কাজী আতীক এর ৫টি কবিতা
কাজী আতীক এর ৫টি কবিতা

 

তোমার কি কিছুই বিভ্রাট উপলব্ধি হয় না?

 

যখোন চেনা সুরগুলি অচেনা আবহে দোল খেয়ে যায়

যেমন চেনা মুখগুলো অচেনা আচরণে দুর্বোধ্য মনে হয়

একই সমতলে তবু বাতাসের প্রবাহ যদি ভিন্ন ধারায় বয়

তোমার কিছু কি বিভ্রাট উপলব্ধি হয়? নাকি হয়না কিছু!

 

জলের প্রবাহ কি আদৌ নিরন্তর হয়?

আগুনের শিখাও আসলে অনির্বাণ নয়

সত্যের নির্মোহ উপলব্ধি কি কেবলই কবিতা ও গানে

যখোন উল্টো গঙ্গা বইতে দেখো  নিত্যদিনের যাপনে

তোমার কিছু কি বিভ্রাট উপলব্ধি হয়? নাকি হয়না কিছু!

 

যেমন আজ বিজয়ের রঙে রাঙ্গা সবাই নৈবেদ্য জ্ঞাপনে

অথচ ক’জনইবা সঠিক ধারনা রাখে এই মহান বিজয় অর্জনের?

আর ক’জনইবা এর মর্ম কথা জানে?

ভান ভণিতা আর উৎসব সর্বস্ব এক আনন্দ কেবল, আর

শুধু ন’মাসের যুদ্ধই এখোন স্মরণ প্রণিধানযোগ্য অনেকেরই কাছে,  

যখোন সশস্ত্র যুদ্ধ নয় কেবল এর প্রস্তুতি পর্বটা ছিলো জরুরী ভীষণ

তোমার কিছু কি বিভ্রাট উপলব্ধি হয়? নাকি হয় না কিছু!

 

তোমার কি মনে হয় না এ কেবল এক নিজেকে বিপণন কৌশল।   

যখোন কোনো প্রভাব থাকে না এসবের যাপন ও জীবনে কারো?  

 

এতোসব দেখে শুনেও তোমার কি কিছুই বিভ্রাট উপলব্ধি হয়না বলো?

 

পরম আশা স্বপ্ন জাগে

 

এইতো আবার রঙ লেগেছে চোখে

রাঙা অবীর মেঘ আকাশে ছোঁয়া রেখে

আকাশ রবি অস্তরাগের পথ ধরেছে

তুমি তখোনমর্ত্য রবির বিভোর গানে

“কে আমারে কী যে বলে ভুলাও ভুলাও ”

 

সুরের লহর জোয়ার জাগায় প্রাণে

বুকের ভেতর পরম অশা স্বপ্ন জাগে

“বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও”

 

যেমন লগ্নি  হৃদয় মগ্ন দোলায় দোলে-

“আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ তোলাও”

 

খোলা চিঠি আরাধ্যকে

 

দেখো- মাস চৈত্র জুড়েই থাকে বজ্রের উৎপাত

তবু বসন্ত বিরাজমান সেখানে, 

 

অথচ  যে তুমি মিশে আছো নিঃশ্বাসে  

সেই তুমি রয়েছো জানি মহাসাগর বিস্তৃতি দূরত্বে,

 

যে কথাগুলো খুব সহজেই বলা যেতো তোমাকে

ভেবেছি বহুবার, তবু বলা হয়নি কখনো-

 

এই তুমি যতো পারো খিল দাও হৃদয়ের কপাট 

যতোই তাকাও তুমি শূন্য দৃষ্টি মেলে

তবু আমিই যে আরাধ্য তোমার জেনেছি অনুভবে।

 

দায়

 

এক.

চোখে তোমার সপ্তর্ষি আলোর উদ্ভাস দেখে

আমি নির্দ্ধিধায় নভোচারী হয়ে যাই-

তোমার ও'দুচোখেই উত্তাল সাগর সুনীল দেখে স্থির,

আমি যুগপৎ ডুবুরী হতে চাই,

 

তুমি কি এখনো সপ্তর্ষি মণ্ডল আর সাগর অতল

যুগপৎ ধারণ করে আছো ও’দুটি চোখে তোমার?

ভীষণ জানতে ইচ্ছে আমার-

আমি এখনো নভোচারী ডুবুরী সাজেই অপেক্ষারত। 

 

দুই.

সমান্তরাল চলায় কিভাবে সমন্বয়?

জানতে চাই না, তবে বুঝি- স্পর্শে আসা চাই,

কেনোনা- সারাজীবন পাশাপাশি হাঁটলেও

সংলগ্ন হয়না হৃদয়, বলে না কথা প্রেম,

অন্তত দু’পা ছোঁয়া চুয়িহাঁটতেই হয়।

 

ভালোবাসি বললেই প্রেমী কিংবা দেশপ্রেম নয়

আর কথায় কথায় অঙ্গীকার- মীরজাফরের দোসর।

আসলে- দায়বদ্ধতারও প্রমাণ থাকতে হয়।


গোটা পৃথিবীই পথ হারালো অচিরেই

 

কিছুটা অবিন্যস্ততা হয়তো ছিলো তবে ঠিক ব্যাধিগ্রস্ত ভূমি ছিলো না মোটেই   

রাতে নিযুত নিক্ষিপ্ত বজ্র আঘাতের পর কিছুটা বিশৃঙ্খল থাকতেই পারে সকাল

তবে দেখেছিলাম সেই এক নিপুণ হাতে সব গুছিয়ে নেবার প্রাণান্ত অঙ্গিকার,

আর শুধু কি তাই? সবার কষ্টগুলো ভাগ করে নেবার এক আশ্চর্য উদার মনন।

 

অথচ নিজেকে বসিয়ে রেখেছিলেন তিনি আগুনের লেলিহান শিখার উপর

কেনো না ভাগাভাগির বিশ্বে তখোন জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনটি 

বেগবান হোক তা কি আর হতে দিতে পারে আগ্রাসী সব শকুন মোড়ল। 

 

তাই- দুপুর গড়াবার আগেই ওরা ছড়িয়ে দিলো রাশি রাশি বিভীষিকা

সরাসরি মরণ আঘাতে করলো ঘৃণিত দুরভিসন্ধির কুৎসিত বাস্তবায়ন 

রক্ষকদের মাঝ থেকই ভক্ষক বানিয়ে নিয়ে তারা সেরে নিলোকু কাজটা।

 

অতঃপর- শুধু কি বাংলা, আসলে গোটা পৃথিবীই পথ হারালো অচিরেই।

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান