সানাউল্লাহ সাগর মূলত কবি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ, সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগে লিখছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাসও লিখছেন নিয়মিত। তিনি ১৯৮৬ সালের ৪ আগস্ট বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন দক্ষিণ ভূতের দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। শিক্ষা জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে এমএ ও ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগ থেকে এমএসএস শেষ করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সম্পাদনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘বাংলাদেশের ব্যঙ্গ সাহিত্য’ বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন।
প্রকাশিত কবিতার বই—
অলৌকিক স্বপ্নের যৌথ বিবৃতি [ আড্ডা প্রকাশন, ২০১৩]
সাইরেন [ আড্ডা প্রকাশন, ২০১৫]
কালো হাসির জার্নাল [ চৈতন্য, ২০১৬ ]
মাথার এপ্রোন [ অনুপ্রাণন প্রকাশন, ২০১৯ ]
গল্প—
লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর [ অনুপ্রাণন প্রকাশন, ২০২০ ]
উপন্যাাস—
গুহা [ অনুপ্রাণন প্রকাশন, ২০১৯ ]
সম্পাদনা—
লিটলম্যাগ ‘আড্ডা’ [২০০৬ সাল থেকে...]
এই সময়ের নির্বাচিত গল্প [পৌষি প্রকাশন, ২০১৬]
.......................................................................................................................................
তৃতীয় বিশ্বের হাতঘড়ি
বিভৎস দৃশ্য থেকেও তোমার ঘ্রাণ উজ্জাপিত হয়
রীতি বিরুদ্ধ উচ্চারণের মতোন প্রবাহিত হয়,
উজ্জ্বল, গাঢ়, ফুলেল উৎসবে ঘোষিত হয় তদ্রুপ
যেন রহিত ইচ্ছারা করুণার মৃদু স্পর্শে মরে যায় দ্রুত।
এইসব বিবিধ সঙ্গদোষ নিয়ে দাঁরিয়েছিলো মাটি
নিয়মের বিপরীত দরজায় শোরগোল ওঠে
বঞ্চিত ফুসফুসের কাছাকাছি কোথাও
উত্তলিত হয়েছিলো জীবন।
অসংখ্য রেখাপাত নিয়ে আরো কতো মায়ের খরগোশ
ছুঁড়েছে নিরবতা―বিরল!
যেন এরা উৎসর্গ হবে রয়ানির খবরপত্রে;
আহা শৈশব―একতারায় নিমজ্জিত কোয়ারেন্টেন
মস্তিষ্কের মেঠোপথে চলে গেছে জলে।
ঢেউহীন স্রোতে শর্তাতীত বাইলোজী ক্লাস;
সেদিন ছুটি ছিলো―
পুরো গজলের বিরতিতে শ্রদ্ধা ফেরত
ময়না-টিয়ায় মাবুদ দিয়েছিলো দিন।
অথচ আমাদের হাতপাখায় কিলবিল করছিলো
নাচের ক্লাস―ফুলশয্যার কান্না;
এবং ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত ঔষধি অক্ষর, শব্দ।
―আবার উদ্ যাপিত হলো মেট্রো দৌড়ের সুঘ্রাণ
মর্দ ফুটপাতের মুখাবয়ব;
জলন্ত গানের এতিমখানা―
যেন নিরাকার স্বপ্নে উঠে যাবে অচেনা দূরবীন
আর বৃদ্ধ ঘ্রাণ থেকে ছুটি হবে আমাদের।
দুই
ছেড়ে যাওয়ার উৎসব থেকে তোমাকে ডেকে যাই
উৎস বিমুখ চাঁদ থেকে সাড়া দাও;
উৎড়ে যাই অঙ্গার হওয়া জীবন―
চলমান এইসব ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ রেখে আমরা শোকের হিসেব নিয়ে বসি
কারো হাতে বেলারুশ তো কারো হাতে ইসরাইল
কারো মুখে ফিলিস্তিন তো কারো ঠোঁটে মোসাদ।
অন্যদিকে নাবিকহীন সন্ত্রাসে ছয়লাব হয়ে গেছে আক্রোশ
―পৃথিবীতে আমাদের কোনো শুক্রানু নেই;
মানুষ মোকাবেলায় আমরা নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুলে ফেলি।
গুনে গুনে মিলিয়ে দেখি আদিম যৌবনের সাথে
স্বকালের পার্থক্য কতোদূর―
অতঃপর আমাদের জেল জীবনে হরতাল শুরু হলো;
বৃহৎ চিন্তায় কেউই পাত্তা দিলো না এসব।
কিন্তু বহুদিন প্রবাহিত হলো, তারপর―
পরিষ্কার সমোজতায় বিস্তার ঘটলো মানসিক সভার;
চোখের এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ফুটে আছে অদৃশ্য অন্ধকার !
আবার আমি নিজেকে ডাকি―
সভ্য নামের আড়াল থেকে বিড়িয়ে আসে আমেরিকা,
রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া;
আর বিষাদ দাঁতের বিষে আমি আড়ালে
আরো আড়ালে হারিয়ে যাই দ্রুত...
তিন
শেষ দুপুরে একদল খরগোশ এলো―
চোখে-মুখে শধ্য আরবের শ্লোক;
প্রপিতার ছবি নিয়ে দৌড়াচ্ছিলো, দ্রুত পায়ে
অন্য সন্ত্রাসের দিকে―
যেন পৃথিবীর সকল স্নানরত রমনীরা
ইশকুল ফেরত বালকদের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে
স্বাদের উজানে।
আর নিত্যপতোন্মুখ রোজার মতোন
বেকসুর ঘোর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো কেউ একজন;
অথবা হাজার চোখের দেশ !
আমাদের কাছাকাছি―শুদ্ধ ভাঁজের অন্তরালে,
যেখানে দুপুর আসে নুপূরের স্বরে;
চুপচাপ রটে যায় ঘুম―
কেবল কাঁটাতার জুড়ে লেপ্টে থাকে আফোদিতির সন্ন্যাস।
তারপর―আমাদের আকাশ জুড়ে সংকেতিক চোখগুলো
একদল খরগোশ খোঁজে;
আর আমরাও বুঝে যাই
পৃথিবীতে প্রকৃত খরগোশরাই একদিন মানুষ হয়ে ওঠে !
চার
পায়ের মুখে একটি গোলাপ গাছ
অথবা একাধিক বৃত্তান্ত মূখর বৃন্দাবন।
ফুটেছে শৈশব, কুলীন শহরের গলিত ফুসফুস;
মগডালে তারার হাট বসেছে
নগন্য আড়ালও নাই কোনো!
কেবল পায়ের সহজ শিশুতোষ নিয়ে স্থির গোলাপ কাঁটা,
যেন তার জানা নাই
পায়ের আড়ালে পথ কাঁদছে―বহুদিন।
এসব গর্গল ভুলে গিয়ে নেশা বাজাচ্ছিলো দোয়েল
তার শরীরজুড়ে মঙ্গার ধানচিত্র;
ক্ষুধার বাহাস নিয়ে সে দাঁড়িয়েছিলো একদিন
বড় ঢোলের পাশাপাশি―মুখোমুখি,
যেন পরিচিত তারা যুগ যুগ কিংবা শত শতকের !
কিন্তু তারা অচেনার মতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো গোলাপের দিকে
পরিত্যক্ত পায়ের শরীরে;
সে আমার পা―আমাদের ভবিষ্যৎ।
আমরা বুঝতে পারলাম না এই পায়ের দল
একদিন বিক্রি হয়ে যাবে
মাঠ-ঘাট থেকে তৈলাক্ত ঘাম দেশ বদলে,
মুখ বদলে শাদা পায়রা হয়ে যাবে !
সেখানে গোলাপ কাঁটা
কিংবা কোনো নগ্ন ফুটপাত থাকবে না।
পাঁচ
পথের মোড়ে মোড়ে বটগাছ―অচেনা পথিকও প্রচুর;
জমে আছে―যেন ইদের নামাজ ফেরত
মায়াবি মুখের জায়নামাজ।
আমারও ইচ্ছা ছিলো বটগাছ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো;
পথে―উঠোনে, পুকুরে, নদী ও সাঁতারের ভঙ্গিতে!
দূরপাল্লার হরতকীতে লিখিয়েছি ঘুম ফেরত মুখ,
অসংখ্য যুদ্ধ জয়ী ক্লান্ত চোখ।
আরো মনের মধ্যে রোপিত হয়েছে হাজারো বটগাছ;
বিনা বাক্যে নিজের প্রত্যাবর্তন দৃশ্য নিয়ে
তৈরি হলো প্রার্থিত পথিক, মাঠ তলানো বৃষ্টি।
আমার চারপাশে গজিয়ে উঠলো বৃষ্টি শেষের রাত,
মুদ্রণ অযোগ্য―কোকিল।
জমানো পথ ভঙিয়ে আমি―একদল পথিক কিনলাম
আর সমস্ত বটগাছের ছায়া থেকে প্রত্যাখাত আমি
হয়ে উঠলাম শতবর্ষী নিখুঁত বটগাছ !