ছবি : নেট থেকে
নজরুল ইসলাম তোফা : প্রস্তর যুগের আদিম মানুষ তাদের ক্রিয়াকলাপ,
দেবতা কুলের শক্তি এবং লীলা বৈশিষ্ট্যের উপরেই যেন অন্ধবিশ্বাস ছিল,
তখন
ছিল না মনেরভাব প্রকাশের কোনো "ভাষা"। ঋতু চক্রের পরিবর্তনে জীবনকর্মের
প্রয়োজনের তাগিদেই ধীরে ধীরেই নিরক্ষর
মানুষ জাতিরাই সৃষ্টি করা শিখ ছিল ''ভাষা''। দীর্ঘ পথের পরিক্রমায় এমন নিরক্ষর মানব
জাতি ভাষার সহিত অক্ষর আবিষ্কার করতে শিখে। এই মানব সমাজের উন্নয়ন বা অগ্রগমনের
ইতিহাস যেমন বহুধা বিচিত্র। আবার সে উন্নয়নের পশ্চাতেই ক্রিয়াশীল শিক্ষার ইতিহাসও তেমনি "বিচিত্র
কিংবা গতিময়"। এক একটি 'দেশ এবং জাতি' নানা ভাবেই
নানা উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের নিজস্ব
শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, তাদের সু-শিক্ষার ভাষা গড়ে তোলে। তাদেরই ভৌগোলিক,
সামাজিক,
ঐতিহাসিক,
নৃতাত্ত্বিক
এবং সাংস্কৃতিক সহ ইত্যাদি উপাদান বারবারই
সে সকল ব্যবস্থার পরিবর্তন এনেই যেন 'নবীকরণ ও সংস্কার' চালিয়ে সুশিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তাই, এমন এই বাংলাদেশে 'প্রাথমিক
শিক্ষার ইতিহাস' শুরু
হওয়ার এক বিশাল ইতিহাসও রয়েছে। আর
সেই ইতিহাসটি 'নিরক্ষরতা' দূর করার জন্যেই বদ্ধপরিকর পরিবেশ
সৃষ্টির এক ইতিহাস। এই পরিবেশ
সৃষ্টিরজন্যই প্রায় ৪ শো বছরই বলা যায়,
দীর্ঘদিনের
একটি 'ইতিহাস'। আবারও
বলি মানবসভ্যতার শুরু তো নিরক্ষরতার
মাধ্যমেই, তাকে মোটা দাগের আলোকে অমর্ত্য সেন বলেছে,
নিরক্ষর
মানুষের হাতেই সমাজের সভ্যতার বড় বড় অনেক-"ভিত" গড়ে উঠেছে। ইতিহাস
সাক্ষ্য দিচ্ছে একটা সময় ছিল মানুষ তখন নিরক্ষর হয়েও শিক্ষা লাভ করে দেখিয়েছে। অনেক
ধরনের 'ভাষা', কতো রকমের নানান 'অক্ষর'
তাঁদের
নিজস্ব হাত ওমুখ দ্বারাই যেন সৃষ্টি করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলাই যায়, নিরক্ষর
মানুষ যে" জ্ঞানী
ব্যক্তি" হননি এমনও বলতে চাই না। 'লালন
শাহ' নিরক্ষর মানুষ কিন্তুবহু
সাক্ষর মানুষ তাঁর কাছে যুক্তি তর্কে কখনো দাঁড়াতে পারেনি। তবুও যেন এইদেশের
মানুষের সাক্ষরতার প্রয়োজন রয়েছে। অক্ষর
আছে বলেই তো লালনের দর্শন ওগানগুলো আজও
সমাজে রয়েছে। আসলে বলতে
চাই যে, 'নিরক্ষরতা' যদি নাও দূর হয়তাহলে
সবাই লালন শাহের মতো হয়ে যাবে। বলতে
চাই যে, লালনসহ অনেক গুনী জনদের চিন্তা
ভাবনার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগটা বহুগুন বেড়ে যাবে।
সুতরাং,
মানুষের
কল্যাণেই যেন সাক্ষরতার দরকার আছে। সাক্ষরতা
বিচরণের ক্ষেত্রটিকে বহুমুখী করে বাড়িয়ে
তোলে অন্যের চিন্তা এবং অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত
হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। ১৯৭২
এ স্বাধীন বাংলাদেশে ১ম 'আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা'
দিবসটিকে
পালন করেছে। তাই প্রতি
বছর এই দেশে সাক্ষরতা দিবসটি পালনের জন্য
দেশের সরকার 'প্রাথমিক ও গণশিক্ষা' মন্ত্রণালয়ের
তত্ত্বাবধানেই ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। ইউনেস্কোর ইংরেজি থিমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে, ‘'সাক্ষরতা
অর্জন করি, ডিজিটালবিশ্ব গড়ি'’
এমনই
স্লোগান সামনে রেখে, এ সরকার আগামীর ভবিষ্যৎ দেখছে। বাংলাদেশের
সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা কিংবা সাক্ষরতার বিকল্প নেই। সাক্ষরতা মানুষকে
কর্মদক্ষ করে, মানবসম্পদে পরিণত করে। শিক্ষার
হার বৃদ্ধি ও শিক্ষারমান উন্নয়নের
ক্ষেত্রে নিরক্ষর জন-গোষ্ঠী একটি অন্তরায়। সুতরাং
আনুষ্ঠানিকশিক্ষার পাশা-পাশি উপানুষ্ঠানিক
শিক্ষারও গুরুত্ত্ব অপরিসীম। এ
দেশের নিরক্ষর জন-গোষ্ঠী ও আষ্ঠানিক শিক্ষা
হতে অনেক বঞ্চিত শিশু, কিশোর-কিশোরীরসঙ্গে
যুব ও বয়স্কদের 'সাক্ষরতা কিংবা মৌলিক শিক্ষা' প্রদানের
পাশাপাশি যেন ট্রেড ভিত্তিক দক্ষতা-প্রশিক্ষণ
প্রদান হলে তারা উন্নত মানবসম্পদে পরিণতহয়েই
দেশের 'অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা' রাখতে সক্ষম
হবে। বর্তমান সরকার
এইলক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নও করেছে। "সাক্ষরতার
হার" বৃদ্ধির পেছনেই জাতির
জনকের অবদান স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়। এ
অভিশাপ মোচনের লক্ষ্যেই যেন "বঙ্গবন্ধু"-
গণমুখী শিক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়ে ছিল। ‘'ড.কুদরত-ই-খুদা'’ শিক্ষা কমিশন গঠনও করেছিল। তাই শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূরকরতে তিনি চেয়ে ছিল। কৃষক-শ্রমিক
ও মেহনতি মানুষের সন্তানেরা যাতে নিরক্ষরনা
থাকে, সেই চিন্তা তিনিই করেছিল। শোষিতের ঘরে শিক্ষার আলো দান করতে চেয়েছিল। তাঁর প্রাণটিকে কেড়ে নেওয়ার কারণে
সবকিছু ধূলায় লুণ্ঠিত হয়েছে। তাই সেই দিক থেকে- বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত গড়ে দিয়ে ছিল কৃষক
সমাজের মাধ্যমেই, আজও তাঁরাই
অর্থনীতিকে সচল রেখেছে শ্রম বা মেধা'র প্রচেষ্টায়। সেই"মজদুর"
শ্রেণীরাই দেখা যাবে যে বেশির ভাগই তাঁরা "নিরক্ষর"। সাক্ষরতা সবসময়
'জ্ঞানের
বাহন' নয়। তবুও 'নিরক্ষরতা
থেকে মুক্তি' পাওয়ার জন্যেই সময়ের পরিক্রমায়
সাক্ষরতার চাহিদাটাও বাড়ছে। নূন্যতম
শিক্ষা যোগ্যতা অর্জন করাঅবশ্যই দরকার
রয়েছে। এ বাংলাদেশের অল্প শিক্ষিত ব্যক্তি আরজ
আলী মাতব্বর শুধুমাত্র 'দ্বিতীয়
শ্রেণী' পর্যন্ত পড়েও তিনি সুশিক্ষার আলো ছড়িয়েছে। বাংলা বই পড়েই যেন নানান প্রশ্ন মাথায়
নিয়ে বহুকিছু রচনা করেছে, পাঠক সমাজে সমাদৃত
হলেও এমন দুএকটি উদ্ধৃতি আঁকড়ে ধরে সামাজিক পরিমণ্ডলের দৃষ্টান্ত দেয়াটা অবশ্যই ব্যতিক্রম। সুতরাং নিরক্ষর থাকার সমস্যার দিক সত্যিই অনেক। আবার এ কথাও
অবশ্যই সত্য মানুষ নিরক্ষর থাকলে তো আর না খেয়ে মারা যায় না। তবুও নিরক্ষরতা দূর করালে মানুষের
বিচরণের সীমা বহু গুণ বেড়ে যায়। বাংলাসাহিত্যে'র একজন নন্দিত সু-লেখক "প্রমথ
চৌধুরী" বলেছে, ‘'সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত। '’ স্বাক্ষর
সম্পন্ন না হলে স্বশিক্ষিত হবেই বা কেমন করে। সুুতরাং কোন্ ব্যক্তি নিরক্ষর- সে
ব্যক্তির স্বাক্ষর জ্ঞান নেই, তাঁর চেতনার
মানটিও হবে অনেক নিম্ন মানের।
অজানাকে
জানার মাধ্যম শুধু যে শিক্ষা বা সু-শিক্ষা তা কিন্তু নয়, ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন সেই সাথে শিক্ষার মাধ্যমে বহু অর্জিত জ্ঞানের
দ্বারা বাস্তবতার সহিত খাপ খাওয়ায়েই সামনের
দিকে চলার দক্ষতা অর্জন করাটাই 'শিক্ষা'। প্রতিটি বিশিষ্ট জাতি কিংবা সমাজে 'শিক্ষা'
নামক
বিষয়টির বোধ এবংতাৎপর্য
ক্ষেত্রবিশেষে সমতাধর্মী কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে স্বতন্ত্র। একাধিক থেকেই দেখলে,
ভিন্ন
ভিন্ন জাতি, ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের মানুষ একত্রিত হয়েই যেন সর্ব- বৃহৎ মানবগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। আর সেটিকে প্রকৃত অর্থে"সু-শিক্ষা" বলা যায়। এই মানবগোষ্ঠীর প্রভাব সামগ্রিক ভাবেই শিক্ষা নামক বোধটিকেই প্রভাবিত করে নানা ক্ষেত্রে, আবার
অপরদিকে সমাজ কিংবা জাতিবিশেষের
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং লক্ষণ'কে সেই সমাজ বা জাতির শিক্ষা প্রক্রিয়াকেই অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে। একটু অতীতের দিকে তাকিয়ে ধরা যাক আদিম
গোষ্ঠীর কথা, তখন থেকে বয়স্করা যুগ যুগ ধরে ছোটদেরকেই আগুনের ব্যবহার, মাছ ধরা, শিকার করা,
গাছে
চড়া, ডিঙি বা নৌকা তৈরিসহ তা চালানো, সাঁতার কাটা,
যে
কোনো বস্তুর ওজন এবং বস্তু বা মানুষের ক্ষমতার বিচার, দূূূূরত্বের
বোধ, বসত বাড়ি কিংবা আশ্রয় তৈরি মতো অনেক বিষয়ে জ্ঞান নিয়ে থাকতো। এমন
বেশ কিছু বিষয়ের পাশা পাশি ভাষা জ্ঞানের সহিত অক্ষর জ্ঞানেও দক্ষ হতে বয়স্ক ব্যক্তিরাই সহায়তা করতো। বয়স্করাই যে পরিপূর্ণতা নিয়ে সেই প্রস্তরযুগের
আদিম মানুষ যথাযথ নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করতে পারতো তা নয়।
সাময়িকভাবে তারা সমস্যার সমাধান করার
কথা ভেবেই সেই সব মানুষ নিরক্ষরতা দূরীকরণের
জন্যেই 'ভাষা কিংবা অক্ষর' আবিষ্কারের কথা ভেবে ছিল বা শিখে
ছিল । শুরুতে
নিরক্ষর মানুষের হাত ধরেই যেন নিজ ভাষা আসতে শুরু করেছে। তার পরেইতো আসে- অক্ষর
জ্ঞান।
বাংলার
প্রাথমিক শিক্ষা'র সাথে বাংলা লিপি কিংবা অক্ষরের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বাংলা
লিপি কিংবা অক্ষর অথবা হরফের "উৎস ও উৎপত্তি" কীভাবে হয়েছিল তা স্পষ্ট জানা না গেলেও গবেষণার মতে মনে করা হয়,
বাংলালিপি'র ব্যবহার খ্রিস্টাব্দ "একাদশ শতক"
থেকেই প্রচলিত। ইংরেজ শাসনের
বহু আগেই মুসলিম শাসনকালে তার শুরু। বাংলার সুলতানী শাসনে লিপির ব্যবহার এবংবাংলা ভাষার পুঁথি রচনা ব্যাপকতা পেতে থাকে। এমন এ "বাংলা" লিপির ব্যবহার প্রায়ই মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে যেন শুরু হয়েছিল। তারপরেই যেন পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার ছিল। আরো অনেক পরে বিশেষভাবে বাংলার অন্য অঞ্চলেও
ব্যবহার অব্যাহত ছিল। এর পর 'বাংলা'
লিপিকে
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
রাজত্বের অধীনে 'ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর' এর দ্বারাই 'আধুনিক বাংলা' লিপিতে 'প্রমিত'
করা
হয়েছে। তাই বর্তমানে
এই 'বাংলা লিপি কিংবাঅক্ষর'
বাংলাদেশ
ভারতে সরকারী লিপিতেই পদমর্যাদা স্থান পেয়েছে। সুতরাং, বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গেই
যুক্ত রয়েছে। তাই, অক্ষর
দিয়েই তৈরিহয়েছে "পুঁথি বা গ্রন্থ",
সে
সকল গ্রন্থের মধ্যেই মানুষের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ হয়ে
থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস,
অর্থনীতি
এবং সব শ্রেণী পেশার মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার
কথাও ভাষার সাহায্যে বহু গ্রন্থের মধ্যেই লিপিবদ্ধ। বর্তমানকালেই তার
বিশাল ব্যাপ্তি, বিচিত্র তার আকার। এই
সম্পর্কে আরো পরিস্কার পরিসংখ্যানের
আলোকেই বলতে চাই, গোপাল হালদার তাঁর "বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা" গ্রন্থে দেখিয়েছে যে, সুলতান
আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলেই যেন'বাংলা
সাহিত্যে'র' বহু উন্নতি হয়েছিল। পাশাপাশি সতেরো শতকের মধ্যেই" পাঠশালা"
নামক প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষায় সাক্ষরতা লাভ বাঅ আ ক খ ইত্যাদি অক্ষর পরিচয়েরও সন্ধান মেলে। "বাংলা পাঠশালা" নামক প্রাথমিক শিক্ষার এক 'প্রথাবদ্ধ
ধারা' চালু হয়ে ছিল সতেরো শতকে ইংরেজরা এইদেশ
দখলের অনেক পূর্বেই। বিভিন্ন
বাংলা সাহিত্যে পাঠশালা সম্পর্কে যা জানাযায়
তা থেকে ধারণার আলোকে বলা যায় যে সতেরো শতকের আগেই হয়তো "পাঠশালা"শিক্ষার শুরু। সে
হিসেবে বাংলা প্রাথমিক শিক্ষার বয়স চার শো বছরের কম নয়।সুতরাং, 'বাংলা ভাষার
অক্ষর' শিক্ষা কয়েক জন্মের মানুষরা তাকে পাঠ করে শেষ করতেও পারবে না। তাইতো,- ''মানুষের নিরক্ষরতা" দূর করতে এমন
সব ''পুঁথিকিংবা বই''
পাঠ
করবার সুযোগ দীর্ঘদিনের এক বৃহৎ ইতিহাস। আবার
তাকে দিয়েইতো অন্যের বিচিত্র চিন্তার সাথে
নিজের চিন্তা ভাবনার আদান-প্রদান করা যায়।
বাংলাদেশের
ভৌগোলিক পরিসরেই যেন 'সাক্ষরতা' শব্দের প্রথম
উল্লেখ হয়েছে ১৯০১সালে জণগন বা
'লোক
গণনার অফিসিয়াল ডকুমেন্টে'। সেই
শুরুতে স্ব অক্ষরের সঙ্গে অর্থাৎ
নিজের নামধাম লিখতে যে কয়টি বর্ণমালা প্রয়োজন তা জানলেই তাকে
স্বাক্ষর বলা হতো। ১৯৪০-এর দিকে
পড়া লেখার দক্ষতাকে সাক্ষরতা বলে অভিহিত
করা হতো। ষাটের দশকেই
পড়া এবং লেখার দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সহজহিসাব-নিকাশের
যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষই যেন স্বাক্ষর মানুষ হিসেবে পরিগণিত হতো। আশির দশকে লেখা-পড়া এবং হিসাব-নিকাশের
পাশা পাশি সচেতনতা কিংবাদৃশ্যমান
বস্তুসামগ্রী পড়ার ক্ষমতার সঙ্গেসঙ্গেই যেন তারা সাক্ষরতার দক্ষতাতেই স্বীকৃতি পায়। সুুতরাং-আধুনিক তথাকথিত সভ্য সমাজের শিক্ষারধারাতে এমন ইতিহাসের কথাগুলো বাংলাদেশের বেশ কিছু দক্ষতা বা
নৈপুণ্যের শিক্ষা অথবা বৃত্তিমূলক শিক্ষার
শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করবার কথা ভাবায়।কারণ,- যত দিন যায় 'সভ্যতা ও
অগ্রগতির বিকাশ' হতেই থাকে, ততই বাস্তব প্রয়োজনের
নিরিখে দরকার হয় শিক্ষা। সুতরাং,
বয়স্ক
সমাজেরই পরম্পরাগত কিছুনির্দেশ-অভিমুখী
শিক্ষা যার মধ্যেই যেন "জ্ঞান নৈপুণ্য আর মূল্যবোধের সম্ভার'
ওতেপ্রাত
হয়ে থাকে। এ পৃথিবীর
প্রতিটি উন্নত দেশের মানুষ ১ শো ভাগউচ্চ
শিক্ষিত না হলেও ১০০ ভাগ স্বাক্ষর সম্পন্ন তা জোর দিয়েই বলা যায়। জ্ঞানের
আঁধার মানুষের সুখ এবং সুবিধা নিশ্চিত করে, স্বল্প
সম্পদের বহু-বিধব্যবহার অথবা
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে, সুদক্ষ ও
যোগ্যজন-শক্তি গড়তে শিক্ষার আমূল পরিবর্তন
বর্তমান সময়ের চাহিদা। তত্ত্ব বাতথ্যে'র- প্রায়োগিক শিক্ষায় উৎপাদনমুখী সমাজে
তার প্রয়োজন গভীর ভাবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই সাক্ষরতার সহিত জীবন
নির্বাহী দক্ষতা, যোগাযোগের জন্যেই
দক্ষতা, ক্ষমতায়নের জন্য দক্ষতা, প্রতিরক্ষায়
দক্ষতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতাতেও
সংযোজিত হয়েছে। একটি
দেশের
জন্যই 'সাক্ষরতা' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার সঙ্গে 'সাক্ষরতা'
আর সাক্ষরতার সঙ্গেই যেন দেশের উন্নয়নের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। যেদেশের
সাক্ষরতার হার যত বেশি সেদেশ তত উন্নত। স্বাক্ষর
জাতি সচেতন জাতি।শিক্ষা
সাধারণত ৩ টি উপায়ে অর্জিত হয়। যা-
'আনুষ্ঠানিক', '
উপানুষ্ঠানিক'
কিংবা
'অনানুষ্ঠানিক'। যারা "আনুষ্ঠানিক শিক্ষা" বঞ্চিত
বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায়নি তাদের স্বাক্ষরতার
জন্যই 'উপানুষ্ঠানিকভাবেই শিক্ষা' দেওয়াহয়। বাংলাদেশে
সরকারি প্রচেষ্টার বাইরে বিভিন্ন এনজি সংস্থাগুলো 'সাক্ষরতা'
বৃদ্ধির
জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক
বাংলাদেশ গঠন করতে প্রত্যেকের
অবস্থান থেকেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সাক্ষরতাই
হচ্ছে শত ভাগশিক্ষিত করার প্রাথমিক ধাপ। সেইজন্য নিরক্ষরতা, ক্ষুধা
বা দারিদ্র্য হলো দেশের
উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। এ
সকল সমস্যাকে মোকাবেলা করতে পারে কেবল
মাত্র শিক্ষা। প্রতিটি
নাগরিককে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই সমাজের
প্রতিটি স্তরে সচেতনতার জরুরি।