গোলাম কিবরিয়া পিনু’র পাঁচটি কবিতা
গোলাম কিবরিয়া পিনু’র পাঁচটি কবিতা

 

একটা ছোট ভুল


একটা ছোট ভুল হওয়ায়-

ওর উঠানের ফুলগাছগুলো তছনছ করো না

ওর বাড়িতেই শুধু বাগান রয়েছে!

ওর  বাগানের কারণেই--

           আমাদের তল্লাটে সৌন্দর্য!

 

একটা ছোট ভুল হওয়ায়--

ওদের গোয়ালঘরে আগুন দিও না

ওদের গাভীর দুধে আমাদের সন্তানেরা পুষ্ট!

ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু নিয়ে

           এখন রয়েছে অপেক্ষায়

                    নতুন জননী!

 

মানুষের একটা ছোট ভুল-মাফ করে দিও

প্রত্যেক মানুষে কত রকমের ভুল!

আর ওর চাঁদটা আকাশে ফুটেছে বলে

         ওর কালো চিহ্নটা জ্যোৎস্নাপ্লাবনে

 বড় বেশি হয়ে দেখা দেয়!

 

 

বটেশ্বর


নথিতে পাবে না নটেশ্বর

আমার ঠিকানা বটেশ্বর!

আমি তো রয়েছি--

            জনপদে হ্রদ-প্রস্স্রবণে

চারক্রোশ পার হয়ে দূরে

            মাটির ভিটায়!

নতুন পাতার বনভূমিতে!

আমি তো নিবন্ধিত মানুষ নই--

খুঁজে পাবে হিসেব-খাতায়!

ঘরের ঠিকানা-

          উঠানের দাগ,

প্লাবনেও মুছে যায়!

বিরহকাতর হয়ে থাকি

জলচর হাঁসের জন্যও!

আমিও তো ভাসমান-

ভাসতে ভাসতে কোনখানে?

আমার ঠিকানা

          একখানে নয়!

          ওগো নটেশ্বর!

 

 

উদাসীনতা


আপনার ঘরের ট্যাপ থেকে

                 --পানি পড়ছে

আপনি তা দেখেও-তা বন্ধ করছেন না!

আপনি তা জেনেও--তা বন্ধ করছেন না!

ট্যাপ খুলে রাখছেন--

         বালতি ভরে যাওয়ার পরও

                        বন্ধ করছেন না!

ভাবছেন-আমার তো নির্দিষ্ট পয়সার বেশি

আর পয়সা দিতে হবে না--

পানির যে অপচয় হচ্ছে

                   তা জেনেও--তা মেনেও

নড়নচড়ন নেই-আপনি নির্বিকার!

                    আপনার কী আকার?

আর এভাবে উদাসীনতার নাইলনের সুতো দিয়ে

নিজের স্যুয়েটার তৈরি করে ভাবছেন--

          শীতে তো আপনার শীত লাগবে না!

পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দায়বোধ

                      এভাবে চলতে পারে?

আর পারে না বলেই পানি ছাড়া--

একটা ঝুমকোজবার গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে কাছেই!

 

ধাতুনির্মিত চোখ


রাস্তা পার হওনি এখনো!

             নদী পার হবে কবে?

নৌকো নেই! সাঁতরিয়ে পার হবে নদী?

তুমিও কি -সময়ে হয়েছো বিদ্যাসাগর?     

মায়ের নিকটে যাবে! মায়েরই ডাকে!

দমোদর পার হবে সাঁতরিয়ে--

           তা এখন প্রকাশ্যে সম্ভব নয়

এখন তো কত জলযান!

           --তোমাকে তো তুলে নিবে

না হলে আকাশযানও সংকেত পাঠাবে

কে যায় স্পর্ধায়--

            নদীতে সাঁতার!

নিঃশব্দে নীরবে পারবে না যেতে

                কোথাও এখন!

চারদিকে ধাতুনির্মিত চোখ

                     তাকিয়ে রয়েছে!

 

 

 

সৌন্দর্য


সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে হয়--

তাকে টেনে হেঁচড়ে কোথাও স্থাপিত করা যায় না

     সৌন্দর্য পকেটভারী হয়ে কারও পকেটে থাকে না!

 

সৌন্দর্য হৃদয়ের তলদেশ থেকে জেগে ওঠে

শূন্যগর্ভ থেকে--

       কচ্ছপের খোল থেকে খোল নলচে বদলিয়ে

একা একা দীপ্তিমান হয়ে ওঠে।

 

সৌন্দর্য কখনো খ্যাংরামুখীর মুখোমুখি থাকে না

স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে

               আপনাআপনি অবারিত হয়

                      --প্রস্ফুটিত হয়।

 

সৌন্দর্য চোখ ধাঁধানো ময়ূখ নয়

বোচকাবুচকি লটবহর নিয়ে দাঁড়ায় না--

সে নিরাভরণ অলঙ্কারহীনও হতে পারে

তবে-লেজুড়ে হয় না!

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান