ছড়াকার-লেখক শাহাদাত করিম এর জন্মদিন
ছড়াকার-লেখক শাহাদাত করিম এর জন্মদিন
Babul Ahmad এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে ................................

আজ তাঁর জন্মদিন। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মি এবং একজন আধুনিক মানুষ।

আধুনিক বললাম এই কারণে যে, তিনি যে সময়টিতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সেই সময় আধূনিকমনষ্ক, প্রগতিশীল, নিঃস্বার্থ-পরোপকারি মানুষেরা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তাঁর সাংবাদিকতা পেশায় আসার সময়টিতে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল এবং সেই সময়ে একজন তরুণ কবির সংবাদপত্রে যোগদান নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ তাৎপর্যবহ ঘটনা। আরো একটি কারণ আছে। তিনি যেপরিবারে এবং যেপরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছেন সেই পরিবেশে তাকে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে বসার কথা কিন্তু তিনি তা না করে বাংলাদেশ বেতারে সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করলেন। তাঁর সাথে সেখান থেকেই আমার পরিচয়। তিনি এই সময়ের প্রতিষ্ঠিত ছড়াকার-লেখক শাহাদাত করিম।

তাঁর সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বার্থে মাসে অন্তত ৫/৭ বার দেখা হত। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সমূহে রাস্ট্রপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রী উপমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী বা প্রশাসনের জেলা প্রশাসক থেকে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানের বাণীবন্ধন এবং যথাসময়ে তা সম্পাদনা করে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার মত কঠিন কাজে তাকে দেখেছি ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে যেতে। যদ্দূর মনে পড়ে আশির দশকের শুরুতে তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সিলেটবাণী’ পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। অচিরেই এই পত্রিকাটি দৈনিকে উন্নিত হয়ে যায়। এই পত্রিকায় কাজ করার সময় তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে সাহিত্যাঙ্গণে। তিনি প্রকাশ করেন ছড়াগ্রন্থ ‘উল্টোসিধে’। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে একজন লেখকের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের ভিতর কী দারুন সব কথামালা সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘পাক্ষিক সচিত্র বাংলাদেশ’ এবং ‘মাসিক নবারুণ’ পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। এদুটি পত্রিকা এখনো নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর’সাথে সংশ্লিষ্ট কবি সাহিত্যিকরা দেশের সাহিত্যাঙ্গণে নিজেদের অসামান্য প্রতিভার সাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘ধান শালিকের দেশ’ নামক সাহিত্য সংকলনে তার ছড়া ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সংকলনে তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর ছড়ায় সমসাময়িক কালের বিভিন্ন সমস্যা, অসংগতি ও স্বেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে তার সচেতন চিন্তা ভাবনার প্রকাশ যেমন দেখি তেমনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলন এবং মাটি ও মানুষের কথা ও দেখতে পাই।

লেখক হিসেবে শাহাদাত করিমকে একজন সফল ছড়াকার ও কবি বলব। ২০১৭’তে ‘চিৎকার’ এবং ‘খোঁচাখুঁচি’ দুটি ছড়ার বই। ২০১৮’তে আবার ‘ইঙ্গুল বিঙ্গুল’ এবং ‘শপাং শপাং’ প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও বইগুলির নাম থেকে বুঝা যায় একজন লেখক হিসেবে দেশ-মাটি-মানুষের জন্য তাঁর অন্তরে কী অপরিসীম ভালবাসা ও সচেতনতা কাজ করছে। বইগুলি শুধু বাংলাদেশেই নয় ইউরোপ এবং আমেরিকাতে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটিতে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

শাহাদাত করিম একজন রুচিশীল, বিজ্ঞানমনষ্ক, সমাজ সচেতন ও আধূনিক চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন। জানতে পেরেছি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বই মেলায় তার লেখা নতুন ছড়াগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ চলছে।

শাহাদাত করিম ১৯৫৮ ইংরেজি সানের ২৫ ডিসেম্বর সিলেট শহরের বারুতখানায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই পথিতযশা কবির ৬০তম জন্মদিনে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করছি।
সবশেষে তাঁর লেখা ছড়া থেকে দুটি পংক্তি তুলে দিতে চাই। তাঁর চিৎকার শীর্ষক ছড়ায় তিনি লিখেছেন-

সার নেই, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ পানি,
মুশকিলে দেশবাসি, বাড়ে পেরেশানি।

বাঁচবার দাবি উঠে জোরে দিই চিৎকার,
পৃথিবী দেখবেই অবশেষে জিতকার।।

শুভজন্মদিন শাহাদাত করিম ভাই। (২৫ডিসেম্বর ২০১৮,সিলেট)


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান