কবি : জামিল জাহাঙ্গীর
শিশিরের শিরদাঁড়া
সকাল দেরিতে আসে কেননা ঘুমাই পরে, ঘুম ডেকে আনি
নিজে নিজে আসে না বলে ওকে আনতে হয় কাউকে পাঠিয়ে
আজকাল দূতেরা বড্ড জ্বালাতন করছে সময় ও সংবাদে
রাতগুলো তাই দীর্ঘ তালগাছ শহরের ছাদে ও চাতালে শোয়া
কেটি পেরি দাঁত মেজে দিয়ে যাও আগামীকাল ডেটিংয়ে যাবো
যুবতীর অন্তর্বাস থেকে সুগন্ধি ঝরলে আমি কী করবো বলে দাও
সেলিব্রেশন সন্ধ্যায় আমাকে ইচ্ছেমতো খুঁচিয়েছো আপাদমস্তক
এখন প্রতিটি ফুলকেই রজঃস্বলা পত্রগন্ধী পাথরকুচি লাগে
আমার জানালার ওপাশে কাকের বাড়ি পেরুলে তারের আকাশ
তারপর এক গৃহিণীর ঘরকন্না, শুকোতে দেয়া আগুন যৌবন
রেলিং রমনীর দোল খাওয়া চুলের উজ্জ্বলতা ক্রমান্বয়ে বাড়ে
আমার গোপন গোডাউনে তখন অবিরাম চুনকাম চলে
হ্যালি বেরি প্লিজ কাউকে বোলো না অন্ধকারে আমি কী করেছি
আলো আমাকে ফেরেশতা বানালেও অন্ধকারে আমি শয়তান
চুপি চুপি কদমের রেণুগুলো মেখে তুমি ঠোঁট এগিয়ে দিলে
আমি কী বসে বসে কনে আঙুল চুষবো ঘি মধু মেখে !
বাদামি বউ এসো স্ট্রিপের বাসর ভেঙ্গে ধোঁয়া ধোঁয়া কু-লী
এসো পল্লবিত প্রান্তর আজ নগ্ন নৃত্য হবে সাপেদের সাথে
চোখের সাঁতার থেকে তুলে নিতে সব জেলেদের জাল একা একা
আমাদের চারপাশ থেকে শিশিরেরা শিরদাঁড়া মেলে দাঁড়াবে
মন্দাকিনী বিছানায় পাশ বালিশের চেয়ে তুমি সবল নও
তবু এতো তুলো যৌতুক চেয়ে বসেছো যে দিলেই দেউলিয়া
আর আমি নিঃস্ব হয়ে সর্বস্ব পাতাল পেতে রেখেছি
তোমার চোখ তাকেও বড় করে দেখতে গিয়ে কিছুই দেখেনি।
আমি ও আত্মহত্যা
গতকাল রাতে
বাড়ি ফেরা হতো না আমার
যদি না একটা নীল প্রাইভেট কার
নাকের ডগায় বসে গরল নিঃশ্বাসের
তীব্র গন্ধ উগলে না দিতো
সন্ধ্যায় যে যুবক
হৃদ্যতায় মিলিয়েছে হাত
তার পকেটে চকচকে
নাইলন ছিল ভাঁজ করা দেখিনি
আলো আধাঁরীতে বৃক্ষলগ্না যে মেয়েটি
বারবার পার্টখুলে ইশারায় দেখিয়েছে
নাভিমুলে দারিদ্রের দুর্লঙ্ঘ্য দাগ
অনতিদূর থেকেও দেখতে পাইনি
দড়ি দড়ি বলে এক বৃদ্ধ
বারবার ঘুরে গেছে
চারধার দিয়ে তাকেও ডাকিনি
মৃত্যুর খোঁজ নিতে
ফিরতি পথে হলুদ মিউজিয়াম
ফটকে সজ্জিত গাড়ি
সন্ধ্যাযুবক আর রাত্রিরমনী নাইলন প্রেমে
হাবুডুবু নিয়ন রোদ্দুর রঙ কালো
আর চালকের আসনে সেই দড়িওয়ালা বৃদ্ধ
মুহূর্তেই আত্মহত্যা আমাতে থমকে গেলো
এ জীবন কোন মৌসুমি ফল নয়
যখন তখন পেকে যেতে পারে
পাকার আগে আত্মহত্যার পোকা
ক্রমাগত ক্যানো ঠোঁকরায় একথা জানতে
গতকাল রাতে ফিরে আসি ঘরে।
মোমবাতি নিভিয়ে দাও জ্যোৎস্নাময়ী
এসো একসাথে পাপ করি আদমসুরত নদী পার হই আজ
আমার হাওয়ার নাম মুছে বাতাস লিখেছি তাই সবুজ পাতায়
ফিসফিস কথা নয় ভাস্কর ভাস্কর্যের সাথে যেসব ধারালো অস্ত্রে
সমর্পিত ব্যাবচ্ছেদ অর্ধচেতন তেমন সহজ হলে মিলবে হিসেব
এখানে সমুদ্র বহুতল পুকুরের প্রাচীন আত্মীয় আর ঝর্ণা প্রেমিক
নেমে এসে হুটহাট পড়ে যায় কুয়াশায় তান্ত্রিকের জোয়ান তনয়া
মন্ত্র নয় যন্ত্র নয় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো সরাসরি বক্ষ খুলে দেখাও ধবল
কতোটা সাহস জমা কয়জোড়া হিমালয় আগলে রেখেছো একা একা হিম
এক্কার গাড়িতে চড়ে যে রোদ বেড়াতে যায় রাতে কী করে ওরা !
সূর্য যেখানে লুকোতে যায় সেখানে কী আমাদের প্রবল বারণ !
মুগ্ধজলে লুকোচুরি হয় না কখনো তাই প্রকাশ্য সারল্য চাই প্রাণের মিলনে
মোমবাতি নিভিয়ে দাও জ্যোৎস্নাময়ী বিরহের তালাকনামায় যৌথস্বাক্ষর
এরপর পাখিদের রোমশ ডানার নিচে উড্ডীন উৎসবে ভাসবো সবল
আমাদের সবুজ বিছানায় শস্যদানা অন্ধকার ফুঁড়ে ফুঁড়ে আলোর মিছিল...
ইয়াবা অথবা শখের গোলক
রাঙতায় গলে গলে বাদামী বিবিরা হাঁটে আগুনের সাথে
কু-লী পাকানো ধোঁয়া নতুন নোটের ভাঁজে তরতর উঠে
নাক দিয়ে ছাড়বে না ফুঁসে উঠো ফুসফুস দম মারো দম
অন্দরে পাঠিয়ে দাও জমাট বায়ুর দলা কয়েন জানালা
পৃথিবী পৃথক হবে রক্তের ফুলকি ভেঙ্গে লজ্জাবতী লতা
ভুলের পাজামা পরে পরকীয়া রোদ যায় মেঘেদের ঘরে
গাভীর ওলানে দুধ চিনিময় বিনিময় মাখন পনির
নকল ভালোরা জিতে আসলেরা হেরে গেছে গোলার ইঁদুরে
ধুম্রজাল আচ্ছাদিত লিচুর যৌবন খায় মৌসুমের পোকা
ভাইরাসে নষ্ট নদী মহল্লার কানাগলি এ্যাম্বুলেন্স বাড়ি
আমাদের কণ্ঠে বিষ মিশিয়ে নিপুণ খুন তরুণ আকাশ
গোপন অঙ্গের সঙ্গে প্রতারিত প্রতিদিন সৃজন বিনাশ
নেশাগ্রস্থ চাঁদ রাষ্ট্র এ্যালকোহলিক নদী বাদামী পাহাড়
নাফ বেয়ে চলে আসে উজানের ঊর্ধ্বমুখে শখের গোলক
ডিপ্লোম্যাসি ডিমের অসুখ
যে বন্ধুর সঙ্গে রোজরাতে সেলফোনে কথা হয়
তাঁর নাম হিপোক্রেসি
নকল নেলপলিশ আর সস্তা ঠোঁটকাঠি মেখে জবরজং
যাত্রাদল রাজকন্যা
আর আমি কুমার বানর
রাত হেলে পড়লেই ওপাড়ার ইঁদুরেরা কাটতে আসে
আমাদের ঝোলানো ছিকের মোড়ানো দড়ি দাঁতে দাঁতে
শুনতে পাই সর্বনাশের পদচিহ্ন তাঁর চতুর্দিকে
কিন্তু আমাদের সান্ধ্য ভাষ্য এড়িয়ে যায় সবকিছু...
আমাদের প্রথম উপহার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি
কপট কল্পনার বিগলিত লাভায় শর্তহীন শরীর
প্রবঞ্চক পোশাকের বিপ্রতীপে ভুল বিনিময়
প্রতারিত সবুজের সাদাভ রঙের মোহে প্রজাপতি উড়ে
তার ছায়া দেখা যায়
লাইন কেটে দিলে কাক এসে জুড়ে বসে তারে
অনাহারে অর্ধাহারে নীতিকথা অর্থহীন ছাগলেও জানে
পকেট রকেট বেগে ছুটে এসে আক্রমণ করে বারবার
বন্ধু নয় শত্রু নয় প্রথমত চাই চাই ক্ষুধার খাবার
যে বন্ধুর সাথে রোজসন্ধ্যায় কালোসানগ্লাস পরে
বেড়াতে বেরোই
তাঁর নাম ডিপ্লোম্যাসি ডিমের অসুখ
ইচ্ছেকে বরফগোলায় জমিয়ে রাখেন সোনামুগ
আর অদৃশ্য চাবুক দিয়ে ঘড়িকে ঘোরান -
এরা বন্ধুর পোশাক পরে অভিনয়ে পারঙ্গম পায়রা সুখের
বিত্তের পরিধি বেয়ে স¤পর্কেরা ঘোলাজলে নাইতে নেমেছে
বন্ধু নয় শত্রু নয় শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বই ডুবে আর ভাসে...