করোনাকালের কবিতা - আশরাফ জুয়েল
করোনাকালের কবিতা - আশরাফ জুয়েল

 

সে মেয়েটি মারা যায় করোনার অনিন্দ্য ছোঁয়ায়,

মৃতদেহ তাঁর কাঁদছিল, আশপাশে নেই কেউ।

আত্মবিলাসের স্বার্থে সকলেই ব্যস্ত ছিল বলে

এগিয়ে আসেনি কেউ চাপা দিতে দুটি চোখ তাঁর।

 

তখনও জ্বলছিল বিষাদের অবাক বিস্ময়ে

শিশু, নারী বুকে লেগে আছে মুখে নিয়ে স্তন।

চুষছে শিশুটি আয়ু পৃথিবীর, বুঝছে মেয়েটি

বুঝতে পারে না শিশু, মৃতদেহ মায়ের স্থির। 

 

সাত মাসের শিশুটি, পাশে মৃত মা দুই ঘণ্টার,

এখনও যাচ্ছে দিয়ে শিশুটিকে পৃথিবীর স্বাদ।

শিশুটি কাঁদে, আসে না পৃথিবীর সুখ মার বুকে,

মা কাঁদেন হোক না সে মৃত, সে তো মা শিশুটিরও।  

 

না কাঁদলে শিশু পায় না দুধ, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি,

মা না থাকলে পাওয়া যায় না কিছু দুনিয়ায়।

নিজের মৃতদেহের পাশে শুয়ে আছে মা শিশুর

মারা গেছে কিছু পূর্বে একা শিশু কাঁদতে কাঁদতে। 

 

ছুঁয়েও দেখেনি তাকে, ছুঁয়ে দেখেনি শিশুটিকেও, 

লেগেছিলো শিশু বুকে মৃতদেহে তাঁর মৃত স্তনে।

ছিলো কিছু দুধ বুকে তখনও তাঁর, মৃত শিশু

পারেনি  টানতে বোঁটা। কীভাবেই বা টানবে দুধ?

 

সেও তো মরেছে একা, করোনায় মরেছে তাঁর মা।

দেয়নি কবর কেউ, মৃতদেহ পড়েছিলো একা।

মা-তো সে-, যাবে ছেড়ে সন্তানকে কীভাবে এখানে?

নিথর দেহটা ম্লান, পড়েছিল পাশে মৃত শিশু!

 

নিজেও মৃত সে, যাবে ছেড়ে কীভাবে সন্তানটাকে

পড়ে আছে একা প্রাণ, মরেছে মা করোনায় তাঁর। 

এগিয়ে আসেনি মাটিচাপা দিতে সন্তান বা তাঁকে,

মা আর মৃত সন্তান নিজেরাই দাফনাবে একা। 

 

করবে কী শিশু একা? সাত মাস বয়সের বাহু,

সে কী পারবে টানতে মৃতদেহ, মায়ের আদর!

কেউ আসেনি এগিয়ে, করোনায় মরেছে মা তার,

শিশু জেগে ওঠে তবু, পুনর্জন্ম পেয়ে গেছে আজ।

 

মাকে দেয় সে গোসল, আতরের শিশি গোঁজে দেহে, 

পরিয়ে দেয় কাফন কবুতরের ঝরা পালকের।

শিশু হাসে দেখে মাকে, সেজেছে মা আজ কী সুন্দর!

বেড়েছে বয়স তাঁর, এসেছে বাহুতে বল তাই- 

 

মাকে নিয়ে যায় শিশু, শোয়াবেই কবরে এবার।

শুয়ে পড়বে সেও মায়ের বুকে আদরের স্তনে। 

কেউ পারে না কাউকে সামলাতে কাঁদে একসাথে, 

মা মরেছে অশান্তির করোনায়, সন্তান ক্ষুধায়। 

 

মানুষ হাসছে তবু মহানন্দে, মানুষ ভাসছে-

মরার সাথে সাথেই হয়ে যাচ্ছে মানুষেরা সংখ্যা।

সরকারি হিসেবের খাতাটাও যাচ্ছে ফুলে ফেঁপে

তবু লাশ পড়ে আছে সন্তানের, মা  কাঁদছে একা।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান