১.
অবকাশ
আপেল বা কোন বলের মতো একটি ছায়া আমাকে নিয়ে লুফোলুফি খেলে
আকাশে বিদ্যুৎ হেসে চলে গেলে
বাদামী বিকেল পরিহাস করে!
পাহাড়ের স্তব্ধতায় জমে মান-অভিমান কালের ফসিলৃ
পা ফেলতেই মচমচ কচকচ
আমি ও আমার শব্দগুলো গুটিদানার মতো ঝরতে থাকি শিশিরের সাথে
রোয়া ওঠা উঠোনে চাঁদের এক্কা দোক্কা।
স্বয়ম্ভর সময় হাতের মুঠোয় ধরতে ধরতে বাগিচায় জমে ঘাসপাতা
সাগর উপকূলে বুলবুলের শোর উঠে; কখনো আইলা..
.
বাবা বলেছিল, ‘ধৈর্যের দিঘি প্রশস্ত কর তবেই অবগাহন হবে।’
অপেক্ষার আকাশ দৈর্ঘ্য-প্রস্তে ব্যাপ্ত হল
অবগাহনের আগেই পৈঠা পার হয়ে আমরা পৌঁছে যাই অবকাশের খেয়াঘাটে..
২.
দাগ
ছুঁয়েছিলে অঘ্রানের কালে-
মৌমাছিদের ডানাভাঙা শব্দে যখন
ধূপের গন্ধে পোড়ে গোপন প্রশ্বাস।
ফাগুনের উষ্ণতায়
নাভিমূল থেকে কাটে তন্দ্রা-ঘোর
কেটে ঝেঁটে ছুঁড়ে ফেলি পুরনো অসুখ।
এবার ঘামের গায়ে স্মৃতির চাদর
স্মৃতি হয়ে, মেঘ হয়ে এ ভরা ভাদর
এখন স্পর্শে রাখ স্পর্শের দাগ।
৩.
বিবেক
পড়ে থাকি এ-শব্দায়মান শহরের একপাশে।
কঙ্কর জড়ানো ঘাস;
সময় শিথিল ঘাসের তলায় করাত বালুতে।
আমি দেখি-
কারও বিষণ্নতা ও ছায়ায় কারও উন্নাসিকতার বিলুপ্তি;
এই ভালো কিছু নেই আকাক্ষ্খা বা আবদার।
জলে পাতা পড়ার শব্দে চতুর তক্ষক যেমন সতর্ক হয়
তেমনই সতর্কতা-
তেমন সুঁচের মতো সূক্ষ্ম বিবেক
হামাগুড়ি দিয়ে কোথাও লুকিয়ে থাকে।
৪.
পাতা ঝরার চমক
পাতা ঝরার শব্দে তুমি চমকে চাইলে
যেন শুনতে পাও পুরনো দিনের স্পন্দন
যখন স্পর্শ করেছিল সকাল সন্ধ্যাকে
চিরহরিৎ বনের পাশ দিয়ে বেঁকে যাওয়া রাস্তায়
থেমে যাওয়া মুহূর্তও তো
আঁজলা ভরে রাখে মুহূর্তকাল
তোমার পিঠের কাছে জমানো ব্যথা
শরীরে প্রাগৈতিহাসিক ছায়া
তুমি কেটে যাচ্ছো আবহমান সুতো
শুধু নোঙ্গরে জমা হয় গুটিকয় মুহূর্তের
চমকে ওঠা বার্তাৃ
৫.
বিচ্ছেদ
আমরা পরস্পরকে কিছুই দিতে পারি না
অপরিমেয় বিচ্ছেদ ছাড়া
বিচ্ছেদ কেবলই বিচ্ছেদ
চোখের জলের সাথে সাথে মিশে থাকে ধর্মান্ধতার ক্রোধ
যা সব অর্জনের সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়
হৃদয় প্রগতির তন্তু বয়ন করে এধার ওধার দোল খায়
যেন বাবুইয়ের ঘর
ঝড় ও তান্ডব বিচ্ছেদ ঘটায়
শিকড় ও চূড়ার সংযোগ...
কিছু কিছু অক্ষর তো ছেড়ে দিতেই হয়
কিছু কিছু মৌলিক মূহু
হোগলাবনের ঝুলনকাল নয়তো হঠাৎ চমকে দেওয়া
ভোরের স্থাপত্য
ইচ্ছার অনতিক্রমনতায় জড়িয়ে থাকি অতি বিচ্ছেদকালে...
৬.
তোমার ফাগুন চোখ
তোমার ফাগুন চোখ জেগে
এই শিল্পিত কল্পিত কাননে
সিঁদুরের ছায়াঘন আলো যেন সিঁথির ছায়ায়...
ফাগুন কি ফোটায় ফুল দূরতম গ্রাম, মরুপথে!
ফাগুন কি অপেক্ষা জ্বালে যেখানে নদীর ডাক,
বটের ঝুরি নুয়ে ছুঁয়ে দেয় অনুপ্রাসকাল?
তোমার ফাগুন মন বল্কল খুলে
ডেকে নেয় মহাজাগতিক সৌরভ-স্মরণ।
তোমাকে ভেজাবে বলে স্নিগ্ধতা শিশির হয়;
সেঁজুতির নীচে ছায়া জমে;
জাগতিক ছায়াসব সরে যাবে কিনা!
ছায়ারা থাকুক আলোছায়া দুই বোন
সুফির ক্কালব
তোমার ফাগুন চোখে নেচে বেড়াক
আহ্লাদী অহল্যার মতো।
৭.
ধর্ষক
ভাঙা চিমনির সাথে পড়ে আছে তোমার মুখোশ ও একটি কাটা হাত
মার্বেলের মতো একটি চোখও কিছু দূরে-
লেজকে পকেটে পুরে তুমি দৌড়ে পালালে
সে অবধি গড়িয়ে গড়িয়ে হাসছে সাংসারিক কয়েকটি হাঁস...
৮.
ভিউয়্যার
দিনক্ষণ ভালো নেই
ভবঘুরে বানভাসি
মনে পড়ছে তোমাকে জারুল
তুমি তো বদলে বদলে আদুল হয়েছো
দাও না আদুল স্পর্শ
লাইকই ভালো
কমেন্ট নাই হলো
ফলোও হতে পারে
না হয় শুধু ভিউয়্যার
আলোর মৌমাছি ছুটছি আলোর সুতোর টানে
পথ তো ছুটেই গিয়েছে
মতও
সরিষার বিকেল ছড়িয়ে পড়েছে
বাঁশ বাগানের মাথায় গোলগাল স্বপ্ন বুনন চলে..
৯.
ভোরের বেহালা
সকাল গাইছে
মৃতদের জন্য কয়েক ছত্র শোক
কেন্দ্র ঝুলে পড়েছে বৃত্ত থেকে
শিশুরা গিলছে গপাগপ ললিপপ
বৃষ্টির বেহালা আর খেঁকশিয়ালে কোরাস
ভাষা ছুটে যাচ্ছে মুখ ও কলম থেকে
কেউ তাকাচ্ছে না কারও দিকে
তাকিয়ে দেখছে গোর খোদক
ছায়াহীন পাথর গড়িয়ে পড়ছে...
১০.
প্রেমীর জন্য
শরতের ঠোঁটে রাখা চিঠি পড়েছ কি তুমি?
কাশফুলের উজান-ভাটায় বাতাসের ঢেউ
আবির মার্ ভোরের নকশা
ঘুমের দুপুর
বিকেলের স্মৃতি
সন্ধ্যার গতি
রাত্রির নিরিবিলি নির্মাল্য বিতান...
তোমাকে ছোঁয়ার মতো একটিও আকাশ নেই
অথবা সাগরের ঢেউ
বৃক্ষের অধরে জমা হাজার বছরের ক্লোরোফিল
বুকের উদার জমিন ছড়িয়ে বেগবতী মল্লার রাগ
বাঁশরীর উদাস গীতিকা ব’য়ে ঝরা শেফালিকা
তুমি কি জমাট বাঁধা হাজার বছরের অজন্তা ইলোরা...
তোমাকে পাঠাই হেমন্তের ছায়াবীথি
শীতের স্থবির সহ্যগাথা
বসন্তের রঙিন পৃথিবী
বৈশাখের বাঁধভাঙা ঝড়ের উন্মাদনা
বর্ষার বিবিধ বৃষ্টির রিমঝিম...
বিনোদিনীর প্রেমের বাতাসে উন্মাদিনী লক্ষণশ্রীর তেঘরিয়া
কাঁখে কলসী ব’য়ে অগ্রসরমান ধোপাখালির রজকিনী
পাহাড়ি ফুলের ডাল হাতে ঢাল বেয়ে নামা মারমা তন্বী
উজ্জয়িনী তটিনীর তীরে কার অপেক্ষায় জমানো ভাটির গান!
পায়ের তালে তালে তোলে বোল সাঁওতাল পল্লী
তুমি কি ছুঁয়েছ কুয়াশা শেষে রোদের কেশর
গানারিয়া মনিকাটা পাতার নৌকা বেয়ে
তুমি কি গেয়ে যাও ডি নদীর গান!