কাজী আতীক এর দুটি কবিতা
আমরা নির্বোধ নিশ্চিন্তে তাই ওরা নির্মম অনায়াসেআমাদের জেগে থাকারই কথা ছিলো
অথচ আমরা জেগে ছিলাম না
ছিলাম এক আচ্ছন্ন তন্দ্রায় বুঁদ হয়ে মতিভ্রম
তাই স্বভাবতই আমাদের স্বাভাবিক বোধগুলো
নিস্তেজ নির্বিকার কুম্ভকর্ণের সাথী হয়ে ছিলো।
যারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো- তাদের পোয়াবারো,
ইচ্ছে মতো হানা দেয় যত্রতত্র, যেমন আমাদের
অরক্ষিত ধানি জমি গোলাবাড়ি, গরুর বাথান
দুর্বল-চিত্তদের বুক পাঁজরের বেড়া ডিঙ্গিয়ে অবলীলায়
ইন্ধন জ্বেলে জ্বেলে তৈরি করে বিভীষণ
অতঃপর তাতিয়ে তুলে তাদের হিংস্র হায়েনা স্বভাব,
আর আমরা? এই ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলাম যে-
ওরা কেবল হয়তো একটু আধটু খামচি বসাতে পারবে,
কারণ ওদের বিষাক্ত নখদন্ত উপড়ে ফেলা হয়েছে আগেই,
অথচ ওরা কুটিল গুছিয়ে নিচ্ছিলো নিজেদের আখের
আমাদের নাকের ডগায় বসে- টের পাইনি একটুও,
কেনো না- আমরা তখোন অঘোরে সুখনিদ্রায় মগ্ন।
আসলে আমরা মূলত অর্বাচীন দলভুক্ত, তা’ না হলে
বার বার কেনো আমাদের সাথেই এমন হবে?
যেমন- আমরা তখোনও সুখ সুখ ভাব নিয়ে নির্বোধ
নিশ্চিন্ত ঘুমে, যখোন ওরা সদর দরোজা দিয়ে এসে
নির্মম অনায়াসে আমাদের পিতাকে হত্যা করেছিলো।
তারপরও কিভাবে- আমরা
এতোটা বোধহীন আয়েসি হতে পারি? কেনো বুঝি না কেউ
আমরা নির্বোধ নিশ্চিন্তে- তাই ওরা এতোটা নির্মম অনায়াসে?
আমি দুর থেকেই দেখি তাঁকে
(প্রিয় কবি শহীদ কাদরীকে শ্রদ্ধার্ঘ)নেই গেরুয়া বসন পরনে তাঁর নেই রুদ্রাক্ষের মালা তাঁর গলায়যদিও কণ্ঠে তাঁর মেঠো সুর বাউলেরগানের কথায় তাঁর সুফিয়ানা কীর্তন নেই,তাঁকে আমি হেঁটে যেতে দেখি, কখনো দিগন্ত ছুঁয়েকখনো মহাকর্ষ বলয়ের কিনারা ঘেঁষেআমি কেবল তার অপস্রিয়মাণ ছায়াটাই দেখিতাঁর গান তাঁর কথা আমি বুঝিনা কিছুই।কেবল এক তুমুল আকর্ষণ তার গায়কীতেআমি তাঁর পিছু নিয়ে যাইকী অবলীলায় তিনি পেরিয়ে যান সুউচ্চ পাহাড় বনানী প্রান্তরআকাশের মেঘ, পশু পাখি- সব জীবসাগর নদী- পৃথিবীর যতো জলাশয় তাঁর কাছে নতজানু হয়,হায়- যদি এই অপস্রিয়মাণ ছায়াটি আবার অবয়ব ফিরে পায় !কাছে মনে হয় তবু দূরে, বহু দূরেবাতিঘর যেমন দিশারী পথের, যেমন একতারা বাউলেরতেমনি পরিশুদ্ধ আত্মার নির্যাস তাঁর শব্দের কারুকাজ।আমি দূর থেকেই দেখি তাঁকে আসলেই কাছে যাওয়া হয়নি আমার।