ছড়াকার : জসীম মেহবুব
আর কত দিবি ফাঁকি ?
এখন তো কেউ চিঠি লেখে না মা
সব চলে মুঠোফোনে,
চিঠিরা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে
ড্রয়ারের এক কোণে।
মা-বাবার চিঠি, দাদিমার চিঠি,
ভাই-বোনে চিঠি লেখা,
কোথায় হারালো এখন ওসব
কই পাবো তার দেখা ?
চিঠিতে চিঠিতে লুকানো ছিল মা
কত হাসি খুশি গান,
ভাঁজে ভাঁজে ছিল জ্যোৎন্সার আলো
কত কথা অফুরাণ।
ডাকপিয়নের ঝোলার ভেতরে
স্বপ্নে মোড়ানো চিঠি,
এখনো এ মন উঁকিঝুঁকি মারে
জ্বলে আজো মিটিমিটি।
খামে ভাঁজ করা চিঠিরা আসবে
কত পথ চেয়ে থাকা,
চিঠিরা ঘুরছে শহর নগর
চাটগাঁ, যশোর, ঢাকা।
ডাকহরকরা, ডাকপিয়নের
আজ নেই ডাকাডাকি,
শোন্ শোন্ ওই মুঠোফোন তুই
আর কত দিবি ফাঁকি ?
হলাম হতবাক
কোন দিকে রে শোঁ শোঁ করে
কোথায় অমন হাঁক ?
কোথায় আবার ঝড় উঠেছে
আয় তো দেখা যাক।
কোন কোণেতে হাওয়ার নাচন ?
ঝড়ের ওজন কত ?
ডালপালা দেখ দুলছে গাছে
নাগরদোলার মত।
আয় ছুটে কই অন্তু লুনা
নইলে বিপদ ভারী,
ঘরে ঢুকে ছিটকিনিটা
লাগাস তাড়াতাড়ি।
বিন্তিকে বল উঠোন থেকে
আয় ফিরে আয় ঘরে,
কখন জানি কড়াৎ কড়াৎ
খুব জোরে বাজ পড়ে।
কিন্তু অবাক কান্ড দেখে
হলাম হতবাক
একলা ঘরে ঝড়ের বেগে
ডাকছে দাদু নাক।
ছড়ার জন্য ছড়া
এসো এসো ছড়া লিখি
টক ঝাল মিষ্টি,
ছড়াতে নামানো যায়
ঝমঝম বৃষ্টি।
ছড়াতে গোলাপ ফোটে
খুকু হাসে খিলখিল,
শাপলাতে ভরে যায়
ছোট বড় বিলঝিল।
ছড়াতে ছন্দ থাকে
তাক ডুম তাক ধিন,
ছড়াকার ছড়া লেখে
নিরলস রাতদিন।
চাঁদ আর সূর্যের
আলো ফোটে ছন্দে,
পাখিডাকা ভোর আসে
বকুলের গন্ধে।
ছড়াগানে আনন্দে
ভরে ওঠে মনটা,
ইশকুলে ঢঙ ঢঙ
বেজে ওঠে ঘন্টা।
এসো এসো ছড়া নিয়ে
গড়ি এক স্বর্গ,
ছড়ার জন্য তাই
সাজিয়েছি অর্ঘ।
হাসুক বসুন্ধরা
আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে
সেই না মেঘের ফাঁকে,
চিকন চাকন একটি বাঁকা
চাঁদ আমাকে ডাকে।
হেসে বলে, “খোকন সোনা
কাল যে ঈদের দিন,
আর থেক না চুপটি করে
ঘরে অন্তরীণ।
বন্ধু স্বজন ভাই বোনেরা
গাইতে থাক গান,
“ রমজানের ওই রোজার শেষে ”
আকুল করে প্রাণ।
নতুন জামা জুতো পরে
ঘুরবে ঈদের মাঠ,
আজ হবে না অংক কষা
কঠিন কোন পাঠ।
আজ টিচারের চোখ রাঙানি
বন্ধ শাসন কড়া,
আনন্দে হোক লাফালাফি
হাসুক বসুন্ধরা।”
সেই খুশিতে এক ছুটে যাই
নদীর খেয়া ঘাটে,
আদুল গায়ে ডিগবাজি খাই
সবুজ খোলা মাঠে।
প্রাণের দামে
তিরিশ লক্ষ প্রাণের দামে
কিনেছি এই দেশ,
চাই এখানে শান্ত কোমল
মধুর পরিবেশ।
পাখির গানে জাগি সবাই
যাই ছড়িয়ে মাঠে,
জারি সারি গম্ভিরা গান
শুনছি হাটে ঘাটে।
যাচ্ছি ছুটে পাঠশালাতে
গাইছি দেশের গান,
কক্ষণো এই ভালোবাসা
আর হবো না ম্লান।
ভালোবাসা সম্প্রীতিতে
থাকছি মিলেমিশে,
আনন্দ উৎসবে বাঁচি
দুঃখ তবে কিসে ?
দেশের জন্য জীবন বাজি
যায় যদি যাক প্রাণ,
এ দেশ আমার মাতৃভূমি
রাখবো দেশের মান।
কীর্তিগাথা
ইয়াহিয়া টিক্কা খানের
স¦প্ন পুড়ে ছাই,
বীর বাঙালির কীর্তিগাথা
আর কোথাও নাই।
ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু
‘শত্রু তাড়াও সবে,
যার যা আছে সেটা নিয়েই
যুদ্ধে যেতে হবে।’
যুদ্ধ হলো গঞ্জ গ্রামে
যুদ্ধ হলো মাঠে,
রক্তচোষা হায়েনারা
আগুন দিলো হাটে।
জ্বালিয়ে দিল ঘর বাড়ি সব
জোয়ান শিশু বুড়ো,
গুলির ঘায়ে জীবন দিল
মাসি মিসি খুড়ো।
নয়টি মাসের অত্যাচারে
দেশটা পোড়ামাটি,
লাশের সারি ডিঙিয়ে বলো
কেমন করে হাঁটি ?
স্বাধীন হলো এ দেশ ঠিকই
হয় সীমাহীন ক্ষতি,
সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াই
পেলাম ফিরে গতি।