গুচ্ছকবিতা : রওশান ঋমু
গুচ্ছকবিতা : রওশান ঋমু

 ধূসর নদীর এপার ওপার

জানি না, শ্রাবণের নীল নীল বৃষ্টিতে বসন্তের কোকিল কার বুকে ডেকে যায়কার ঘুমে ওৎ পাতে রাতভরসারাদিন কাঠবাদামের তলে এলোকেশে বসে কী কথা কয়চায়ের কাপ চুমুকে চুমুকে খালি হলে তলানিটুকু শুষে নেয় কার নাশপাতি চুম্বন মনে করেপাহাড়ের সবুজ বনে লন্ঠন ফুলে গোলাপী কান্নার প্রজাপতি ঘুরে ঘুরে উড়ে, নাম জানো ওই পোড়া চোখের? জানি জানি, ওর নাম শৈশব, কতো ঝিমঝিম দুপুর কেটেছে লাল, হলুদ, কমলা মায়ার পেছনে ছুটেশৈশব জানি, কৈশোর জানি অথচ তারপর জানি নাজানি না প্রিয় ঋতুর নাম, জানি না প্রিয় ফুল, ভুলে গেছি প্রিয় রঙমনে পড়েনা  কবে বলেছিলে, চিঠি দেবে, গভীর রাত্তিরে জানালায় বসে থাকি ভাঙা চশমার কাচে ছা পোষা চোখ মেলে,  বলেছিলে, চিঠি আসবেপ্রতীক্ষার গোপন হাতঘড়ি ছুঁয়ে আছি, হু হু করে বুক, চিঠি আসবেইপড়ে পাওয়া জীবন জানে না, সযতনে লুটপাট হয়ে গেছে ঘরের যত দরজা, জানালাআহা, ঘর! আঙুলের ফাঁকে গলে বিশ্বাস, প্রেম, ভাসমান প্রণয়ক্ষতটুকু বেচতে চাই স্বল্প মূল্যে, দেবালয় থেকে যদি আসো নাহয় দিয়ে দেবো বিনামূল্যেদুঃখ সুন্দর, দুঃখ সিঁদুরের লাল রঙ স্রোতসাঁতার শেখা নেই বলে মেঘের গন্ধে ডুবে যেতো হাহাকার  কাঁচপোকার নীল আভা কপালে এঁটে ভুলে যেতে চাই ধূসর জীবন

 

নীল হলুদের বিষাদ দিন


মন পুড়লো আবার,

ভুলেছে? ......

অলিগলি পেরিয়ে,

জবার ঝোপ

আর ডাস্টবিন ডিঙিয়ে

পুরোনো উঠোনে দাঁড়াই,

 

দড়িতে ঝুলছে হলুদ শাড়ি

বাতাসে উৎকট সুখের ঘ্রাণ

 

ভুলেছে .....!

 

চোখের কোলে ঝরতে চেয়েছে

অভিমানী নুনজল,

পুনর্বার ফেরত পাঠাই তার স্পর্ধা,

অমাবস্যায় চাঁদ চাইনা আর

 


 

সূর্যমুখী

 

বারবার সে জিজ্ঞেস করতো, ভালোবাসি কিনা, স্মৃতি চিহ্ন কিছু জমা করি নাকি বাতাসের বুকে, সন্ধ্যাতারার চোখে কতটা শান্তি অলস সময়ে বুনে রাখি?  বলেছিল, প্লিজ ভুলে যেয়োনা, বিষ খাব যদি ভুলে থাকোএতোদিন পরে দেখলাম সে ভুলে আছে, দিব্যি বেঁচেবর্তে আছেআজো এই বিকেল বেলাটায় তার কথা ভাবি, এখনো খাঁ খাঁ রোদ্রে যখন সবাই ঘরের ভেতর শান্তি খোঁজে, আমি ভাঙা মন্দিরের দেয়ালে কবেকার লিখা তোমার নামের শরীরে হাত রাখিএকটা সন্ধ্যা ছিলো ছায়া ছায়া, মাটিতে নারকেল পাতার নকশা আঁকাতুমি সাগর পাড় থেকে ফিরেছো, হাতে ঝিনুকের মালা, আমার বুক ভরা সুখ তোমার চোখ জুড়ে হাহাকার

 

একদিন দেখা হবে নিশ্চয়ইপথে নামলেই ডালিম ফুল মাটির গভীরে শেকড় প্রসারিত করে বাল্যকালের উজ্জ্বল শিহরণেগুছিয়ে রেখেছি সম্পূর্ণ দুঃখ ও সুখ পুকুরপাড়ের লিচুগাছটার অলিতেগলিতেকোমল সুন্দর দীর্ঘশ্বাস, তোমাকে ভোর জেনে কতদিন আমি জেগে উঠেছি রাত্রির নিঃশ্বাস ফুঁড়েরোদের কমলা প্রেমে কপালে সেঁটে দিয়েছি বাঁশি রঙ টিপআমার নিবিড় দিনগুলি ঝিনুকের বুকে রুপবতী মুক্তো, নক্ষত্রের অশ্রু বুকে নিয়ে নিষ্পলক দুইজনএকজোড়া চোখ কেঁদেছিল চাঁদের বিবর্ণ রাত্রে, নয়নতারা চোখ মুছেছিলো সেতারের তারে তারেতোমারি তৃষ্ণার্ত দুপুরের ওমে তরমুজ ক্ষেতে গ্রীবার আশ্চর্য ভাঁজ খুলেছিলে রক্ত প্রবাহেআপাদমস্তক প্রজাপতির পাখার চিত্রকল্পএকদিন বর্ষায় বৃষ্টিতে তুমি  অন্যমনস্ক,  না বলে গেলে শুকতারার মুগ্ধ মুহূর্তের কথাবহুদূরে নয় মেঘজল, তুমি ডাকলেই গোপন কপাটে হু হু স্বরে ভেসে আসে কমপক্ষে কুড়িটা বছর

 

 কোনোদিন সিঁথির মাঝপথে চুপিচুপি রামধনু রঙ দিয়েছিল কিনা ভুলে গেছিভুল করে ভাঙা পথে পথবাসী করলো সে আচ্ছন্ন করে সন্ধ্যার ধূপের আড়ালহারমোনিকা ঠোঁটে চেপে যেয়োনা তুমি, এইপাড়ে শিখেছিলে  সাজগিরি, কপালে বেজেছিলো ঝুমঝুমি অবিশ্রান্ত রিমিকিঝিমিমনে রেখো ভোরবেলা ভরাট থাকে জলরঙ কোমলতার গন্ধে, তোমার দেহের নির্যাস জলকাদা হলো উড়ো ঝড়ের শেষেআকুল চোখে চোখ রেখে কেটে যেতো তোমার কাঁটাবেঁধা প্রতিটা দুপুরজানালা পছন্দ করোনা, মাটিঢাকা পথ পছন্দ করোনা, কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বলতা অসহ্য বোধ হয়, একটা সন্ধ্যা কাটিয়ে দাও মদের জাফরিকাটা গ্লাসে চুমু দিয়ে দিয়েবর্ষা আসে জারুল বনে বেগুনি বাতাসে, বকুল কুড়িয়ে গোপনে  বিবশ বুকের বিবর, তুমি টের পাওনামেঘমল্লারের উপেক্ষা হেঁটে হেঁটে আসে ভয়ানক ফনীমনসার কালোরাত্রিএই বৃশ্চিক কামড় রক্তের ভেতর পুরাতন পতঙ্গের বিস্মৃত অনিদ্রা

 

 

 সবুজ পাতার শৈশব

 

এতোদিন জন্মজন্মান্তর ভুলে ছিলামপেছনে ফেলে আমাকে  চলে গেছো ভবিষ্যতের সুড়ঙ্গেসময় হারিয়ে দিলো  অলস রক্তরেখাতোমার দৃষ্টি এখন ঝাপসা, চুলের রুপালি দাহ দৌড়ে বেড়ায় কালোমেঘের বৃত্তেদাঁড়াও, আমিও পৌঁছে যাই শীতের তীব্র মধ্যেরাতের ওপারেস্বর্ণচাঁপা,  মুছে ফেলো অবলীলায়  সুগন্ধ যতশুধু  ফিরতে দাও তার চড়ুই পাখি হৃদয়েসে কোলে তুলে নিক আমার হারানো শৈশব, আঙুল ধরে ফের দাঁড়াতে চাই ভরা রোদের দিনেফাগুন বাতাসে তার চুলে দেখি পলাশের মালা গাঁথা,  নাকে আসে ফুলের, চুলের ভিজে ঘ্রাণ

 

অনেক পরিশ্রমের পর তার বুকে অগ্রহায়ণের সন্ধ্যার মতো বেঁচে থাকি অনেকক্ষণভাঙা দেয়ালে খেলা করে  শ্রাবণ বিকেলের পুরাতন ছায়া, থৈথৈ জলে ভেসে যায় নীল কাগজের নৌকা ছেঁড়াফাঁড়া সেইসব একান্ত স্মৃতি নিয়েএকটা হাঁসের ছবি অনেকদিন পরম আদরে রেখেছিলাম বইয়ের ভাঁজেআজ সারাদিন সেই ছবিটার জন্য বিপন্ন বোধ হলোতুমিই পারো আমার ভিখিরী বেশ ঘুচিয়ে শস্যময় দিগন্ত ফিরিয়ে দিতেএকাকী দাঁড়িয়ে আকুল হয়ে ডাকছি, এসো, এসো  চোখের নীচের কালো দাগ হয়ে এসো, রাতের ঘুম হয়ে এসোঅনেক  অনেক রাতে আমি জড়াতে পারিনি  দশ আঙুলের গল্পে   ঘন অন্ধকারে চুরি গেছে  টিনের ঝুড়ি ভর্তি কাচের চুড়িআলতার বোতল আজীবন কেউটের ফণা ধারন করে

 

 জানাতে চেয়েছে কতোটা পৃথক তুমি

 

তোমার সবুজ পাখনায় আকাশের গন্ধ

জানি আমি,

ভাঙনের বিষন্নতা সবার জন্য নয়

পাথরভারী পা গভীরে শেকড়

খোঁড়াখুঁড়ি করে অনাদরের রঙ জানবে না দেবতা

শুনবো কখনো, স্তব্ধতার রঙ চিরদিন লাল

মাতালের শহরে বৃষ্টি এলে অকস্মাৎ,

ছাউনি খোঁজে সকলে বেভুলে

বুকচেরা বিকেলে ঝড় উঠলো

রাস্তাঘাট ফাঁকা,

পুরনো শহর আমার একার দখলে

তুমি ঝর্ণা চেনো না

তাই, ঝড় আর চোখের নির্ঝর

আলাদা করবে কিভাবে?

আমাদের দূরত্ব ডাল এবংমাটির মাঝখান

ক্রমশ দূরে চলে যাওয়ার ব্যখ্যা কী দেবে?

বোঁটাখসা ফুল জমিনেই ঝরে

চাইলেই তার অন্য উপায় করবে!

চোরাটানে হৃদয় খানখান

 



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান