টিপু সুলতান'র ৫টি কবিতা
কবি : টিপু সুলতান
কুয়াশার ছায়াগাছ
দীর্ঘদিন বুকের দিগন্তে পোষ মানিয়ে
জং ধরা বহু বৃত্তপথ
দালানের চিলেকোঠায় গা ঘেষে দাঁড়ানো
শজনেপাতার গ্রাম,
নির্জন আঁধারে জ্যোৎস্নার স্কুল পাঠ,
নিঃশব্দ্যের গহীনে রাত জাগা পথহীন ভ্রমণ-
হেঁটে চলা নীল ঘড়ি,
কুয়াশার বাতাসে বয়ে চলা জলময়ী নদী;
সকলে আরেকটু অপেক্ষার পাহাড় ভাঙ্গে
ভেঁপু বাজানো পাঁজর খুলে-
তারপর কেঁচিতে নেশারঝোঁক কাটতে-কাটতে
দুহাতে কুয়াশার ছায়াগাছ সরায়-
প্রতিদিনের মত চোখ এপাশ ওপাশ ঝুঁকে যায়
যতদূর নিস্তব্ধতা কুয়াশার নির্মম ঘোর ছায়া-
অথচ একেকজন নিজেকে লুকায়-
কাছে আসতে দেরী করে
আমাকে বাড়ায় হৃদয় যন্ত্রণার আলোড়ন!
অনন্তকাল
ভরা দেয়ালে নতুন পঞ্জিকার আলপথ-
পাতার ফাঁকে নীরব মৌনতা ওড়ে
শালিক ঠোঁটে আদিমের কোলাহল,
বউঠানে পৌঢ় নারীর পেঁয়াজ কাটা গন্ধের সন্ধে-
এভাবে বয়ে যায়,অনন্তকাল;
আগামীকালের সূর্য
চলো প্রতিদিন আছড়ে পড়ি
অন্ধকারের বেদী ছুঁয়ে-
কুয়াশার জালে জীর্ণদশা
ধূসরের বক্র মুখগুলো পালিয়ে যাক-
দণ্ডিত সিক গাঁথা গহীন প্রাচীরে-
আমাদের চোখগুলো বারংবার দ্বীপজ্যোতি আছড়াক
আদ্যপ্রান্ত পাখির পালকে উড়িবার দুরন্ত বিলাসী ডানা,
গাছেরা দেয়াল হয়ে দাঁড়াক একঝাঁক নতুন মুখে
বেরিয়ে আসুক নিঃশ্বাস,অমৃতযোগে তারুণ্য চিৎকার!
বীজধ্বনি
বাঁকা সেতুর মত পার করে চলেছে
জীর্ণ অন্ধকারে প্রবল শিল্পিত প্রেম,বীজধ্বনি-
পলি বিধৌত উপবন,শস্য মিনারে
উড়ছে সবুজ শাড়ি,বাহারি তন্ময়ে চৈতন্য নগর
কেবলি ঘরে ফেরা জয়গানে;
এতটুকু রং চর্যাপদের তল্লাটে লক্ষ গ্রাম-
শহর থেকে সমুদ্র-আকাশ চর,শীতের ডগায়
কুয়াশা বোনা মটরশুঁটি খেত,খেজুররস,নতুন গমগাছ।
এলোপাতাড়ি বর্ণনাময়
তরুণ উছ্বাসী সাঁতরায় অতল ঢেউয়ে
স্বপ্ন জিয়ানো দ্রাবিড় চোখে-মহাকাল
রাজটীকা নাগরীক দেশ,বসন্তের বিনম্র সকাল।
শতবর্ষজীবী
শতবর্ষে শুভ্রবাণীর পা এগিয়ে যায়...
সযত্নে হাঁটি জীবনানন্দের পেছন পেছনে
যতদূর শব্দ বয়ে যায়,যতদূর স্বপ্ন খেলে গহীনে।
আকাশের পায়াতলে ডানা ভাঙা ফড়িং
ধূসরে ওড়ে হেমন্তের ঠুনকো কুয়াশার ঝাঁক
উড়ে এসে খেলে যায় কার্তিকের ধান শালিক
দিগন্তের আধামরা পাতায় দৈনন্দিন মহাকাল-
নীরবতায় ছুটে যায় মাঠঘাট,অপরূপ প্রত্যয়
ওপাশ পথে গহীন অরণ্য,দিন দুপুর-
নির্জন রাত,ট্রামের ঝংকারা শহরের নির্ঘুম-
কাগজের পোস্টাল পাতায় চির ব্যাপ্তেয়-বিস্তর!
অঙ্কুর
আমার হাতে আর কোন কবিতা নেই
সকল শব্দ ছুটি নিয়েছে,আঁধারের আড়ালে পাখির মত;
মৃত্তিকাগর্ভ ফেঁপে ওঠা বদ্বীপান্তরিত বৃক্ষলতা
পাতাগুলোর শাখামূল কাঁধে চেপে দূর-দূরত্ব হাঁটে
আমাদের শুরুর আগে অনেক জয়ন্তিকা হেঁটে গেছে
অনেকগুলো কমলা ভোর তুলে-
চিড় ধরা ধূলোরর ক্ণা ভেঙে পশ্চিমের ঝুলন্ত স্রোতে
আর ফিরে আসেনি,এসেছে ঝরে পড়া অঙ্কুর!