কায়সার আলম এর গুচ্ছকবিতা
কবি : কায়সার আলম
রূপ
দূরত্ব নত হও, খ্যাত হও বাগান আমার—
আমি দেখি যেন দেখতেই থাকি
প্রাণের ক্লোরোফিল তুমি, ফুঁটে ওঠা প্রত্নবিবরে
হাতে ধরে মুখের চামুচ;
যেন কোন কোন জলমানুষের মুখোমুখি পরিচ্ছন্ন আঙ্গুল তুলে সাজানো ড্রয়িং;
কী রূপ তোমার!
চাওয়ার শিল্পরূপ
তুমি রাতের নক্ষত্রের মতো কত দূরে বিচ্যুত—
প্রতিদিন অনুনয়ে এসে অনুনয়ে দূরে দূরে চলে যাও;
কোথাও নির্জন জলে তোমার মুখ ও ভরা জোছনার গ্রন্থায়ণ এক হয়ে যায়,
আর প্রতিপক্ষ আকাশ
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাথার উপরে ভেঙে আসে।
তুমি কেনো অনুনয় বুঝো নাকো—
চাওয়ার শিল্পরূপ তোমার কি জানা নেই?
নারীসমুদ্র
এক সমুদ্রে সাঁতার কাটছি
অথচ আমার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার কেউই শুনতে পাচ্ছে না;
না নারীটি, না নক্ষত্রটি;
না, এই পৃথিবীর কোন প্রাণীই আমার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না;
আমি কারও চোখের দিকে তাকিয়ে প্রতি মুহুর্তেই গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি।
খোঁজ
জলজ্যান্ত মানুষগুলো কুয়াসার শাড়িতে কেউ কেউ—
আবার বিষণ্ন, হতাশ, উৎসুক, সুখী,
প্রকৃতি প্রেমিক,
কবি কিংবা শিশুতোষ চেহারার;
কত জনের সাথেই তো দেখা হয়, অপরিচিত—
অথচ তোমার সাথে দেখা নেই একশত বছর;
কেন যে এত কম ক্ষুধার্ত তুমি—
প্রথম পড়াতেই মুখস্থ বহু জানা এক নামের বানান,
আজকাল মেঘ হয়ে বেশি বেশি তবে কী ঘরেই থাকো!
চোখের মণিতে চোখ না ফেলার আক্ষেপ নিয়ে উড়াই আকাশ,
কেবলি যে সন্ধ্যায় মৃত্যুর কথা মনে হয়—
রাজষিক প্রেমিকা
কবিতার মতো এই রাতে তোমার ঠোঁট কেঁপে-কেঁপে উঠছে,
কোন পড়া মুখস্থ না ক'রে তুমি বসে আছো।
তোমার চিন্তিত মুখের দিকে ছুটে যাচ্ছি আমি,
গাঢ় গাঢ় নিঃশ্বাসে ভরে গেছে ঘর;
জানালার শিক্ ভেঙে উড়াল হাওয়া লাগছে কপালে।
পা খুলে, বাঁ দিকে চুল এলিয়ে
যেন কোন রাজষিক প্রেমিকা তুমি বসে আছো খাটের উপরে;
তোমার ছবিশরীরের প্রযত্নে নামছে অপূর্ব অন্ধকার—
পোট্রেট
সৃষ্টিকর্মটি তাকিয়ে রয়েছে নির্বাক ও দৃষ্টিকটুভাবে—
নির্মাণের সবটুকু বেয়ে উপচে পড়ছে তাৎপর্য,
আহতরা হাসপাতালের দিকে মুখ ক'রে আছে,
কেউ কেউ সুসজ্জিত শহর ভেবে ছড়িয়ে দিচ্ছে মহিমা।
চাক্ষুস চোখের ভাষায় ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে সে
আর অতলগভীর থেকে ঝলসে যাচ্ছে অনাবৃত মহীরুহ।
ব্যক্তিগত উপমার গাঢ়তা কিংবা আদরের প্রতিশ্রুতি
লীন অথবা সেলাই হয়ে আছে মুখের স্বপক্ষে
না, এটি পিকাসোর করা কোন পোট্রেট নয়;
অামার হৃদয় দিয়ে অাঁকা হৃদয়ের অাদল এটি—
লজ্জাবতীর হাড়
নজর পড়তেই মুসড়ে গেলো লজ্জাবতী
পথের বিছানা খুলে শামুকের পায়ে হেঁটে হেঁটে দেখা তাই
সংক্রামক চোখ লাল অথবা
কাঠের ফাঁটল থেকে আয়োজিত অনিয়ন্ত্রিত সূচি—
এক, দুই, তিন।
আরও রাত থেমে থেমে পশুটা বেড়িয়ে এলে
হৃদয় জানালা দিয়ে গান-গান শোনা গেলো রোল—
ভেলায় ভেসে গেলো রাগ; সকল রুচি, আসক্তি ও ধর্মাদেশ।
তীক্ষ্মতা প্রবিদ্ধ হলে স্বাস্থ্যগত প্রভূদের অভিজ্ঞান শেষে
এসে যায়
দৌঁড়ানো পা—
পায়ের মাপে মাপে তৈরি হয় ব্যাসের ফারাক;
চোখ তার ডাগড়ের ভাষা থেকে যেন একেকটি পাজড়ের হাড়।
বনবিহার
এমন প্রাকৃতিক শুভেচ্ছার রাত,
এমন গণিতের ভাষায় বৃষ্টির টুপুর
ঢুকে পড়ে নি আমার ছাত্রাবাসে, আমার মস্তিষ্কের ভেতর,
কিংবা আয়ত্বহীন এক ঝাঁক কবিতার ভেতর।
রূপক আলোর নিচে নিমফল ঝরে—
কেন তার বিষয়াদিতে ভরে না মুঠোহাত?
তারা কল্প হয়, কল্পতরুর ডায়াফ্রামে
ঢুকে পড়ে পাংশুটে প্রাণ—
খই যেন উড়ে যায় বাকলের ঘ্রাণে।
আমাকে ডেকেছে আজ রাত, বৃষ্টিপ্রবল কেবল সন্ধ্যাগ্রাম;
আমাকে ডেকেছে আজ অনেক জীবন্তকথা,
অার জলঘরে ঢলে পড়া বনবিহার;
আমি যে তার জ্বালামুখের শিঞ্জন কুড়াই।