কবি মেহেদী ইকবাল এর ৫টি কবিতা
কবি মেহেদী ইকবাল এর ৫টি কবিতা
পাতা বিষয়ক


এতক্ষণে পাতারা গল্প থামালো। গল্পের কি শেষ আছে?
রোজ রোজ একই গল্প, একটাইতো চাঁদ কিংবা সূর্য
খিদে পেলে কান্নাকাটি, তেল নুন সব্জীর হিসাব। নিকটে উইয়ের ঢিবি
যখন বেজে উঠে নীরব ভায়োলীন ,তখন মেঘেরা একে অপরের কাছে আসে
পাতারা তখন উদাস তাকিয়ে থাকে, খুঁজে ফেরে জন্ম গহ্বর।

যখন বেড়ে যায় স্নায়ূর সঞ্চালন, তখন কেন জানি মায়া জাগে মাছের কানকোর প্রতি
মৃত ইলিশের চোখে কত না স্বপ্নের মমী! নোনা জলে সন্তরণ
মিঠে পানির খুঁজে জেেলদের মরণ ফাঁদ। ঝরে পড়া অনিবার্য জেনেও

পাতারা জেগে থাকে। বৃষ্টি এলে ভিজতে থাকে

আনন্দিত শিশুদের মতো!

ফেরী


ঘাটে বাঁধা নৌকো ছেড়ে যাচ্ছে, আমি দেখছি প্রিয়জনদের হাসিমুখ, হাতনাড়া
আমি যেন নিপতিত গাঢ় মেঘপুঞ্জে, আমার চোখে বৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা।

হে আমার ভাই, বন্ধু, স্বজন
তোমরা ফিরে যাও যার যার নিবাসে
তোমাদের ঘরে ঘরে পুষ্পের ঘ্রাণ, ঝাঁকে ঝাঁকে আসবে জানি আলোর পাখিরা।

আমি থাকবো বসে অন্য এক ফেরীর অপেক্ষায়
যে ফেরী আমাকে যাবে নিয়ে অনন্ত সলিলে

যেখান থেকে আমি আর ফিরবো না কোনোদিন ...

রাত


আমি এক‌টি বিকেলকে রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখি। তার দীর্ঘ ছায়া
ঢেকে দেয় রুপাদের ছাদ। যে নদী মেঘ হয়ে ঘুরে বেড়ায়
আমি তার ভেজা চুলের গন্ধ পাচ্ছি। তার চুল থেকে
কবেই খসে পড়েছে ক্লিপগুলো! কেউ একজন
স্মৃতি কুড়োতে গিয়ে খুঁজে পায় তারে ঝুলানো লাল পায়জামা, লাল ঠোঁট
হলুদ ময়নাটি বসে আছে কোনো এক ডালে। বিকেলকে অগ্রাহ্য করে
তেল, নুন, সব্জী নিয়ে ঘরে ফেরে মানুষের ব্যস্ততা
কেউ বিড়ির বদলে এখন টানে সস্তা সিগারেট, তার ধোঁয়ায়
একটা একটা করে ছেড়ে দেয় পরিতৃপ্তির বেলুন
বেলুনগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায় যার যার নীড়ে।

একটা পেয়ারা তার সমস্ত রুক্ষতা নিয়ে জেগে থাকে
আর যখন মোম জ্বলে, ধীরে ধীরে গলতে থাকে মোম, তখন

আশ্চর্য একটা রাত ঘোড়ার মতো হেঁটে যায় অন্ধকারে!

এক বিকেলের স্বপ্ন


আজ বিকেলটা পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে কাটালাম। বিকেল এসে টবে রাখা গাছগুলোর সাথে
খানিক গল্প করে কাটালো। ঘুমন্ত আমাকে দেখে কী যে মায়া বিকেলের চোখে!
কিছুক্ষণ আমাকে দেখে সে চলে গেল ব্রহ্মপুত্র পাড়ে
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে বসে দেখবে সে অস্তগামী সূর্যের সাতটি রং!

আজ বিকেলটা পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে কাটালাম। ঘুমন্ত মানুষকে কেউ জাগায় না, এমনকী বিকেল
আমি বহু মানুষকে ফুটপাতে কিংবা বারান্দায় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যেতে দেখেছি
একমুঠো খাবারের জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যেতে দেখেছি নিরন্ন শিশুকে
ঘুমানোর জন্য তাদের কিছুই লাগে না, মাথার উপরে ছাদ, বিছানা বালিশ কিংবা সামান্য নিরাপত্তা!
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তারাও স্বপ্ন দেখে, তারা কি স্বপ্ন দেখে এইসব?

একেক জনের স্বপ্ন আসলে একেক রকম
যেমন আমি দেখলাম, ঘুমন্ত আমাকে দেখে বিকেল এসে ফিরে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে!

মাগুর


তোমাকে আমি কবে বলেছিলাম মাগুর আমার পছন্দের মাছ! ছোটবেলা জ্বর হলে
বাবা বাজার থেকে নিয়ে আসতেন মাগুর। মাগুরের সাথে জ্বরের কী যে সম্পর্ক!
এই সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে আমি মাহমুদপুরে পেয়ে গেলাম এক‌টি নদী
একজন মানুষের থাকতে পারে অনেকগুলো নদী
আমি অবশ্য কোনো নদীকে বলিনি আমার পছন্দের কথা, অর্থাৎ
মাগুর মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার কথা!

এখন আমি বাজারে গেলে দেশী মাগুর দেখি না। মাঝে হাইব্রিড মাগুরের কথা শুনেছিলাম
শুনেছি আফ্রিকান মাগুরের কথা। নাংলায় ডোবায় পড়ে যাওয়া এক শিশুকে
খেয়ে ফেলেছিলো আফ্রিকান মাগুর। একই প্রজাতির কী ভয়ংকর রুপ!

তোমাকে আমি কবে বলেছিলাম মাগুর আমার পছন্দের মাছ!
আজ আমার জন্মদিনে তুমি নিয়ে এলে এক ডজন দেশী মাগুর
গিফট হিসেবে মাগুর মাছ, কী বলবো!

তোমার মাগুর দেখে সত্যি সত্যি আমার এখন জ্বর এসে যাচ্ছে!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান