গল্পকার: আমিনুর রহমান লরেন্স
নির্জন নিভৃতে অল্প পরিসরে আমার বাড়ি। বাড়ি বলতে দুটি ঘর একটিতে আবুল তাবুল জিনিস রাখা অন্যটিতে আমরা থাকি, আমি এবং আমার স্ত্রী। আমাদের দুই মেয়ে ওরা ঢাকায় থাকে। আমার স্ত্রী একটু অন্যরকম কারণ আমি কিছু ঝামেলা পছন্দ করিনা সে ঐ ঝামেলা গুলি বেশি করে করতে চায়। আমার মধ্যে বিরক্ত ভাব থাকা সত্বেও সে তার নিজের ইচ্ছা মত বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করতে চেষ্টা করে যদিও এর কোন সুফল সে কোন দিন পায়নি। তবুও চেষ্টা চালিয়ে বেশ কিছু খাদ্যের অপচয় ঘটায়। শুধু কি হাঁস-মুরগি, না আরও কিছু অতিথি পাখির আগমন ঘটে আমার বাড়ির উঠানে।
পর্যাপ্ত খাবার উঠানে পড়ে থাকার সুবাদে দিনভর নানা রকমের পাখিদের মিলন মেলা ঘটে বাড়ির উঠানে। শালিকের কিচির-মিচির, ঘঘুর ডাক, গবরা পাখির ফেসফেসানি দোয়েলের নাচ আরও অপরিচিত নাম না জানা পাখির টুং টাং শব্দে মুখরিত। ওদের ডাক শুনতে ও দেখতে মন্দ লাগেনা। ঘুম হতে উঠে এখন অনেকক্ষণ ওদের তাকিয়ে দেখি। সেদিন সকাল বেলা দুটি পাখি নতুন করে চোখ পড়ে যা এর আগে কোন দিন দেখিনি। লাল সুজে মিশ্রণ মাথা গায়ের রং শ্যামা কালো, লেজ আর পা টক টকে হলদে। মন চায় পাখি দুটি ধরে খাঁচায় আটকে রাখি কিন্তু ওরা মুক্ত, পাখি ধরা অত সহজ নয়। তবে মনে কল্পনা করি ওরা যেন, প্রতিদিন আমার বাড়ি আসে এবং খাবার খেয়ে যায়। আমি বেশি খাবার উঠানে ছিটিয়ে রাখি, শুধু তাই নয় খড়কুটা পুরানা মাটির পাতিল দিয়ে গাছের ডালে চিপায় কৃত্রিম বাসা বানিয়ে দেই যাতে ওরা আমার বাড়ি থাকে।
আমার বাসনা পূর্ণ হয়, ওরা আমার বাড়ি থাকতে শুরু করে তবে আমার দেওয়া বাসায় নয়। ঘরের চালে ওরা নিজেরাই বাসা বানিয়ে নেয়। সবসময় ওদের খেয়াল করি এবং একটুকু বুঝতে পারি ওরা বিবাহিত। ওরা এখন আমাকে তেমন ভয় পায়না। একদিন দূর থেকে বাসায় উঁকি দিয়ে দেখি বাসায় দুটি ডিম, মেয়ে পাখিটি ডিমে তা দেয়। বেশ ক’দিন পর ওদের ঘর আলো করে দুটি সুন্দর বাচ্চা পাখি আসে এবং ক’দিনের মধ্যেই বড় হয়ে বাসার আশে-পাশেই লাফালাফি শুরু করে। বাবা এবং মা পাখি দুটিকে খুব খশি খুশি লাগে আমিও খুশি হই ভালো লাগে আমার। আমি ওদের ইংরেজিতে নাম রাখি টিং টং।
ক’মাস কেটে যায়, টিং টং বড় হয় মুখে মুখে কথা কয় একে অন্যের মাথায় ঠোঁট দিয়ে আদর দেয় আমার মনে হয় ওরাও এখন যৌবন প্রাপ্ত, হয়ত ওদেরও বিয়ের বয়স হয়েছে। অন্য একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরের চালে ডালে ওদের বাসার আশে পাশে বেশ কিছু পাখির আগমন এবং হৈহুল্লোর লাফালাফি । কেন যেন মনে হয় ওদের বাড়িতে কি বড় ধরণের কোন উৎসব! নাকি বিয়ে! টিং টং টিউবওয়েলের পাড়ে জমে থাকা পানিতে ভিজে এসে বাসার উপর ডালে বসে। সব পাখিরা ওদের ঘিরে কিচির মিচির শুরু করে দেয় মনে হয় গীত গান করছে। আমি নিশ্চিৎ হলাম নিশ্চই টিং টং এর বিয়ে।
আমার বিয়ের কথা মনে পড়ল, ভাবলাম এমনি করেইত বিয়ে হয়। মনের আনন্দে বেশি করে খাদ্য ঘরের চালে ছিটিয়ে দেই। বিয়ে বাড়ির অতিতি পাখিরা সবাই চালে নেমে খুশিতে খাবার খেতে লাগল। বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে মনে মনে আমি ওদের বিয়ের জন্য শুভ কামনা করলাম। মন থেকে ওদের জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন আশির্বাদ বেড়িয়ে এল, ওদের জীবনে সুখ হোক শান্তি হোক। সুখ দুঃখের সাথী হয়ে বন্ধুত্ব বন্ধন দৃঢ় করে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ওদের সমাজে ওরা মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকুক। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর রাখতে ওরা আমাদের সহায়ক হোক। সেই সাথে আমাদের মানব সমাজটাও পাখি সমাজের মত কুলষ মুক্ত সুন্দর সমাজ হোক। মানুষের সুন্দর ভালোবাসা পাখি সমাজের প্রতি অটুট থাকুক চিরদিন।