কবি : শামীম আহমদ
মানবিক সত্তার বাইরে যখন আমি
আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে ক্যালিওগ্রাফির মতো
কে যেনো এঁকে যাচ্ছে পাপ !
চোখে বসে দেখছে নগ্ন উল্লাস যৌবনের ,
জ্যামিতিক কম্পাস বসিয়ে মেপে নিচ্ছে শরীর,
কোন ষোড়শী যুবতীর ,
যৌবনের কামরসে ভরপুর বুকের মাংসপিণ্ড,
পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য
দিয়ে মোড়ানো নিটোল উরুসন্ধির মাংসল গ্রন্থি !
কবিতার মতো নড়েচড়ে ওঠে কপালের চুল
যখন ঠোঁট বাঁকা করে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় হাওয়ায় ;
সে সব দেখছে আর এঁকে যাচ্ছে পাপ
আমার সমস্ত ধ্যানের সীমানা জুড়ে
মানবিক সত্তার বাইরে থেকে
অথচ আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় ।
সভ্যতার অতন্দ্র প্রহরী
ইষ্টার আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে সময় !
যেমন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মূর্তিগুলো
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার সনদ নিয়ে ;
এক সময় এখানেও মানুষ ছিলো
ছিলো বর্তমানকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে
নেওয়ার প্রতিযোগিতা, কিন্তু মহাকালের ঘুর্ণীপাকে
আজ বিরান উপত্যকা ,
মনে হয মানুষ গুলো সব পাথরের রূপ ধারণ করে আছে !
প্রত্নতত্ত্ববিদদের দেওয়া নাম মওয়ে
হ্যাঁ ঐ মূর্তিগুলোকে মওয়ে বলা হয় ;
যদি (মওয়ে ) পাথরের মূর্তিগুলোর পাখা থাকতো !
হয়তো ওরা সময়কে এগিয়ে নিয়ে যেতো -
আধুনিক সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে
কিন্তু না ,ওরা অচল ঘড়ির কাটার মতো দাঁড়িয়ে আছে
ওরা দাঁড়িয়ে আছে একটি হারিয়ে যাওয়া
সভ্যতার অতন্দ্র প্রহরীর মতো অটল !
প্রত্নতত্ত্ববিদগণের মতে ওরা নাকি
এই আইল্যান্ডকে পাহারা দিতো এক সময় !
যেমন চায়নার মূর্তি সেনারা এখনো পাহারা দেয়-
তাদের মৃত রাজাকে পরপারে,বর্হিঃশত্রুর আক্রমণ
থেকে শেষ রক্ষার জন্য !অথচ দেখুন
ওরা যেমন নিষ্প্রাণ তেমনি -
রাজা কবেই মিশে গেছে মৃত্ত্বিকায় কে জানে ।
এখন কেবলই কালক্ষেপণ ভবিষ্যতের পানে চেয়ে
যদি পাথরে পাখনা গজায় কখনো,প্রাণ পেয়ে
নড়েচড়ে ওঠে ওরা
যদি পাথর গুলো উড়ে আসে সভ্যতার নতুন সারথি হয়ে
আগামীর জয় যাত্রায় --—
বন্দকি যৌবন
বন্ধুবেলা শেষ হলো কখন
এখন নিঃসঙ্গতার সাথে সখ্য গড়েছি আমি ,
কর্মহীন সময়ে কেবলই রুক্ষ সুষ্ক চুলের লুকোচুরি ।
দেয়ালে টাঙানো ছবিটি দেখি অবাক বিস্ময়ে
আমিও ছিলাম একদিন প্রবাদ পুরুষ ,
ঘনো কালো চুল ,শক্ত চোয়াল
চোখের চাহনি যেনো ভেঙে দিতো আঁধারের-
শক্ত দেয়াল ।
ছবিটি দেখি আর ভাবি
নিস্তব্ধ দ্রোহের মায়াজালে স্ফটিকের ব্যারিকেড
আস্তে আস্তে ধুলোর আস্তর পড়বে তাতে
একসময় চৈত্রের মাঠের মতো চিড় ধরে
ফেটে হবে চৌচির যখন ধ্বংস হবে নিবিড় ;
যখন আঁধারেরা নামবে দলবেঁধে চোখের সীমানা জুড়ে ।
তখন একমাত্র সম্বল
বন্ধুগল্পে স্মৃতির জাবরকাটা
যা লিখেছিলাম,আমি,আমরা সকল বন্ধু মিলে।
সামাদ’টা চলে গেলো অবেলায়,কাফনে মুখ ঢেকে
বাদবাকি সব আছি বার্ধক্যের কাছাকাছি
যৌবন বন্দকি রেখে ;
যা আর ফেরানো যাবেনা কিছুতেই ।
প্রজাপতির ডানায় বিষ
প্রজাপতির ডানায় বিষ
পরমাণু বোমায় গর্ভবতী হচ্ছে শিকারী ঈগল
ভুমিষ্ট হলেই ধরিত্রীর মৌন তপস্যা হবে ভঙ
চৈত্রের বৃষ্টির শেষে যেমন উঁই পোকা
দিকশূণ্য উড়োউড়ি করে অভয়আশ্রমের দিকে, ঠিক এভাবেই
মাটির খাচা থেকে প্রাণ গুলো মহাশূন্যে
যাত্রা করবে একদিন দেহ মিশে যাবে মৃত্ত্বিকায় ,
কয়েক শতাব্দীর পরে প্রত্নতত্ত্ববিদ মাটি
খুড়ে তুলবে আমাদের কঙ্কাল তারপর ডিএনএ
টেষ্ট করে বলবে ইশ
আদিম যুগের মানুষ বন্য ছিল বটে
নাহলে
এভাবে রাইফেলের বুলেটে কেউ
কাউকে চালুনির মতো করে ,
হয়তো তাদের কেউ কেউ রসিকতা করে আমাদের ফুটো
হাড্ডি দিয়ে বাঁশিতে সুর তুলবে মনের আনন্দে ,
অথচ আমরা প্রতিনিয়ত পালাচ্ছি জীবন -
থেকে ,সূর্য-ডোবা যাত্রা শেষ করে -——
বিধ্বস্ত শহর আর ক্রাইষ্টচার্চের আর্তচিৎকার
যখন সন্ধ্যাটা বিস্তৃত হচ্ছে আকাশের সমতলে
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগির মতো অপারেশন -
টেবিলে মানবতা প্রহর গুনছে মৃত্যুর !
ভারাক্রান্ত রাত্রিকে মনে হচ্ছিলো কোন
সস্তায় ভাড়া করা রাত্রিছাউনি
ক্লান্ত নির্ঘুম চোখ ঝিনুকের শক্ত খোলস ভেঙে ভেঙে
অপেক্ষায় রতো একটি সুপ্রসন্ন সকালের ;
গলির মোড়ে বোমায় বিকলাঙ্গ পাথর গুলোর
কান্না শোনা যাচ্ছে,শোনা যাচ্ছে তাদের আর্তচিৎকার;
পর্দা সরিয়ে ওপাশে দেখুন রাস্তা গুলো যেনো নোংরা শবঘর,
যেখানে নাড়ীভূড়ি নিয়ে টানাহেছড়া করছে কিছু
ক্ষুধার্ত কুকুর আর নীশাচর মাংসখেকুর দল !
আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না ওগুলো কী
আমি উত্তর দিতে নারাজ,
তারচে বরং চলুন চোখের পর্দা সরিয়ে
নিজেই দেখুন মান্যবর ,
নিউজিল্যান্ডে হয়েছে আজ মানবতার কবর !
জনাকীর্ণ নিস্তব্ধতার পাচিল ভেঙে
রক্তের নামে ঢল নীরবে
স্নিগ্ধ শান্ত ক্রাইষ্টচার্চের বুকে অত্যাধুনিক রাইফেলের চিৎকারে ;
আফগানিস্তান, সিরিয়া ,ইরাক সহ পৃথিবীর সকল
বিধ্বস্ত শহর,
যে গুলো আপনাদেরই হাইড্রজেন নিঃশ্বাসে -
এখন বিরান উপত্যকা ।
আঙুলের নির্বাক শ্যাডো
দিনকাল বেশ যাচ্ছিলোতো ভালোই
হালকা পাতলা রোগা শরীর, রুক্ষ মেজাজ ,
তারপর তুই ঘী ঢেলে দিস চোখে
এখন দাউ দাউ জ্বলছে আগুন আমার কাব্যলোকে ;
এখন আমি বড্ড মাতাল
দিনেও হারাই পথ,
শ্বাসরুদ্ধ করা ধুপচি আঁধারে
জীবনের উল্টোরথ ।
এখন আমি চারদেয়ালে কাব্য লিখি
আলো জ্বালাই আলো নিভাই
মোমবাতির বঙ্কিম আলো দিয়ে সাঁকো গড়ি
আলো আঁধারের খেলায়,
আঙুলের এই নির্বাক শ্যাডো থেকে ঐ দ্যাখ কে পালায় ;
এ কি আমি ?