে এসেছি— আনমনে কখনো কি মনে পড়ে?
স্মৃতির পাঠশালায় অদৃশ্য অক্ষরে ভেসে ওঠে আজও তোমার নাম; কূল-কিনারাহীন প্রেমের গাঙ্গে ভাসে কতো ছলচাতুরি — অবহেলার প্লাবন শেষে, সরলতার পবিত্র ক্যানভাস জুড়ে কেউ এসে আবারো মায়াবী অজুহাতে বপন করতে চায় ত্যক্ত প্রেমের বিষাক্ত ক্যাকটাস।
তেলেসমাতি
আবারো একটা প্রেম হবে
সাইকেলে চড়ে ঘুরব অলিগলি;
মাঠ-ঘাট পেরিয়ে
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
সূর্যকে বিদায় জানিয়ে
পৌঁছে যাবো বাড়ি...
দরজায় খিল দিয়ে, জানালা খোলে
নির্লজ্জ লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে
হোক না একটু ভালোবাসাবাসি।
আবারো একটা প্রেম হবে
বাইকে করে ঘুরব শহরে-বন্দরে;
দুঃখের কথা কী আর বলব...
বান্দরের তৈলাক্ত বাঁশের অতর্কিত
অঙ্কের তেলেসমাতিতে — একলাফে
রাতদুপুরে বেড়ে যায় তেলের মূল্য।
ঘরের দরজা খোলে
বাইরে গিয়ে— পাহাড় দেখব
সাগর দেখব ঝর্ণা দেখব
এই সাহস আর অর্থে কুলায় না;
তাই আন্তরিক লজ্জায়— তেলবাজের মতো
ভালোবাসাকে 'ভালোবাসি' এ কথাও
নির্ভয়ে নির্ভেজালে আজ বলতে পারি না।
আবারো কি একটা প্রেম হবে?
না... না... এই অন্ধকারে অতো
তৈলমর্দন আর ভাল্লাগে না।
অভিসম্পাত
বারুদ থেকে বের হলে ফুলের সুগন্ধি
আজ — আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।
এইদিন দিন নয় ভেবে যারা
সোনালি অশ্বডিম্বের আশায়
দিনরাত বেভুলো স্বপ্নবুনে যাচ্ছে
তাদের প্রতি বিস্ময়সূচক অভিসম্পাত।
হারাধনের — কী আছে আর হারাবার!
দিনদিন নিঃশ্বাসও বিষাক্তে হচ্ছে আসক্ত;
নিদ্রার ভেতরও ঢুকে পড়ছে তৈলবাজচক্র
ঈশ্বরের নাম মুখে নিয়েও— ধর্ষণে তারা মগ্ন।
মানুষ ভাবে — কোনো একদিন থিতু হবে
সময়ের সব গ্লানি, আকাশ-পাতাল ভেদাভেদ
ভুলে যাবে মানুষে মানুষে। কিম্বা সীমানা—
ডিঙ্গানো সহজ হবে নীড়হারা পাখির মতো।
গল্পের ভাঁজে ভাঁজে তৈরি ব্রাহ্মরীতির বৈষম্য
মানুষ থেকে মানুষকে করে রেখেছে বিচ্ছিন্ন;
অহিংসা পরম ধর্ম বলে যারা হিংসার ভেতর ডুব
দিয়ে শান্তি তল্লাশি করে তারাও নৈরাজ্যবাদী।
চোখের সামনে পৃথিবী তলিয়ে যাচ্ছে
নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকারে —
আহা — এখানেই শুরু! এখানেই শেষ!
আহা — এখানেই শান্তি! এখানেই যুদ্ধ!
আহা — এখানেই জন্ম! এখানেই মৃত্যু!
বিপথগামী
অফুরন্ত সময় ডুগডুগি বাজাচ্ছে
চোখের কিনারে — ধূসর দিগন্ত
পেরিয়ে গেলে খুব সহজেই যদি
ঢুকে যেতে পারতাম অন্য গন্তব্যে...
আসলে সফলতার গল্পগুলো
অতো সহজ নয় — যতো সহজে
একে-অপরকে ভালোবাসার—
গোপন কথাটুকু বয়ান করা যায়।
সময়ের স্রোতে বিপথগামী মানুষের
সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে নক্ষত্রের মতো;
আলোর ফাঁকফোকর হতে অন্ধকারের
গুপ্তকাহিনী বের হয়ে এলে একদিন...
সন্দেহকে সন্দেহের চোখে দেখা
মানুষগুলো মরে গিয়েও পুনর্জন্ম
লাভ করে আবার অমানুষের অন্তরে;
কী অদ্ভুত সব আইনের ভাঁওতাবাজি!
আলোকে কালো — কালোকে ভালো
বলে চালিয়ে দিচ্ছে চতুর বিবেক;
নিঃসন্দেহে সময়ের ভুলগুলো গাধা—
নয়, মানুষই বহন করে তার মস্তিষ্কে।