গুলশান আরা রুবী এর কবিতাগুচ্ছ
গুলশান আরা রুবী এর কবিতাগুচ্ছ
আসল ঠিকানা মরণ


পিচঢালা পথে চলেছি একলা ,

এঁকেবেঁকে যাওয়া নির্জনতায় পথ চলা।

জানিনা এর শেষ কোথায় ,

তবু আমি চলেছি বিষন্নতায়।

দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা এলো,

নীল আকাশে ঝড় উঠিলো।

আমার দুটি চোখে মেঘেরা ভাসছে

অশ্রু ভেজা নয়নে নোনাজল ঝরছে।

তোমার মমতাময়ী স্পর্শ হব ক্লান্ত,

মায়াবী ছোঁয়ায় অন্তর হয় শান্ত।

চলার পথে মাঝে মাঝে হয় কত কষ্ট,

কত অজানারে জানাই মনে যত দুঃখ।

মনের ক্রন্দনে কত ব্যথা জমে আছে,

বেদনার চোখের জল , মেঘ হয়ে ঝরছে

কখনো ঝড় হয়ে ঝরে নীল যমুনার সুখে

কখনো আবার ঝরে মোহনার বুকে।

একদিকে ভাসে ,অন্য দিকে হাসে,

একদিকে জল আসে , অন্যদিকে  ভাসে।

তেমনি হয় মানুষের জীবন ,

সব শেষ হয় একদিন যখন হয় মরণ।

 

 

নারী


নারী বলে কি নারীদের অবহেলা করতে হবে

নারীরা কি এত অমূল্য পাত্রী।

নারী যা দিতে পারবে

পুরুষ কি তা পারবে ?

যখন শিশু জন্ম হয় প্রসূতির কূলে শুনেছ সে আর্তনাদ সে ছেলে বা মেয়ে হোক;

তখন সে নারী তার বুকে ভিতরে আগলে রেখে বড় করে কত কষ্ট করে তার হিসেব কে রাখে

সে-তো নারী

নারী বলে এত অবমাননা ,

নারী হল মা আর মা হল পৃথিবীর আলো দেখানো অঙ্গ রাজ্য

মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত

মেয়ে বউ সেতো নারী হে নারী ছাড়া পুরুষ কি থাকতে পারবে কখনো না

নারী জাতীকে সম্মান দেন বা করেন ,

যুগে যুগ নারী এসেছে আরো আসবে এই ধরিত্রীতে

নারী ছাড়া কতজন পুরুষ থাকতে পেরেছে

নারী সব কিছু পারে

তারা নাগিন হয়ে বিষ ঢালে

আবার উজা হয়ে নামায়

নারী আগাতে আগাতে আর কত হবে ক্ষত বিক্ষত ,

মুক্ত মনে মুক্ত হাওয়ায় থাকতে দিন

নারী হল গর্বধারিনী স্বর্বধারিনী সর্ব রূপনী ,

নারী মানে  ভক্তি নারী মানে মুক্তি

নারী যানে গড়তে নারী যানে ভাঙতে

নারী দিতে যানে দিতে সুখ নারী যানে দিতে দুখ

নারী যানে সর্ব মঙ্গল নারী  যানে ধ্বংস ,

সব নারী আত্ম উপলব্ধি জন্য নীরবে সহ্য করে যায় ,

কারণ তারা শান্তি চায়

তারা যানে প্রতিবাদ করতে

তারা আত্মসম্মানের জন্য করে না

তাই বলে তাকে অপমান করবেন না

নারী ভালোরজন্য নিরবে সব মেনে নেয় ,

ভালোবাসে বলে সম্মান করে বলে প্রতিবাদ করেনা।

 

 

 

বিজয়ের একাত্তর


মা'গো আমি দেখিনি একাত্তরের বিজয়

দেখেনী সোনালী দিনের করুণ দিন গুলি।

সোনার দেশের সোনার ছেলেরা

গিয়েছিলো যুদ্ধে আর আসেনি ফিরে আর আসেনি ফিরে কোনদিন।

আজও মায়ে কাঁদে আমার খোকা আসবে ফিরে আসবে আমার বুকে।

মায়ের চোখের জলে বুক যে ভাসে

আজও প্রতিদিনের মত সেই রেল লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে আছেন দু'হাত বাড়িয়ে।

পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে

আজও তাদের চিৎকার যায়নি

শুনা যায় নিশিরাতে।

এই দেশের জন্য ভাষার জন্য দিয়ে গিয়েছে বলিদান যারা

তাদের আত্মার মাগফেরাত করছি কামনা

আবার এসেছে আটচল্লিশ বছর পর আবার এসেছে এই মাস

কেমন করে দিন গুলি চলে যার

ভাবতে যেন কেমন লাগে।

তারা প্রাণের বিনিময়ে কি দিয়ে গেল

আজ আমরা কি পেলাম

আগামী প্রজন্ম ভবিষ্যতে কি হবে।

আজ সবাই মিলে দেশকে ভালোবাসলে

থাকবে না কোন প্রতিহিংসার আগুন

এসো সবাই মিলেমিশে সুন্দর দেশ গড়ি।

সাজাই সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত করে এই পুরো দেশটা কে।

 

 

তটিণী-র বুকে


তটিণী- বুকে ঝিনুকের বসবাস

নারীদের জীবন ঠিক তেমনি বাস

ভোরের আলোতে ঝিনুক খুঁজলে পাবে না তাই

সন্ধ্যায় আলোতে খুঁজে পাবে আসল ঝিনুকটাই।

হয়তো ভোরের আলোতে লুকিয়ে যাবে শামুকে

দিনের শেষে কুড়িয়ে নিবে

মুক্ত ঝিনুকে।

রুপের ঝলক পরবে এসে আঁধার ঘরে

সেই আলোতে আলোকিত করবে আমার তরে

হাজারো ঝিনুকে কুড়িয়ে নিলুম একটি ঝিনুক তবে

তার' মাঝে খুঁজে পেলাম আসল মুক্তা কবে

ফুলের পাপড়ি কিরণ ছড়ালো ফুলের সুগন্ধি

আমি-তো হয়ে গেছি কারো হাতে বন্ধি।   

প্রেম সাগর পারি দিয়ে খুঁজে নিলাম ফন্দি

তাই তো অতি মূল্যবান জিনিস খুড়িয়ে নিলাম আজও অব্দিই।

 

 

একা সংগ্রাম

আমি নিজের অজান্তে সাত সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে

ডুবে গিয়েছি মাঝ নদীতে

সেখানে কেউ ছিলোনা মোরে বাঁচাতে ,

ছিলো শুধু সবাই  মারতে আর তামাশা দেখতে

 আসেনি কেহ মোর তরী খানা ধরতে।

নিজেকে একা সামলাতে গিয়ে

অনেক কষ্ট যন্ত্রণা সহিতে হয়েছে

কিন্তু সে কষ্ট যন্ত্রণার ভাগ কেউ চাইল না নিতে।

আমি একাই বহন করতে হয়েছে

অতই জল থেকে ,

তবু ভেঙে পড়িনি এক বুক সাহস রেখে

 চলেছি সামনের দিকে

মানি নি-তো কোন বাঁধা বিপত্তি

আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছি

যদি হয় বাঁচতে তবে যুদ্ধ করে বাঁচতে হবে

এক হাত দিয়ে হাল ধরেছি আমি অন্য হাতে মোর তরী।

আমি সেই যুদ্ধরত বিশাল সাগর দিয়েছি পারি।

করেছি সংগ্রাম জীবন পথে

বেঁচে থাকতে এই স্বপ্নিল ধরায়।

আজো কারো কাছে পাতি-নি হাত

মনকে শক্ত করে রেখেছিলাম ভরসা মওলার তরে।

পিপীলিকার পাকা যেমন গজায়,

 হয়তো তখন সে পাবে তরী

এমন করে বাঁচতে লাগলাম মনে আশা নিয়ে

নিজ জ্ঞান করতে লাগলাম সঞ্চয়

দাঁড়াতে নিজের পায়ে

কিন্তু যত দিন যায় ততই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি

শূন্য  মম তপ সম করতে হবে

একি দেয়ালে  হেলিয়ে  দিয়ে শরীল খানি

দু'চোখ দিয়ে দেখতে চায় শূন্য মনের আকাশ খানি।

সে ঘরে-তো রবে না কেহ স্বপ্নে সবি রয়ে যাবি সেটা মানি।

সাগরের জলের মত ঢেউ  খেলে মনের ঘরে

আসে তো বারংবার;

আকাশে জমানো কষ্টের বরফ গুলো

টুকরো টুকরো হয়ে ঝড়ে জমিনের বুকে।

 আমার মনের কষ্ট গুলো দু'নয়নে জল হয়ে

টিপ টিপ করে ঝড়ে আমার বুকের মাঝখানে,

আকাশের জল,সাগরের জল, চোখের জল,

নীল হয়ে যায় নীলে নীলে ,

সংগ্রাম জীবন আর কতক্ষণ চলবে এভাবে

আসার পথে বাসা বাঁধি বিপদে-আপদে।

ক্ষণিকের জীবন তাই নিয়ে এত গর্ব করা

কিছুই হবে না কিছুই যাবে না রয়ে যাবে সব কিছু ,

কিসের এত অহংকার কিসের এত বড়াই

দুই চোখ মুজলে সবই অন্ধকার  কবর

তবে কেন এত হায় হায়?

অংকের খাতায় হিসাব করতে গিয়ে,

কখনো মিলেনা জীবনের সূত্র আজ জানি,

অংকের শেষে থাকে শুধু শূন্য

 যুগল এই পৃথিবীতে এটা মুই মানি।

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান