কবি : জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ
মাতৃভাষা
মাতৃভাষা মানে
ভরদুপুরে রাজপথ রঞ্জিত করে
বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়া।
মাতৃভাষা মানে
মায়ের চোখের আর্তনাদ অশ্রু দিয়ে
শাড়ির আঁচল ভিজে যাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
পকেটে চিঠি কলম রেখে যাওয়া
ভাইয়ের মৃত লাশ পাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
মায়ের মুখের বুলি রক্ষা করে
তবেই ঘরে ফিরে যাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী পাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
রফিক শফিক সালাম বরকতের স্বপ্ন
অসমাপ্ত থেকে যাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে
শহীদ দিবস ফিরে পাওয়া।
মাতৃভাষা মানে
শহীদদের আত্মত্যাগ আর মায়ের কান্না
কখনো ভুলে না যাওয়া।
একুশে ফেব্রুয়ারী
বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারী
আমার ভাইয়ের রক্তদিয়ে তৈরী
আমি কি তা কখনো ভূলে যেতে পারি?
মায়ের আর্তনাদধ্বনি কানে ভাসে
আমার খোকা কই? খোকা..খোকা...
ঘরে আই খোকা, খেয়ে যা ভাত!
মাগো! আমি আর ঘরে যাবো না
তোমার মুখের বু্লি রক্ষা করে
চলে গেলাম চিরতরে,
ফেরা যে আর হলো না- মা।
কেঁদো না গো মা,
তোমার খোকা নেই তাতে কি?
আজ কি দেখ না?
তোমার কত খোকা ফুল হাতে আমাদের করছে শ্রদ্ধা!
ভোর বেলায় খালি পায়ে
আসছে তারা দলে দলে,
আমাদের সমাধিতে
পুষ্প অর্পন করবে বলে।
এক খোকা দিয়েছে প্রাণ
কোটি খোকা জন্মেছে আপ্রাণ,
মাগো তাঁরা রক্ষা করবে
তোমারই আত্মসম্মান।
মাগো আজ কেঁদো না
মাগো তুমি কাঁদছো কেন?
তোমার এক খোকা নেই তাতে কি?
দেখ মা দেখ....একবার চেয়েই দেখ!
তোমার হাজারও খোকা হাতে এনেছে ফুল
আমাদের শ্রদ্ধা করবে বলে,
তারা যে আজ হয়েছে ব্যাকুল।
প্রকৃতি আজ সেজেছে হাজারো ফুলে ফুলে
সবই আজ রয়ে গেছে আমাদের সমাধিসৌধে,
তারা শ্রদ্ধা করছে আমাদের কৃতকর্মে।
আমরা আজ হাসছি গো মা, তুমিও একবার হাসো ঐ দুটি চোখ মেলে।
একুশে ফেব্রুয়ারী সারাবিশ্ব জুড়ে
পালন করছে তারা অন্তরে শ্রদ্ধাভরে।
দেখ মাগো দেখ...ঐ পতাকার দিকে চেয়ে দেখ
আজ আমাদের বেদনায় উঠিয়েছে পতাকা অনেকটা নিচু করে, সবাই ব্যথিত বলে।
পূর্বাকাশে সূর্যোদয় হওয়ার আগেই মাগো
দেখ একবার চেয়ে আমার সমাধিস্থলে এসে;
শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে পায়ের জুতা খুলে
ফুল হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে,
ভালোবাসা আর সম্মান জানাতে।
ঐ যে শুনো মাগো...
একবার কানটি খোলে,
গুন গুনিয়ে গাইছে তারা
মধুর সুরটি ধরে-
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি তা ভুলিতে পারি.....?"
শুনলে মাগো শুনলে?
তারা কখনো ভুলবে না তোমার সন্তানকে।
আর কেঁদো না মাগো, কেঁদো না
কাঁদবে সেদিন, যেদিন রবে না তোমার দেশে
আমাদের সমাধিস্তম্ভ,
যেদিন করবে না কেউ মিনারের সযত্ন ।
কেঁদো মাগো কেঁদো, সেদিন প্রাণ ভরে কেঁদো।
তবুও আজ আর কেঁদোনা মা,কেঁদোনা.....!