চন্দ্রশিলা ছন্দা'র ৫টি কবিতা
কবি: চন্দ্রশিলা ছন্দা
রোদ বেঁধেছে ঘর
হীম হীম শৈত্যপ্রবাহ
এক চুমুকে পান করলো দুপুরটুকু
ইশ! ভালোবাসায় এমন জল ঢালতে আছে!
আমি রোদের শেষে চোখ পেতে দিয়ে থাকি
অবাক মনটা তা তা থই থই নাচে
হীমবায়ুটা কানের পাশে তখনো গুনগুন
বলি, তোর শরীরে রোদ বেঁধেছে ঘর
উষ্ণতাতে মন পেতে'দে, মনের কথা শুন
রাত্রি যখন পায়ে পায়ে ঘুমগাঢ় মৌতাত
একজোড়া বুক একজোড়া নাক
মিলিত প্রশ্বাস।
চলে যাওয়া দুপুরটা ঠিক মাঝরাত্রে অাসে
পুড়তে থাকা জ্বরের শরীর শৈতবায়ু যাঁচে।
গোলাপ ভালোবাসা
ছত্রিশ ইঞ্চি জমিতে
গ্রোথিত গোলাপ চারা
গোলাপ গুল্মের জন্য
জমি একেবারে কম নয়
ধমনীতে প্রবাহমান তরতাজা রক্ত
জলসিঞ্চনে যথেষ্টই ছিলো
গোলাপ মানেই তো ভালোবাসা।
ছত্রিশ ইঞ্চি জমি ডুবেছিল
প্রেমে-প্লাবনে
গোলাপ ফুটাবে বলে
.
গোলাপ পরে
চারার গায়ে ফুটলো আগে কাঁটা।
বৃষ্টির আখ্যান
একরাতে বৃষ্টির আখ্যান লিখব বলে
হাহা জোছনায় মেঘ চাইলাম
আকাশের কাছে
ওমনি তোমার বৃষ্টিগন্ধা বুকের ঝাঁঝ
এসে ভরে দিলো আমার ঘর উঠোন
খোলা ছাদ, ভরে গেলো বারান্দা বেলকনি চিলেকোঠার ছোট্ট ঘুলঘুলি
তুমি যখন তখন আচমকা হেচকা টানে
ছিঁড়ে নিতে দোলনচাঁপা
রাখতে জামার ভেতর খোলা বুকে
তোমার বুকে বৃষ্টি নাকি আগুন নাচায়
দোলনচাঁপা সে আগুনে শান্ত পাখি
"যতবার তোমার বুক ছুঁয়ে গেছে মেঘ"
ততবার দোলনচাঁপা হয়ে ছুঁতে গেছি আকাঙ্ক্ষার আকাশ
তুমি তখন ঘর উঠোন
বিছানা বালিশ ভাসিয়ে
ভেসে গেছো দূরে তৃষ্ণার জল রেখে।
আষাঢ়স্য চাঁদ
বলেছিলে,
বৃষ্টি এলে এক সাথে ভিজবে খুব
শরীরের অলিগলি ভাঁজ নিভাঁজ
ধুয়ে নিবে বৃষ্টি চুম্বনে
বৃষ্টি এলে, তুমি সারা দেহে মেখে নাও
বৃষ্টি মাতাল বুনোঘ্রাণ
তোমার বুক জুড়ে দেখি
আগুন সরোবর
সারারাত আগল খুলে রাখা পানকৌড়ি
সে আগুনে ঝাঁপ দেয়
গোপনে উন্মাতাল হয় কদম সৌরভে বিভোর সাঁতারকাটে তোমার আগুন সরোবরে
বলোনি কখনো
কতটা পথ পাড়ি দিলে ছোঁয়া যেত
সজল হাওয়া, তোমার ভাঁজ নিভাঁজ
তুমি আমি কিংবা একা
কতদিন ভিজিনা বৃষ্টি এলে
তৃষ্ণিত অরণ্য আজন্ম প্রতিক্ষায় কাটে কাঁটাতার আকাশ তলে
আর চারুকলার বকুলতলায়
বর্ষা উৎসব শুরু হলে
আমিও শরীরে বিছিয়ে রাখি
করমচা রাঙা লজ্জার সাজ
বৃষ্টি এলে তোমার ঠোঁট জুড়ে ফোটে
জলভাসা পানাফুল গোলাপি আভায়
চন্দন তিলকে সেজে ওঠো বৃষ্টি এলে
বৃষ্টি এলে...
জলকন্যার নাভিদ্বীপে লুকোবে পানকৌড়ি
লুকোবে আষাঢ়স্য চাঁদ, বৃষ্টি এলে।
ধর্ষিতার জবানবন্দী
যে
ঘর ভরে থাকবে কাঁচাসোনা রোদ্দুরে।ভালোবাসার পাগল করা ঘ্রাণে ডুবে থাকবে
একজোড়া বুনোহাঁস। হলুদ প্রেমের স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটবে প্রেমিক যুগল। এমন
একটা ঘর চেয়েছিলাম শুধু। জানো, তখন সব কিছুতে তার সাথে আমার কী অদ্ভুত মিলে
যাওয়া !
স্কুলের দেয়ালে,ভোটের ব্যানারে এমন কি, রিক্সার গায়েও দেখতাম তার নাম।যেন ভেতরে বাহিরে যেদিকে তাকাই,, তুমিময় আমার পৃথিবী
সে
বলতো এই মিলে যাওয়াকে টেলিপ্যাথি বলে। খুব ভালোবাসা হলে মনের সাথে মন
খুব মিলেমিশে গেলে ভাবনাগুলো এমনই হয়ে যায়। তুমি নদী আমি সাগর। আমরা একাকার
হব ভালোবাসা মিলনে।তুমি কায়া,আমি হৃদয়। তোমার ডিম্বানুতে জন্ম নিবে আমার
প্রথম সন্তান। আমরা আমাদের সন্তানের নাম দেবো অন্তর। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা
মিষ্টতায় বোনা সেইসব স্বপ্নের কথা শুনে বিভোর ডুবেছি দিনে দিনে মানুষ না
চিনে
লালসাকে প্রেম ভেবে
বিশ্বাসে পান করেছি বিষ অনায়াসে
অথচ আমার বন্ধ দরজায় হঠাৎ এমন করে হামলে পড়লে
যেন দলছুট হরিণ ধৃত হলো নলখাগড়া বনে
আর একদল বন্য চিতা কুৎসিত ক্ষুধায় টেনে ছিড়ে ভাগাভাগি করে খাওয়ায় মেতে উঠলো!
তেমন মেতে উঠলে তুমি মাংসলোভী হিংস্র জানোয়ারের মত
তোমার চকচকে চোখে তখন উল্লাস! আমাকে কামড়ে খামচে খুবলে খেয়ে যেন
ভাগ ছেড়ে দিলে সঙ্গীদের!
আর বিস্ফোরিত চোখে ব্যাকুল আর্তনাদে আমি দেখলাম পৃথিবীর সব ফুল ঝরে যেতে
দেখলাম প্রেমিক নামে তুমি এবং আর সব ধর্ষকের উম্মাদনা একটি নারী শরীরকে ঘিরে
তোমরা কি সত্যি মানুষ ছিলে?
আমিও কী মানুষ ছিলাম কখনো?
মানুষ কী কখনো ভাগাভাগি ভোগ্যপণ্য হতে পারে!
প্রমিক পারে প্রেমিকার ভাগ দিতে?
ধিক! শতধিক সেই সব কাপুষদের
যারা নারী অথবা প্রেমিকার নিষ্পাপ বিশ্বাসকে সুযোগ মনে করে
তাইতো পাখির বাসার মত উষ্ণ বুকটা ডুকরে উঠলো শেষ বার, একটা ঘরই তো চেয়েছিলাম প্রতিশ্রুতিময়।
হ্যা, আমাকে এখন ভীষণ শীতল একটা ঘর দেয়া হয়েছে। এত শীতল যেখানে অনুভূতিগুলো পাথরের মত জমে থাকে
রক্তগুলো শোকের মত কালো জমাটবদ্ধ! কোন উল্লাস আনন্দ কিংবা আঘাতে ছলকে উঠবে না তারা আর!
এইখানে,,আমার পায়ের বুড়ো আঙুলে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে একটি নাম্বার কার্ড! অপমৃত্যুর মামলায় যে ঘর আমাকে দেয়া হয়েছে, তার নাম লাশকাটা ঘর
আমার হীমশিতল নিথর দেহ এখন টেবিলের উপরে, সম্পূর্ণ উলঙ্গ
আলগা একখন্ড সাদা কাপড় চাপানো শুধু
আমার
আপনজনেরা, সুবিচারের আশায় যারা রেখে গেলো হিমায়িত ঘরে, তারা হয়তো কোনদিনই
জানবে না,নারীর সাথে সুবিচার বিধাতাও করতে পারেনি স্বর্গে কিংবা মর্তে।
জানবে না, মর্গেও দশ টাকায় ভোগ্যপণ্য হয় নারী লাশ!
যন্ত্রণায়
নীল হয়ে যাওয়া আমার ঠান্ডা ঠোঁট পুনরায় দংশিত হয় বিষাক্ত সাপের ছোবলে।মথিত
হয় অসাড় বুক।পেটের নরম মাংস।পিষ্ট হয় অশুচি বলে ছুড়ে ফেলা যৌনাঙ্গ। আমি
প্রাণপণ চিৎকার করি।ঈশ্বর তুমি কোথায় থাকো? জীবিত কিংবা মৃত ফারাক পড়ে না
কেন নরপশুদের? কান্নায় ভেঙে পড়ি,ঈশ্বর কেন কোন আহাজারি পৌচ্ছায় না তোমার
দেবালয়ে?
তুমি কী তবে পক্ষপাত দুষ্ট!
তুমিও কী পুরুষ সুস্পষ্ট ?
তুমি কী মানুষ, মানুষের দলে?
নাকি না-মানুষ? শয়তানের আলে!