কবি : কাজী আতীক
এটাই আমার দ্রোহ
তুমি হয়তো বিকার ভাবছো, ভাবতেই পারো
আমি তবু ঝড়ের রাতেই চাইবো পেতে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো
অথবা বৃষ্টি ভেজা দিনে- চাইবো নাহয় তপ্ত দুপুর রুদ্র
আমার খুশী আমি হিমালয়ের চুড়ায় খুঁজবো উত্তাল সমুদ্র
তুমি যা খুশী তাই ভাবো
এটাই আমার দ্রোহ
পদ্ম গোলাপ রেখে আমি ঘাসফুলটাই নেবো
আর পাল ছিঁড়ে হাল ধরতে চাইবো তীব্র স্রোতের উল্টো।
তুমি হয়তো বিকার ভাবছো, ভাবতেই পারো
আমার আগুন দহন বিহীন উষ্ণ দেবে
আমার বাতাস হালকা বয়ে প্রাণ জোড়াবে
মরা গাঙ্গেই জোয়ার জাগানোর ইচ্ছা প্রপাত-
বিজলি চমক, বজ্রনিনাদ- হাপর হাতুড়ি, যেমন-
যতো সব প্রতিভাবনা পুড়িয়ে সোনা স্বপ্ন সাজাবে।
তুমি হয়তো বিকার ভাবছো, ভাবতেই পারো
আমি কেবল অপঘাতের উল্টো মেরু এক আশার মতো
যেমন বিঘ্নবিহীন সুখসারি এক হৃদ্ধ প্রণয় প্রেম জানাবো।
তুমি নাহয় ভাবতে থাকো, যা খুশি তাই ভাবতে পারো
আমি তবু স্বপ্ন উড়ান দ্রোহকল্প বোধ ছবিটা এঁকে যাবো।
সহযোগ সংশ্রব রহস্য
কদর্য ভাবনাগুলোর উন্মত্ত প্রকাশ আমাকে ছোঁয় না কখনো
এ কথা জানাবার কোনো প্রয়োজন দেখিনা, তাই ভ্রূক্ষেপ হীন
আমি হেঁটে যাই দুরন্ত এখনো, কাদামাটি মেঠো সরু আলপথ
কিংবা অযথা অনুষঙ্গ নগরযান্ত্রিক ফ্যাশন ক্যাটওয়াক র্যাম্প
তফাৎ দেখিনা কিছু! একইতো হেলেদোলে চলা, স্থলিত গমন।
যে রঙে তুমি সাঁজাতে চাইছো প্রণয়, তোমার কর্ষিত অনুভব
অভিন্ন মাত্রার প্রত্যাশা বাতুলতা যদি প্রতীপ সহযোগ সংশ্রব
সঙ্গ সংযোগ রহস্য, নাহলে- লোহা কি আর জলে ভাসে বলো?
প্রেমজ প্রতিভাস
নাহয় ততোটুকু ঘন হয়ে দাঁড়ালে
যতোটুকু দূরত্বে কানে কানে কথা হতে পারে
অনুচ্চারণের নিঃশ্বাস কিংবা উচ্চারণের ফিসফিস
দইই যেনো স্পষ্ট হয়ে ভাসে,
হ্যাঁ, যতোটুকু নিকট কিংবা দূরত্বে
বুঝতে পারা যায়- এক নিবিড় সংযোগ
যেমন একই এক অস্তিত্বের অংশীদার হয়ে।
যদি রাখতে চাও আড়াল কোনো, রাখতেই পারো
তবে, নাহয় ততোটা খোলা রাখো নিজেকে, যেমন
খোলা রাখো খিড়কি দোয়ার খোলা অনুভবে, যেনো-
প্রেমজ প্রতিভাস স্থিত হতে পারে, অনায়াস প্রয়াসে।
তাই, নাহয়- ততোটুকু হৃদয় সংলগ্ন হয়ে যেয়ো
যতোটুকু লগ্নি হলে প্রেম যাপন সহায় হতে পারে-
যদি অস্তিত্ব সংকটে পৃথিবী আজ- অপ্রেম বিভ্রমে।
ওসব যদি বুমেরাং হয়
যে আকাশ রঙধনু রঙ সাজিয়ে রাখে
সে আকাশ এখোন কোথায়?
যে বাতাসে সব মানুষই নিঃশ্বাস নেবে
সে বাতাস এখোন উলটো বয়ে যায়!
আগুনের ধর্ম হলো পোড়াবে সে যাকিছু দাহ্য
কে কোথায় কেনোযে তার ইন্ধন যোগালো
আগুনের জানার সে সব দায় নেই কোনো!
হায়! তোমরা কেবল রঙ দেখেছো
আর ছাউনি কিসের তাই জেনেছো
তাইতো বিভেদ প্রভেদ আগুন জ্বালিয়ে রাখো!
আকাশ বাতাস অন্তরীক্ষেও বিষ ছড়িয়ে রাখো!
একবার নাহয় উলটো করে ভেবে দেখো
ওসব যদি বুমেরাং হয়-
আগুনের দহন কিংবা বিষের ক্রিয়া?
বুমেরাং এর ধর্ম হলো উৎসস্থলে ফিরে আসা!
বিকল্প বোধ অখণ্ড ধারনার
পারবে কি? তেল জলে এঁকে দিতে
বিকল্প বোধ কোনো,
যেমন অসবর্ণ সম্প্রীতি,
গভীর অরণ্য যেমন অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে থাকে নিবিড়-
শাখাময় কিংবা শাখাহীন রকমারি উদ্ভিদ
শক্ত সোজা কিংবা নরম লতানো শরীর,
কেউ কারো চলা পথে বাধা হয়ে নেই।
পারবে কি? এঁকে দিতে রঙ তুলি ইজেলে
বিকল্প ক্যানভাসে কোনো
সব রঙ শোভন প্রতীতি,
অখণ্ড ধারনায় পৃথিবী যেমন আকাশে নক্ষত্র নিযুত-
ছায়াপথে গ্রহ উপগ্রহ সচল অন্তহীন
হয়তো উৎস আলোর কিংবা আলোহীন,
কেউ কারো কক্ষপথে হানা দিয়ে নেই।
পারবে কি? তেল জলে এঁকে দিতে
বিকল্প বোধ কোনো, অখণ্ড ধারনা যেমন
অসবর্ণ সম্প্রীতির কোনো প্রতীতি চিত্রণ।
পথের কি শেষ আছে কোনো!
কেবল নমুনা ছক এঁকে তবেই কি পথ বাঁধা হয়?
যদিও কিছু পথ হয়তো পরিকল্পিত,
তবে সিংহ ভাগ পথেরই অগোছালো শুরু হয়
যেমন মেঠো আলপথ, বনপথ কিংবা পাহাড়ি সড়ক,
উঁচুনিচু এবড়োখেবড়ো চড়াই কিংবা উতরাই,
আঁকাবাঁকা, কোথাওবা সরু কোথাও চওড়া কিছু
অতঃপর- একসময় সব পথই গুছিয়ে নেয়া হয়।
কিছু পথ হয়তো সহজ গন্তব্যের
তবে সব পথই হয়তো গন্তব্যে পৌঁছাবার নয়,
যেমন এপ্র্যোচ, ফিডার কিংবা সংযোগ সড়ক
কিছু পথ আবার কেবলই গোলকধাঁধা্র,
কিছু পথ হয়তো শুধুই হারাবার, হারিয়ে যাবার
কিছু পথ নিশ্চয়ই- হারিয়ে ফিরে পাবার,
পথের কি আর শেষ আছে কোনো!
পথ কি কখনো শেষ হয় বলো?
হয়তো পথ মূলতঃ চলারই নামান্তর-
পথ যেনো তাই তোমার ইচ্ছারই প্রকারন্তর।