ছাবেদ আলীর গপ্পখ্যাত কবি, অভিনেতা, গীতিকার ও ছড়াকার আজিজ আহমের’র জন্মদিন আজ ।
১৯৭৯ সালের আজকের এই দিনে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন পচাবহলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই সাহিত্যানুরাগি মানুষটি । শত ব্যস্ততার মাঝেও সৃজনশীলতা বুকে ধারণ করে চলেছেন ।
বর্তমানে তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ।
এছাড়া তিনি দুই বাঙলাখ্যাত লিটলম্যাগ ” রচয়িতা” এর সহকারি সম্পাদক, অনলাইন পত্রিকা সাহিত্যবার্তা’র সহকারি সম্পাদক, ব্রক্ষ্মপুত্র্র কালচারাল একাডেমী’র প্রতিষ্ঠাতাসহ নিজের একটি গানের স্কুল আছে , যা তিনি নিজেই পরিচালক ও শিক্ষক হিসেবে সময় দিচ্ছেন । তার প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ সংখ্যা একটি, যা ২০১৬ সালের অমর একুশের বইমেলায় চর্চাগ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং বেশ আলোচনায় এসেছে । এছাড়া তার লেখা জাতীয় দৈনিকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ।
আজিজ আহমেদ এর একগুচ্ছ ছড়া :
ব্যাঙ
বৈশাখেতে বৃষ্টি হল
জলের মাথায় ব্যাঙ,
সোনাবরণ চাদর গায়ে
ডাকছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ।
দুষ্ট ছেলে আনন্দে
ছুঁড়ছে সেথায় ঢিল,
অকারণে বার বার
হাসছে খিল খিল ।
খনিকের খুশিতে ঢিল
ছুঁড়ছে ব্যাঙের গায়,
আঘাতে আঘাতে ব্যাঙের
জীবন বুঝি যায়।
কাক ও শেয়াল
গাছের ডালে কালো কাক
মাংস তাহার ঠোঁটে,
তাইনা দেখে শেয়াল মামার
চোখেতে লোভে ফুটে।
কীভাবে সে মাংস নেবে
ভাবে বার বার,
অবশেষে মাথায় হঠাৎ
বুদ্ধি এলো তার।
চালাক শেয়াল কাককে বলে
তুিম গাও সুন্দর,
তোমার মধুর গানে আমার
ভরে যায় অন্তর।
বোকা কাক গান গাইতে
যেমনি করল শুরু,
শেয়াল মামার মনের সাধ
তেমনি হইল পুরু।
আজ বাংলা ভাষা
বাংলাদেশের বাঙ্গালিরা
গড়ল ইতিহাস,
বিশ্ববাসী ভাষার জন্য
পেল তাজা লাশ।
রক্ত চুষা হায়েনার দল
রক্ত খেয়ে তুষ্ট,
দিনে দিনে বাংলা ভাষা
বিশ্বজুড়ে পুষ্ট।
বাংলা ভাষার মর্যাদা আজ
বিশ্ব দরবারে
ব্যবহার চাই বাংলা ভাষা
সকল কারবারে।
ঘটক
এটা কোন পেশাই নয়
সবাই বলে ঘটক,
জনগণের সেবার নামে
মানুষ মারা ফাটক।
বিদ্যেবুদ্ধি কিচ্ছু নাই
লোক ঠকানোই কাজ,
তোষামোদি মিথ্যা বলা
একটুও নাই লাজ।
বহুবিয়ে বাল্যবিয়ের
এরা নাটেরগুরু,
দায়গ্রস্ত পিতার কাছে
এরাই মহাপুরু ।
আইন চোখে বৃদ্ধাঙ্গুল
বিয়ে বিয়ে নাটক,
বাল্যবিয়ের দায়ে এদের
করা উচিৎ আটক।
যাদুর ছোঁয়া
চাকরি চাকরি করছ মনু
চাকরি কি আর মোয়া ?
চাকরি হল মামাখালুর
হাতে যাদুর ছোঁয়া।
মেধার বোঝা বস্তা ভরে
দেখাও বাম হাত,
চাকরি দাতা চাকরি নিয়ে
ঘুরবে দিন রাত।
চাকরির আশায় ঘুরে ঘুরে
স্বপ্ন যাবে মরে,
সফল মানুষ নিজের ভাগ্য
নিজের হাতে গড়ে।
ছাবেদ আলীর গল্প(৬)
ছাবেদ আলী দাওয়ায় বসে
ভাবছে আপন মনে,
ইজ্জত দিবে গাঁয়ের মোড়ল
নাতি পাশের গুণে।
মোড়ল মুখে খবর শুনে
ফুটল রেখা ভালে,
মাটি হবে স্বপ্ন আশা
ভর্তি নীতির জালে।
কত শ্রম কত ত্যাগে
জুটল এমন পাশ,
ভর্তি যুদ্ধ দিচ্ছে এখন
স্বপ্নের গলায় ফাঁস।
মধুর পড়া
বিদ্যার বোঝা বইতে বইতে
হচ্ছে শিশু বৃদ্ধ ,
বাবা মায়ের মনের আশা
হয়না তবু সিদ্ধ।
সকাল বিকাল রাতের বেলা
করছে শুধু লেখাপড়া,
জ্ঞান পরিধি বাড়ে না তো
মুখস্থ কিছু বুলি ছাড়া।
স্কুল আছে, ক্লাস আছে
খেলার মাঠ নাই,
মেধার বিকাশ হোকনা হোক
ভাল রেজাল্ট চাই।
লেখাপড়া , খেলাধুলায়
গীতবাদ্য রয়,
বিনোদনের মধ্যে শিক্ষা
বড়ই মধুর হয়।
বিয়ে
নূরির পুতুল শেফালির
বিয়ে হচ্ছে আজ,
রানুর পুতুল পলাশের,
তাইতো অনেক কাজ।
চিনি সেমাই মিছেমিছি
কাঁদা দিয়ে পিঠা,
মুখের কাছে নিয়ে সবাই
বলছে বেজায় মিঠা।
বিয়ে বাড়ি নাচগান
সবাই অনেক খুশি,
বরকনে লাগছে দারুন
দেখছে সবাই বসি।
দাদু
দাদু আমার বুড়ো খোকা,
কথায় কথায় বানায় বোকা ।
শুনিয়ে শুধু বক বকানী ,
আনিয়ে নেয় অযুর পানি ।
কানে একজোড় দুল দেব ,
নাকে সোনার ফুল দেব ।
কিনে দেব কাঁচের চুড়ি ,
সোনা মিয়ার ঝাল মুড়ি ।
দাদু আমার বেজায় চালাক ,
মুখে তাহার চুষি ডাক ।
আমার সোনা দিদি ভাই ,
তোর মত আর কেউ নাই ।
চশমাটা কই আন তো ,
লাঠিটা কই দে তো ।
এমনি হাজার বায়না ধরে,
আমায় নেয় কাজ করে ।
আমি এখন বেজায় চালাক,
দাদুর কথায় নেইনা বাক ।
দিদি বলে ডাক দিলে ,
পালিয়ে যাই পড়ার ছলে ।
ফুটানি
আদম আলীর বড় ছেলে
সবাই ডাকে আটানি,
ঢাকা শহর রিক্সা চালায়
গাঁয়ে দেখায় ফুটানি।
ঝুলায় রাখে গামছা লুঙ্গি
পরণে তার প্যান্ট শার্ট,
কালো চশমা চোখে দিয়ে
এলো যেন বড় লাট।
মাকে বলে রান্ডা ভাজো
রাব্বা ডাকে বাবারে,
বন্ধুবান্ধব পাত্তাই দেয়না
ভাবখানা কি হুনুরে ।
কথায় কথায় ইংরেজি কয়
বাজে যেন ভাঙ্গা ঢোল,
চলন বলন স্টাইল কি
বাজে শুধু গণ্ডগোল।