হিমু আড্ডার সামনে বসে মৃতপ্রায় ব্রহ্মপুত্রের প্রাণমাতানো হাওয়া উপভোগ
করছি। এমন সময় চিরাচরিত সেই বিষ্ময়কর হাসি দিয়ে কবি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
জহির খান আমার হাতে তুলে দিলেন তার সদ্য প্রকাশিত “ অভ্যন্তরীণ কবিতা ”
যদিও তিনি বয়সে বড় আমাদের মধ্যে বলার সম্পর্কটা তুমি তুমি।" পড়ো পড়ে দেখো"।
হ্যাঁ আমিও পড়ে দেখেছি। সাদা মলাটে কবির আপন প্রতিকৃতি সম্ভলিত একক
কাব্যের বই এই “ অভ্যন্তরীণ কবিতা ”। সৃজনশীল ও মননশীলতার চরম ও শুদ্ধতম
প্রকাশ কবি জহির খানের “ অভ্যন্তরীণ কবিতা ” যা পাঠকের কাছে নতুন নতুন
বোধের জন্ম দেয়। একই কবিতা একেক পাঠকের হৃদয়ে একেকভাবে আলোড়ন তোলে। কেননা
কবিতা শুদ্ধতম শব্দ আর বোধ নিয়ে খেলা করে। কবি জহির খানের কবিতা
নানারূপে জ্বলে উঠে তার নিজস্ব আলোয় আর আপন আনন্দে সহজাত ভঙিমায়।
কবির কবিতা গ্রন্থের প্রথম কবিতাখানি শিরোনামহীন। কবি এই আত্মস্বরী কবিতায়
সামগ্রিকভাবে প্রাণের সমস্ত কাব্যরস—সুধা ঢেলে দিয়েছেন। কবিতা গ্রন্থের
প্রথম কবিতার শুরুতেই কবি তার প্রেমিকাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেনঃ কালো কালো
চোখ নিয়ে আর কতো দেখবে আমায়/এবার তোমার চোখ নীল করো …"।(পৃষ্ঠা —১)
অর্থাৎ একই ভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে আর কত দেখা একটু ভিন্নতা চাই। দেখার মধ্যেও স্বকীয়তা থাকা চাই।
কবি তাঁর প্রথম কবিতাটির মধ্য দিয়ে আমাদের বোধে নাড়া দেন একটু ভিন্নতর
মাত্রায় । অন্তরাত্মার ভেতর ভালোবাসার অনুভব জাগিয়ে তোলেন। জীবনে ভালোবাসার
যে কত প্রয়োজন তা কবি খুবই দৃঢ়ভাবে বলেন — বলো ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
/অনুভব করো এই আমাদের প্রেম /ভেবে দেখো আমার প্রয়োজনীয়তা।
কবি তার পরেই কথার যাদুতে ভরে তুলেছেন মোহগ্রস্থ করেছেন পাঠককুলকে।
প্রেমিকাকে বলেছেন — এবার তোমার লাল চোখ করো/দেখো চারপাশে কতশত গোলাপ ফুটে
আছে।"(পৃষ্ঠা —১)
কবিতাটির রুপকল্প এবং চিত্রায়নে সৃজনশীল ভাবনার প্রয়োগ করেছেন।
বন্ধু কবিতায় কবি বন্ধুত্বের দারুণ এক মোহনীয় সম্পর্কের কথা বলেছেন।
বন্ধুকে আহ্বান করেছেনঃ গেল আর সাথে কোন কাল সময়/কথা বলবো বলো তুমি/কি কথার
স্রোতে ভেসে যায় হে অতীত/এখন কই বন্ধু আমার?/ বন্ধু/ দারুণ সব সময় তোমার
জন্য /অপেক্ষা …/প্লিজ একটু বসো পাশে বসো/শুনো/দেখো/কেউ দেখে কেউ সবে পড়ে
থাকে/কেবল তার অতীতে …/(বন্ধু, পৃষ্ঠা —২)
কবি জহির খানের সাথে (William Wordsworth)উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর
কবিতার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্বোধ্য নয় , সহজ—সরল, স্বাভাবিক
ভাষায় লেখা। পাঠকের বোধগম্যতা অসাধারণ।
কবি এই কবিতায় আবার চিৎকার করে বলে উঠেন — আর এইসব লুকিয়ে একদিন কেউ
/চিৎকার করে বলে উঠে/ ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।"(বন্ধু, পৃষ্ঠা —২)
মানুষের চাওয়া-পাওয়া অসীম। আর এই চাওয়া-পাওয়ার মাঝে বাঁধাও অসীম। একটি
বাঁধা অতিক্রম হলে আরেকটি বাঁধা এসে হাজির হয়। আর এই অতিক্রমণ করতে পারা না
পারার মাঝেই সৃষ্টি হয় আনন্দবেদনার গল্প, স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতার
গল্প। জীবনের এ কঠিন সীমারেখা কখনও হাসায় কখনওবা কাঁদায়। তৃতীয় কবিতাটিও
শিরোনামহীন আর সে কবিতার কবি উল্লেখযোগ্য কিছু লাইন লিখেছেন যা আমাদের
জীবনের কথা বলে। জীবনের অনিবার্যতার কথা বলে। কবি বলেন— যে যার মত
করে/যতোটা পথ হেঁটে যাই ঠিক ততোটাই পিছিয়ে যাই। ( পৃষ্ঠা —৩)
আবার কবি মনের খেদ প্রকাশ করে বলেন — মেঠোপথ আর ঘুড়ি/ যেন ক্রমশ খুব অসহায়
/কেবলমাত্র সময়ের বিপরীতে ঠাট্রা চলে/কিচ্ছু করার নাই। ( পৃষ্ঠা —৩)
"জলশুন্য প্রেম" কবিতায় কবির আকাঙ্ক্ষা অতিপ্রবল যে তিনি চান তার
প্রেমিকাকে হাত ধরে নিয়ে পালিয়ে যেতে। তিনি এমন এক জায়গায় যেতে চান যেখানে
প্রকৃতই জলশুন্য ভূমি যেখানে তামাম পৃথিবীর আধুনিক সভ্যতা চিরলীন । এ
প্রসঙে কবি লেখেন — আসো হাতে হাত রেখে বেরিয়ে যাই/প্রকৃত জলশুন্য কোন
ভূমিতে/যেখানে তামাম পৃথিবীর সভ্যতা/যেখানে বৃষ্টির জল আগুনের ন্যায়
/যেখানে নির্ধারিত কোন ভাষা নেই/নেই প্রচলিত কীবোর্ডের ব্যবহার। " (জলশুন্য
প্রেম,পৃষ্ঠা —৫)
একই কবিতায় কবি তার রুক্ষতার অবস্থান থেকে একটু পরেই ফিরে আসেন আর বলেন —
ইশ্বর তুমি নিশ্চয়ই অবগত আছো আমাদের সম্পর্কে …। (জলশুন্য প্রেম,পৃষ্ঠা —৫)
কবি জীবন যাপনের কঠিন খেলার মাঝে ডুবে থাকা যায়, রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকা
যায়,যাযাবর দিন যাপন করা গেলেও কবি দেদারছে স্বীকার করেন । কবি বলেনঃ বলতে
পারো জাগতিক নিয়ম আমাদের জন্য কতটা আশীর্বাদ /আর /প্রেমের ন্যায় মানুষকে
কতোটা সাহসী করে …।(জলশুন্য প্রেম,পৃষ্ঠা —৫)
অধ্যবসায় মানুষকে সহনশীল ও ধৈর্যশীল করে গড়ে তোলে। তবুও জীবনের অসীম পথ
পাড়ি দিতে গিয়ে মানুষ বারবার হতাশায় নিমজ্জিত হয়। কবি হলে তো আর কথাই নেই,
বিরহ —দুঃখ মিলেই তার সংসার। আগুনের পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নকে জয় করেন। কবির
ভেতরে অসংখ্য কথা জমে থাকে আর তা বরফ হয়ে গলে। তার পরেও কবি নিজেকে নিজে
শান্তনা দেন। নিজে শান্তি পান। পাঠক শান্তির ছায়া খুঁজে পায় তার কথায় ও
বাণীতে। কবির কথায়-
এই বেশ বেঁচে আছি … সার্কাস দলে / এই বেশ ঠুকে জল মানুষ আমি।"(মায়া, পৃষ্ঠা —৬)
কবির হতাশা অর্থ, বিত্ত, চিত্ত এবং শুদ্ধ হৃদয়ের অসীম অভাববোধকে প্রকাশ
করে। কবি হচ্ছেন বিবেক আর পৃথিবীর সকল কিছু যদি মূক ও বধির হয়েও যায় কবি
থাকেন চির উচ্চারণশীল। কবি লেখেন গণ মানুষের কথা সমাজের সঙ্গতি অসঙ্গতির
কথা সাহসিকতার সাথে তুলে ধরেন। আর কবি জহির খান ও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি
মনকলা কবিতায় বলেনঃ চালবাজ দিন রোজ চেখে থাকে/গণ মানুষের ঘাম নুন নুনু /
টাটানো চোখ চাতকিনী দেখে সব সমাজের তামাশা …।"(মনকলা — পৃষ্ঠা ৭)
কবি " নিকোটিন" কবিতায় শৈশবকালীন মধু প্রেমে নস্টালজিক কবি ফিরে যান পুরোনো
প্রেমে , পুরোনো মধুরতায়। যেখানে শৈশব কৌশরের জাগানিয়া সব ধ্যানী স্মৃতি
মনে পড়ে অবিরাম। কবি সে সব স্মৃতি মনে করে বলেন — এই পথ ধরে প্রেমিকার
বাড়ি/কত শত লুকোচুরি /স্কুল পলাতক সৈনিকের আহাজারি /ধ্যানে নিবিষ্ট জাগতিক
প্রেম।
আবার কবি একই কবিতায় কবি সেই সব সময় আর স্মৃতিসমূহ কে প্রেমের দায়ে
অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন — ধ্যানে নিবিষ্ট প্রেম / এই সব ভুলে সব ঋষি /
প্রেমের দায়ে অভিযুক্ত …।
কবি যতদিন ধরে প্রেম করছেন ততদিনে প্রেমের আগুনে দহনে পুড়েছেন। অনিয়মের ধোয়ায় নিকোটিনের ক্যাপচারে ফুসফুসের অবস্থার বারোটা।
তারপরও কবি আমূল শান্তনা নিয়ে বলেন প্রেমের শত যন্ত্রনা বেদনা কষ্টের ভেতরে
বলেন— তবু প্রতিদিন নিকোটিন দহনে /এই বেশ ভাল প্রেম। (পৃষ্ঠা —৮)
উল্ল্যেখ্য এই নিকোটিন কবিতায় কবি জহির খান রোমান কবি ও দার্শনিক লুক্রিতিউসের কথা উল্ল্যেখ করেছেন।
তিতুস লুক্রেতিউস কারুস বিখ্যাত রোমান কবি ও দার্শনিক। তার একটি রচনাই
বর্তমানে অক্ষত আছে। এপিকুরোসবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত এই কাব্যগ্রন্থের
নাম De Rerum Natura।ইংরেজিতে বইটির নাম "On the Nature of Things" বা "On
the Nature of the Universe"।
প্রাচীন কালের খ্রিস্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ঈশ্বর এবং ধর্মের শত্রু
হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল বলেই সেকালের অনেক লেখায় তার জীবনকে বিকৃত এবং
বিধ্বস্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন, ৪র্থ শতাব্দীর ইলিরিয়ান (রোমান
সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান) সাধু জেরোম (St. Jerome) লিখেছেন,
লুক্রেতিউস নাকি অদম্য ভালবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগলামির মাঝে মাঝে
যেটুকু সময় ধাতস্থ থাকত তখন কবিতা লিখত এবং পরিশেষে আত্মহত্যা করেছিল, যার
ফলে মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো সম্পাদনা করতে হয়েছিল সিসেরোকে। শেষ লাইনের
কিছুটা সত্যতা থাকলেও এর আগে যা বলেছেন তার পুরোটাই বানোয়াট। এগুলো যে
বানানো কথা তার আরও প্রমাণ মেলে লুক্রেতিউসের অনুরাগী
মহাকবি ভের্গিল (ভার্জিল) এর লেখনীতে।(উইকিপিডিয়া)
কবি "মুক্তি চাই" কবিতায় সময়ের সাথে চলাফেরা তথা দোলাচলের কথা ব্যক্ত করেন।
কবি এখানে মনে করেন যদিও তিনি নিজের ইচ্ছেমতো চলেন তার মধ্যেও তিনি মুক্ত
নন। তিনি প্রশ্ন রাখেন — তবু এক অভুক্ত শরীর দোলে সময়ে অসময়ে/আর হাহাকার
দলের এক পথিক/পথে রাজপথে/ভয়াল রাতের অন্ধকারে /কি করে কই থাকে কি খায় কেমনে
ঘুমায় কেমনে লাগায়?(মুক্তিচাই — পৃষ্ঠা -৯)
কবি তাঁর "থার্ড আই" কবিতায় ভবিষ্যৎ সময়ের প্রতি ইঙিত করেছেন। কবি জানান
দেন তাঁর দুটি নয়ন নয় আছে তিনটি নয়ন। তিনি হুইল চেয়ারে বসে তাঁর তৃতীয় নয়নে
স্বপ্ন আকেন। তাঁর মন ক্যামেরায় ধরা পড়ে ভিন্ন ছবি ভিন্ন সুর। কবি আগামী
দেখতে পান। কবির বয়সের সাথে সাথে প্রেমেরও বয়স বাড়ে। নদীরও বয়স বাড়ে। কবি
তাই বলেনঃ হুইল চেয়ারে বসে /থার্ড আই স্বপ্ন আঁকছে / সেই সাথে টায়ার্ড
হচ্ছে আমাদের প্রেম/অপেক্ষমান ব্রহ্মপুত্র। (পৃষ্ঠা —১০)
"বিষ ঠোঁট" কবিতায় কবি প্রেমিকার ব্যস্ত সময়ের ভেতরে নিজেকে খুঁজে পেতে
চেষ্টা করেন। শত নিষিদ্ধতার ভেতর প্রেমিকার জন্য মায়া অনুভব করেন প্রেমিকার
ঠোঁটের আগায়। তবুও বলেন — কিছু সময় পর অপরাধবোধ /আমাকে গ্রাস করে নেয়/আমি
কি করতে পারি জানিনা। (বিষ ঠোঁট,পৃষ্ঠা –১১)
এরপর শিরোনামহীন পাঁচটি কবিতা রয়েছে। এ সকল কবিতা পড়লে দেখা যায় কখনও
ভালোবাসা কখনও প্রেম বিরহ মান অভিমানে মুখরিত। কবি কখনও প্রিয়ার প্রতি
ভালোবাসায় বিমগ্ন হয়ে বলেন — প্লিজ কাছে থাকো ভালোবাসা / রোদ থেকে দূরে
থাকো/ত্বকের যত্ন নাও …।(পৃষ্ঠা—১২)
মূলত প্রেমিক কবি জহির খান ভালবাসতে গিয়ে প্রেমিকাকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে
দেখেন। প্রেমিকাকে কখনও মনে হয় দেবী কখনোবা মাতাল কখনোবা ধ্বংস। আর তাই তো
কবি বলেনঃ তুমি দেবী তুমি মাতাল তুমি ধ্বংস /ঈশ্বর জানে কি?/ভালোবাসার
ন্যায় কত সত্য গোপন করে/তবুও আমি শাল মহুয়ার ন্যায় ভালোবাসি তোমাকে
…।(পৃষ্ঠা —১৩)
এর পরের কবিতার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। কবি এই কবিতায় নিজের আত্মসমালোচনা
করেছেন। কিভাবে আত্মসমালোচনার সাথে সত্যোচ্চারন করেছেন তা তাঁর কবিতাখানি
সরাসরি পাঠেই দৃশ্যমান হয়।
"বহুকাল শুন্যতায় আমার একাকী জীবন। আমি পুরহিত হতে শিখিনি। শৈশব ইশকুল আমার
দুধের পেয়ালায় সাপ পোষার এক গল্পমাত্র। এখন আমি আমার শৈশব কেটে যৌবনে।
নিশ্চয়ই অবগত। ইশকুল বদলে গেল আমার খাসিলত বদলালো না। শুধু সামাজিক একটা
পরিচয় হলো। কিছু সময় পর আমি বাবা হলাম। রক্ত ও মাংসের ব্যবহার বুঝতে চেষ্টা
করলাম। কেউ কেউ বলতে লাগলো মহান পুরুষ আমি। অনেকে ভিন্নমত পোষণ করলেন
"খচ্চর পুরুষ "। আমি ইতিহাস ও ভূগোলে গেলাম সেই সাথে বুঝতে চেষ্টা করলাম
মহান পুরুষ আর খচ্চরের ব্যবধান। কিছু সময় পর আমি শুন্য মগজ নিয়ে ফিরে
এলাম। খরচের খাতায় পড়ে গেল আমার শ্রম ও সময়। (পৃষ্ঠা —১৪)
কবি জহির খান আসলে এ কবিতার মাধ্যমে নিজেই নিজের আত্মসমালোচনা করেছেন বা সাহস দেখিয়েছেন।
আবার পরবর্তী কবিতায় কবি প্রেমকে অনুজ বলেন। কবি আরও বলেন প্রেম কখনও মহান
হতে পারেনা। কবি বলেন প্রেমের গভীরতার চাইতে কবির নিজের শুন্যতা অনেক ভালো।
কবি বলেনঃ আমার অনুজ প্রেম তুমি কখনো কখনো মহান হতে পারো না/তোমার যত
গভীরতা তার চেয়ে ঢের ভালো আমার এই শুন্যতা।"(পৃষ্ঠা —১৫)
আমি তব পড়ি হে আমার প্রিয় বই প্রিয় বউ/তব সম আমার সব তোর জন্য/ তুই যা তা
ধা দুধ বান-ঘি বা ফুল/হে ফুল তবে তুই আগুন হয়ে আয়/আমার নিজ গৃহে নিজ
বনে…।(পৃষ্ঠা --১৬)
কবি জহির খান যেভাবে কবিতা লিখে যাচ্ছেন, যেভাবে চর্চা করে যাচ্ছেন, কবিকে
অস্বীকার করবে এমন কেউ নেই। ঈর্ষা নিয়ে সমীহই শুধু করবেন সমালোচক-কবিতা
গবেষকবৃন্দ। আর কবিতার পাঠক ঠিকই একটা বড় জায়গা কবি জহির খানের কবিতার জন্য
রাখবেন। । কবি জহির খানের কবিতা খুব সাবলীল। যে কোনো বয়সের পাঠক পড়ে সহজে
বুঝতে পারবেন। তিনি নানাভাবে কবিতা সাজিয়েছেন। একটার সঙ্গে আরেকটার তেমন
মিল নেই। প্রত্যেকটি কবিতায় নতুন সুর, নতুন ভাবনা, নতুন দিকনির্দেশনা।
সাধারণ পাঠক অবলীলায় এসব পড়ে যেতে পারবেন। আভ্যন্তরীণ কবিতা বইটিতে আছে
সর্বমোট ১৬(ষোলোটি) কবিতা।
আলোচ্য গ্রন্থে লেখক ভাব বা বিষয় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি কবিতার আঙ্গিক, ছন্দ
বা কবির ব্যবহৃত চিত্রকল্প-উপমাগুলো অনুধাবন করলে আমরা পাঠক হিসেবে
আলোড়িত হই, আনন্দিত হই আবার বিস্মিত হই । অভিভূত হই আবার ঋদ্ধ হই। সব
মিলিয়ে কবিতাগুলো আমাদের জীবন ও অসীমকে জুড়ে দেয় অসংখ্য বোধ আর অনুভবের
সুতোয়। এ যেন এক মননশীলতার শুদ্ধতম প্রকাশ। কবির এই শুদ্ধতম ভাবনা ছড়িয়ে
পড়ুক প্রতিটি মানুষের শুদ্ধ হৃদয়ে।
অভ্যন্তরীণ কবিতা
জহির খান
প্রচ্ছদ: হাসনাত আকরাম
প্রকাশকঃ শামীম আশরাফ, পরম্পরা
প্রকাশকাল: মে ২০১৯
বইটির মূল্য — একশত মাত্র