টান - ফখরুল হাসান
টান - ফখরুল হাসান
  • সেদিন রাত্রিবেলায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে একটু না, বরং অনেকখানিই দেরি হয়ে গেছিলো। ঝাড়ি খাওয়ার ভয়ে খালাতো ভাইকে ডাকবার সাহস হয়নি। বদমেজাজী খালাতো ভাই ঘুমিয়ে নাক ডাকছে কিনা নিশ্চিত না হলেও মেরী পেয়ারকী স্বর্ণালী জেগে আছে তা নিশ্চিত জানি। ভাবীর কড়া হুকুম কখনোই রাত্রিবেলায় আমাকে না খাইয়ে স্বর্ণালী যেন না ঘুমায়। অতি সাবধানে দরজার কাছে গিয়ে স্বর্ণালীকে ছোট্ট করে একটা মিডসকল দিলাম দুরুদুরু বুকে। মিসডকলটি ছোট্ট করে দিলেও সেটা তার পাগল মন মনরে রিংটোনের কারনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে গায়েবী তীরধনুকের মতো। অবশেষে এটা আইয়ুব বাচ্চু বা জেমসের কনসার্ট পরিণত হয়েছে ! ভাই-ভাবী জানে, এই টোন কেবলমাত্র আমার জন্যই সেট করে রাখেছে স্বর্ণালী। মৃদু শব্দে দরোজা খুলে গেলে, দুটো রক্তজবা লাল চোখ, ঘুমের ঘোরে স্বাভাবিক নেই। চিপচিপে গড়নের অপরূপ দেহের সৌন্দর্যে, দু'চোখ ভরে দেখতে লাগলাম। যেমন মসৃণ পেট, তেমনি পেটের মাঝে সুগভীর নাভি দৃষ্টি কেবল গর্তে পতিত হয়। চিকন কোমরটি যেন রেললাইন। বক্ষদেশে উন্নত সুউচ্চ পর্বতমালা , ভেজা ভেজা গোলাপী ঠোঁট। তীক্ষ্ণতর চাহনি , আমার সম্মুখে পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে উদিত হয়ে , কলিজায় খামচে দিল । মুখটাতে অনেক কষ্টেও হাসি হাসি ভাব। অতিকষ্টে পাশ কেটে আমার রুমে প্রবেশ করলাম মাত্র, স্বর্ণালীর কোকিল কন্ঠে রোমান্টিক ভাবে ডাক দিলো! - ফ্রেশ হয়ে খেতে আসেন । ভয়ে ভয়ে কোনোমতে জবাব দিলাম - খেয়ে এসেছি , আজ আর খাবার ইচ্ছা নেই। - আপনার ফালতু বন্ধুগুলোর সাথে যদি খেয়ে আসবেন ! আমাকে রাত জাগতে হলো কেন! বলেন তো শুনি ? এবার আরো ভয়ে ভয়ে বললাম - আমি কি বলেছি রাত জাগতে ? আমার কথা শোনা মাত্র, স্বর্ণালীর সেই রোমান্টিক চেহারা মুহূর্তে পরিবর্তন হয়ে গেল। কালবৈশাখীর ঘনকালো মেঘ ধারন করে অকল্পনীয়তায়। ঝড়ের হুঙ্কার দিয়ে পুরো ঘরময় একটা হালকা পাতলা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করলো। অগ্নিমুর্তি ধারণ করে ফুশ ফুশ করতে করতে বলে - এবার অন্তত দুধটাতো খেয়ে যান। এবার আমি আর টু শব্দও করলাম না। বাধ্য ছেলের মতো সোজা স্বর্ণালীর কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা ঢোকে সব দুধ পান করে, গ্লাসটি টেবিলে রেখে কোন রকমে জান নিশ্বাস ফেললাম। রুমে এসে বিছনায় শুয়ে স্বর্ণালী এখন এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী কী করতে পারে ভাবতে লাগলাম। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেছি খেয়ালই নেই। ভাবীর ঝাড়িতেই বুঝলাম ভোর হয়ছে। - ১২টা বাজে, এখনো ঘুমাস?? - স্যরি ভাবি, দ্রুত উঠে বাথরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম। ভাবী পেছনে থেকে বলতে লাগলেন - রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি। আমাদের সাথে মার্কেটে যেতে হবে। ভাবির সাথে বের হতে গেলে আবার সাহেব বাবু সেজে যেতে হয়। বিরক্তকর লাগে এসবে আমার। পাঞ্জাবীর সাথে কেবল সেন্ডেল পায়ে দিয়ে রেডি হয়ে অপেক্ষা করছি। মহারানীর ঘন্টা-দুয়েক লাগবেই সাজসজ্জার জৌলুস আনতে। মাঝেমাঝে মনে হয়, এমন সাজারও কী দরকার! ঐশ্বরীয় সৌন্দর্যে যে কেউ কুপোকাত হবে এটা নিশ্চিত। সাজলে সাজগুলো যেন অপমানিতবোধ করে। দেরি হওয়া দেখেও কিছু বললাম না, যদি আরো রাগে ফুঁসে ওঠে সেই ভয়ে। তাছাড়া অনেকে বলে,মেয়েরা সাজতে সাজতে ভুলে যায় টুকিটাকি অনেক রকমের রাগ- অভিমান। সেজন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা। এই অপেক্ষা আমাকে দাঁড় করালো অসম্ভব সৌন্দর্যের সামনে। দেখতে দেখতে দাঁড় হয়ে গেলাম হা- মুখে,বিশ্বাসও যেন হচ্ছে না.... আমি কেবল তাঁদের পিছপিছ পথ অনুসরণ করছি। কয়েক কদম এগোলেই শহরের বড় মার্কেটটি। স্বর্ণালী একবারও পিছু ফিরছে না। অথচ আমার তৃষ্ণা বেড়েই যাচ্ছে,প্রতি কদমে। মনে পড়ছে, বড়ভাইয়ের বিয়ের আগে মানে স্বর্ণালীর খালাতো বোন আমার ভাবী হয়ে আমাদের ঘরে আসার আগে, স্বর্ণালীর স্কুলে আসা-যাওয়ায় এভাবেই পিছু পিছু হাঁটতাম। একদিন সিনেমার নায়কের মতো সামনে দাঁড়িয়ে দম আটকে বলেছিলাম, স্বর্ণালী - আমি তোমাকে ভালোবাসি... হঠাৎ এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে হো হো করে হেসে ওঠি। ভাবী আর স্বর্ণালী দুজনেই চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে,ভাবী বলে ওঠে - কি রে কী হলো একা একা হাসছিস যে....! স্বর্ণালী চোঙামুখে পিছু ফিরে ঠোঁট থেকে বের করে বলে - পাগল একটা.... স্বর্ণালীর নাকে- চোখের অদ্ভুত মায়ার সেই দৃষ্টি আমার ভেতরকার শান্তিজল ছিটিয়ে দিল এক মুহূর্তে।

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান